নিজস্ব প্রতিবেদক :
অনিয়মিত হয়ে পড়ছে চট্টগ্রাম-ইউরোপ রুটে সরাসরি কনটেইনার জাহাজ সার্ভিস। মূলত বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে পণ্য রপ্তানির চাপ কমে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিগত ৮ মাসে ইউরোপে মাত্র সাড়ে ১৩ হাজার একক পণ্যভর্তি কনটেইনার গেছে। এমন অবস্থায় চট্টগ্রাম-লিভারপুল, চট্টগ্রাম-রটারড্যাম দুটি সার্ভিসের শিডিউল দুই মাস বন্ধ রাখা হয়েছে। তাছাড়া পণ্য বুকিং কমে আসায় চট্টগ্রাম-ইতালি, চট্টগ্রাম-বার্সেলোনা সার্ভিসের শিডিউলও এলোমেলো হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তারা নিয়মিত সার্ভিস চালু রাখা নিয়ে সংশয়ে পড়েছে। শিপিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি ইউরোপে পণ্য পরিবহন শুরুর উদ্যোগে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ীরা ব্যাপক আশান্বিত হয়েছিল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ওই সার্ভিস জুলাই পর্যন্ত বেশ ভালোভাবে চললেও আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে চাপ কমেছে। গত ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইউরোপে ৮ মাসে সাড়ে ১৩ হাজার একক রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনার গেছে। তিনটি বিদেশি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান নিজেদের উদ্যোগে সরাসরি চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপের বন্দরে ওই জাহাজ সার্ভিস চালু করেছে। তার মধ্যে একটি ইতালি, একটি সুইজারল্যান্ড এবং একটি ইংল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম-রটারড্যাম-লিভারপুল রুটে পণ্য পরিবহনের সার্ভিসটি গত দুই মাস অনিয়মিতভাবে চলছে। আর অক্টোবরে ওই সার্ভিসের কোনো জাহাজ না চললেও আশা করা হচ্ছে নভেম্বর থেকে আবারো সার্ভিস শুরু হবে। বর্তমানে পণ্য পরিবহন কমে আসায় বিশ্বে সবগুলো শিপিং লাইনের ভাড়া ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। এমন অবস্থায় সরাসরি কনটেইনার জাহাজ সার্ভিস কঠিন প্রতিযোগিতায় পড়েছে।
সূত্র আরো জানায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইতালির রাভেনা বন্দরে প্রথম সরাসরি কনটেইনার জাহাজ সার্ভিস চালু হয়। তারপর থেকে চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি ইতালি, চট্টগ্রাম-বার্সেলোনা, চট্টগ্রাম-নেদারল্যান্ডস, চট্টগ্রাম-ইংল্যান্ড রুটে পণ্য পরিবহন শুরু হয়। তার মধ্যে চট্টগ্রা-ইতালি সার্ভিস সবচেয়ে বেশি পণ্য পরিবহন করে। এখন পর্যন্ত সার্ভিসটির শিডিউল ধরে রাখলেও কার্গো বুকিং অনেক কমে যাওয়ায় তা কতোদিন ধরে রাখা যাবে তা নিয়ে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। ইতালি রুটে প্রতি দুই মাসে তিনটি ট্রিপ চলে। কিন্তু পণ্য বুকিং কমে যাওয়ায় হয়তো ট্রিপ কমিয়ে সার্ভিস চালু রাখতে হবে। এখন পণ্য পরিবহনের পিক সিজন হওয়া সত্ত্বেও বুকিং কমে গেছে। ইউরোপে পণ্য রপ্তানি কমে যাওয়া এবং বৈশ্বিক শিপিং ভাড়ায় যে ধস নেমেছে তাতে সরাসরি কনটেইনার জাহাজ সার্ভিস চালু রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
এদিকে প্রবেশ চ্যানেলের সীমাবদ্ধতা থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরে বড় জাহাজ ভিড়তে পারে না। ফলে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলোর ওপরই জাহাজ পরিচালনাকারীদের নির্ভর করতে হয়। মূলত সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কার কলম্বো, মালয়েশিয়ার তানজুম পালাপাস ও কেলাং এবং চীনের কয়েকটি বন্দরের মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি কনটেইনার জাহাজ চলাচল করে। ওসব বন্দর হয়ে রপ্তানি পণ্য ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে যায়। একইভাবে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার ওসব দেশের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরে আনা হয়।