নিজস্ব প্রতিবেদক :
কর্ণফুলী বঙ্গবন্ধু টানেলের দুইটি টিউবের একটি অক্টোবরে আরেকটি নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগাঁরগাও অংশ উদ্বোধন করা হবে এ ডিসেম্বরে। আর আগামী বছরের ডিসেম্বরের আগেই মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ শেষ হবে। কর্ণফুলী টানেলের দুইটি টিউব, এর মধ্যে একটি অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন আরেকটি উদ্বোধন করবেন নভেম্বরে। এ বছরেই আমাদের কর্ণফুলী টানেলের মতো মেগা প্রকল্প উদ্বোধন করা হবে। বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর কাজ শেষ করেছি। আমার হাতে এখন ৮৭টি ছোট বড় সেতু উদ্বোধনের জন্য অপেক্ষায় আছে। বিশ্বের বহু জায়গায় সীমান্ত সড়ক আছে, আমাদের সীমান্তে ৩০০ কিলোমিটার সড়কের কাজ সেনাবাহিনী শুরু করেছে। পাহাড়ের কাজ ঝুঁকিপূর্ণ। পাহাড়ে একটা বিশাল পরিবর্তন এসেছে, সেজন্য সেখানকার পণ্য দ্রুত শহরে চলে আসতে পারছে। আজ বুধবার বেলা ১১টায় সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত ‘বিএসআরএফ সংলাপ’- এ সেতুমন্ত্রী এ কথা জানান। সংগঠনের সভাপতি তপন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সংলাপের উপস্থাপনা করেন সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক। ওবায়দুল কাদের বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জট খুলেছে। পুরনো সাড়ে ১১ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স যেগুলো পেন্ডিং ছিলো সেগুলো দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে ভোগান্তিও অনেকটা দূর হবে। ড্রাইভিংয়ের বিষয়ে অনেক কিছু করার আছে। এই যে ঝাঁকে ঝাঁকে তিন চাকার গাড়ি রাস্তায় চলে বিশেষ করে মহাসড়কে, সেজন্য সড়ক দুর্ঘটনা কম হলেও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। ইজিবাইকে বাসের ধাক্কা লাগলে আটজন থাকলে সবাই মারা যাচ্ছে। মোটরসাইকেল মোটামুটি কন্ট্রোলে নিয়ে এসেছি। ঢাকা সিটিকে দুজন থাকলে মাথায় হেলমেট থাকছে। রোড সেফটি এ মুহূর্তে আমাদের অগ্রাধিকার। তিনি বলেন, অনেকে অনেকদিন ধরে রাজনীতি করেন, তাদের অনেকে এমপিও হতে পারেননি। আমি সেদিক থেকে ভাগ্যবান। একজন রাজনীতিকের ১৬ বছর মন্ত্রী থাকা ভাগ্যের ব্যাপার। আওয়ামী লীগের মতো দলের সাধারণ সম্পাদক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ। দ্বিতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক হয়েছি। সরকারের কাজও চ্যালেঞ্জিং, আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পালনও চ্যালেঞ্জিং। তারপরও সৌভাগ্যক্রমে সরকারি দায়িত্ব পালনে কতোগুলো মেগা প্রজেক্ট থাকে, সেগুলো দেখাশোনার দায়িত্ব আমার। দলের দায়িত্বে থাকার একটা বয়সের সীমারেখা থাকা উচিত কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মন্ত্রীর কোন বয়স নেই। মুহিত সাহেব অর্থমন্ত্রী ছিলেন ৮০ বছর পার হওয়া পর্যন্ত। রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে তিনি মন্ত্রী ছিলেন। রাজনীতির কোন সময়সীমা থাকা উচিত না, যতক্ষণ তিনি সক্ষম থাকবেন। সে যদি মনে করে আমি অবসরে যেতে চাই সে ছেড়ে দিতে পারে। তার অভিমত প্রকাশের পর দল যদি মনে করে তাকে অবসর দিতে পারে। তাকে সম্মানজনক উপদেষ্টা পদ দেওয়া যেতে পারে। শেষ বয়সে যদি রাজনীতি করতে না পারেন তাহলে তো মৃত্যুর আগেই মরে গেল। সাধারণ সম্পাদক বিষয়ে নেত্রীই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন, তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটিই কার্যকর হবে। তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগের সরকার, বর্তমান মন্ত্রিসভা কিছুটা দুর্বল বলে মনে করেন কি না- জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের মন্ত্রিসভায় যারা আছেন তারা দুর্বল নয়। ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে। কিছুটা দুর্বলতা থাকতে পারে। কিন্তু মন্ত্রিসভা দুর্বল নয়। কোন কাজ কিন্তু ঠেকে থাকছে না। মন্ত্রিসভায় রদবদল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। আপনারা গণমাধ্যমে লেখালেখি করছেন, সেটি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আছে। তিনি খোঁজখবর নিচ্ছেন। তিনিই সেটি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। মন্ত্রী বলেন, এরইমধ্যে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে, উদ্বোধনও হয়েছে। এটা খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল। অনেক বাধা, অনেক সমস্যা ছিল। নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের অনেকে হাল ছেড়ে দিয়েছিল। কারণ পদ্মার ¯্রােতের তীব্রতা অনেক বেশি। ঈদের রাতেও পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজে উপস্থিত ছিলাম। সেখানে বারবার বৈঠক করতে হয়েছে। পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা। তবে খুলনা, যশোর, বাগেরহাট, নড়াইল থেকে শুরু করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলা এখনো পদ্মা সেতুর সুবিধা থেকে বঞ্চিত। