নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশে কর্মরত বিপুলসংখ্যক অবৈধ মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বৈধ ও অবৈধ শতাধিক মানি চেঞ্জারের অনিয়মের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে। তার মধ্যে অবৈধ ৮৭টি প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অবৈধ ওসব প্রতিষ্ঠানের জবানবন্দি গ্রহণ, সম্পত্তির তথ্য সংগ্রহ এবং বক্তব্য প্রদানের জন্য নোটিশ দেয়া হচ্ছে। পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে সিআইডি অবৈধ কার্যক্রমের প্রমাণ সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে। ওই লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করছে সিআইডি। মূলত দেশে ডলার সংকটের পর থেকেই অর্থ পাচারের সবগুলো চ্যানেলে তদারকি বাড়ানো হয়েছে। সেজন্যই মানি চেঞ্জারগুলোকেও বিশেষ নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। বিএফআইইউ এবং সিআইডি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অনিয়ম অনুসন্ধানে মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে প্রধানত ৫ ধরনের অপরাধের তথ্য মিলেছে। সেগুলো হলো ডলারের মূল্য বাড়াতে কারসাজি, বিদেশে অর্থ পাচার, নগদ অর্থ লেনদেনের হিসাবে কারচুপি, লাইসেন্স ছাড়া অবৈধ প্রতিষ্ঠান পরিচালনা এবং অনুমোদন ছাড়া একাধিক শাখা পরিচালনা। বিএফআইইউ ও সিআইডির প্রথক অনুসন্ধানে অবৈধ কর্মকা-ে জড়িত শতাধিক মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে আসে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৮৭টি প্রতিষ্ঠান আইনের জালে আসছে। তবে ক্রমেই ওই তালিকা বড় হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে নিয়োজিত মানি চেঞ্জারগুলোর মধ্যে ২৩৫টি প্রতিষ্ঠানের বৈধ লাইসেন্স রয়েছে। কিন্তু বৈধ-অবৈধ, বেআইনি শাখা মিলে ১২শর মতো মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম চালাচ্ছে। ওই হিসাবে ৯৬৫টি অবৈধ মানি চেঞ্জার বা শাখা রয়েছে। তাছাড়া আদালতে মামলা দায়ের করে বিচার চলমান থাকা ১৩টি প্রতিষ্ঠানও কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সিআইডির হাতে তাদের তালিকা রয়েছে। অবৈধ ৮৭টি মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৪টির সম্পদের হিসাব চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। ১২টি প্রতিষ্ঠানের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। তার বাইরে আরো ১৮টি প্রতিষ্ঠানকে তাদের কার্যক্রমের বিষয়ে জানাতে নেটিশ পাঠানো হয়েছে। তার আগে বিএফআইইউ অর্থ পাচারে জড়িত সন্দেহে ২৮টি মানি চেঞ্জারের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে। ২০টি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম তদন্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিআইডিকে চিঠি দিয়েছে। আর লাইসেন্স ছাড়াই বিদেশি মুদ্রা লেনদেন করায় ১১টি এক্সচেঞ্জের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে। তাছাড়া বিএফআইইউর তদন্তে ১৩টি মানি চেঞ্জার্সের বিরুদ্ধে হুন্ডির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সূত্র আরো জানায়, অবৈধ মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় সবগুলোর অবস্থানই ঢাকায়। আর ঢাকার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় ৮০ ভাগই মতিঝিল, গুলশান, ধানমন্ডি, উত্তরা, মোহাম্মদপুর ও পল্টন এলাকায় অবস্থিত। তার বাইরে যশোরের ৩টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এদিকে এ বিষয়ে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) হুমায়ুন কবির জানান, অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইনের আওতায় আনতে প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে সিআইডি তাদের নোটিশ পাঠায়। তারপর তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। সেখানে তাদের কার্যক্রমের সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। তার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে সিআইডি প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদের হিসাব জানতে চায়। ওই প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন হলে সব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়। আর চূড়ান্তভাবে অপরাধের প্রমাণ হাতে পেলে সিআইডি মামলা করে। অবৈধ মানি চেঞ্জারগুলোর ক্ষেত্রে ওই প্রক্রিয়াই অনুসরণ করা হচ্ছে।