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা যা যা চেয়েছি ভারত সব দিয়েছে। শেখ হাসিনা তিস্তার কথা বলতে ভুলে যাননি। পশ্চিমবঙ্গ থেকে কিছুটা আপত্তি আছে। আশা করি, সেটিও হয়ে যাবে। বিএনপির তো না পাওয়ার হতাশা। আমাদের না পাওয়ার হতাশা নেই। আপনারা ভারতের সঙ্গে দেওয়াল তুলেছেন, আমরা সেই দেওয়াল ভেঙে দিয়েছি। কোন দেশের ছিটমহল এত শান্তিপূর্ণভাবে হয়নি। আপনারা তো ভুলেই যান আসল কথা বলতে। আমরা ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। বন্ধুত্ব থাকলে যে সমস্যা সেগুলো সমাধান হবে। নির্বাচনে ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইসির সঙ্গে সংলাপে আমরা ৩০০ আসনে ইভিএম চেয়েছি। গত নির্বাচনে চেয়েছি, এবারও আমরা বলেছি ৩০০ আসনে ইভিএম চাই। নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দিয়েছে ১৫০ আসনে আগামী নির্বাচনে ইভিএমে ভোট। এ সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কমিশন যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটিই ঠিক। আমাদের যে দাবি নির্বাচনে কারচুপি জালিয়াতি রোধের জন্য এটি ভালো। নাগরিকরা তো তাদের দাবি তুলতেই পারে, ইসি কি করবে সেটি তো তাদের সিদ্ধান্ত। নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজনীতিতে আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে, গণতান্ত্রিক রাজনীতি আমরা চাই। রাজনীতিতে আন্দোলন আছে, থাকবে। জনগণের সম্পৃক্ততা আমরা চাই। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন এক কথা, সহিংস আন্দোলন তো জনস্বার্থে প্রতিরোধ করতে হবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে। এখানে সাস্প্রদায়িকতার উপাদান আছে, সেটিও অতিক্রম করতে হবে। সেজন্য বিএনপিকে বলি, আমরা তাদের প্রতিপক্ষ মনে করি কিন্তু তারা আমাদের শত্রুভাবে। আমরা অনেক কিছু সহ্য করছি। রাস্তা অবরোধ করে মানুষের চলাচল বন্ধ করে সংঘাত বাধানো, পুলিশের উপর হামলা করে, কোথাও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন গায়ে পড়ে কারও সঙ্গে ঝগড়া করবেন না। কিন্তু আমরা যদি হামলায় আক্রান্ত হই তখন কি আমরা চুপচাপ বসে থাকব। কর্মীরা কি চুপচাপ বসে থাকতে রাজি হবে? বিএনপি তো আন্দোলন করে বেগম জিয়ার মুক্তি দিতে বাধ্য করতে পারেনি। কোথায় আপনাদের গণতন্ত্র? আপনার কী মনে আছে কবে আপনাদের কাউন্সিল হয়েছে? বিএনপি কর্মীরাও ভুলে গেছেন কবে তাদের সম্মেলন হয়েছে। বিএনপি কাউন্সিল কথাটাই ভুলে গেছে, তারা আবার গণতন্ত্রের কথা বলে। এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সব সময় প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবেন এমন কোনো কথা নেই। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন এসেছিলেন, তখন কি (তাদের) পররাষ্ট্রমন্ত্রী সঙ্গে ছিলেন? পররাষ্ট্রমন্ত্রীও তো মানুষ, একজন মানুষ অসুস্থও হতে পারেন। তার বাসা থেকে শুনেছি তিনি কিছুটা অসুস্থ। এটা হতেই পারে। কিছুদিন আগে তার হয়তো একটা স্লিপ হয়েছে, কথাবার্তা বলা, সেটার জন্য তার মন্ত্রিত্ব চলে যাবে কি না- এ এখতিয়ার তো আমার নেই। এ এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর, তিনি চাইলে বাদ দিতে পারেন। এ বিষয়ে অন্য কারও কিছু বলার নেই, বললে সেটা হবে অতি কথন। জিএম কাদের বিএনপিতে যোগ দিতে চায় সে বিষয়ে তিনি বলেন, জিএম কাদের সাহেব কোন জোটে যোগ দেবেন সেটি তার বিষয়। তিনি যদি কোন জোটে যেতে চান যাবেন। সেটা তো তার ব্যাপার। মেট্রোরেলের ভাড়ার বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কারো কারো ভিন্ন মত থাকতে পারে। বাস্তবে যখন তারা আসা-যাওয়া করবেন, ৪০ মিনিটে গন্তব্যে আসবেন তখন সহজভাবে নেবেন বলে আশা করছি। পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেখানে একটা সমস্যা হয়ে গেছে। পদ্মা সেতুই চলাচলের অনুপোযগী হয়েছে বলেই উল্লেখ করেছেন অনেকে। মধুমতি সেতু উদ্বোধন হলে পদ্মা সেতুর উপর চাপ বাড়বে। পদ্মা সেতুতে এ মুহূর্তে মোটরসাইকেল চালুর বিষয়ে ভাবছি না। পরবর্তীতে অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সেতুমন্ত্রী বলেন, এ বাস্তবতাটি সবার মেনে নেওয়া উচিত। এ ছাড়া কিছুদিন পর কালনা সেতুর উদ্বোধন হলে নতুন বাস্তবতা দেখা যাবে। তখন এ পথে আরও দ্রুতবেগে গাড়ি চলবে এবং এখানে একটি অংশ কালনার কাছে গিয়ে থেমে যায়, ওই অংশতে আরও দ্রুতবেগে আসা-যাওয়া করবে। তখন বাস্তবতাসহ সবকিছু মিলিয়ে পরে আমরা চিন্তা করবো।