নিজস্ব প্রতিবেদক :
জন্ম ও মৃত্যুর নিবন্ধন করতে এসে মানুষ যে দালালের খপ্পরে পড়ছে, সেজন্য স্থানীয় সরকার অব্যবস্থাপনাকে দায় দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঢাকার দুই মেয়র। তাদের অভিযোগ, নিবন্ধন সার্ভারের সক্ষমতা কম থাকা, জনবলেরও সঙ্কট আছে, ফলে মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবসের আলোচনা সভায় ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে জরুরিভাবে এই সেবা সহজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “জনগণ যখন সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক অফিসে আসেন, তখন জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সার্ভারে এমন চাপ থাকে যে কাজ করা যায় না, বন্ধ থাকে সার্ভার। “তাই কাজ করতে হয় রাতে, আর তখনই নিশাচর দালালের কাছে জনগণ বাধ্য হয়ে এ কাজ করতে দেন।” স্কুলে ভর্তির আগে ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি মাসে জন্ম নিবন্ধনের চাপ বাড়ে। এ সময় সার্ভারের জন্য হটলাইনে যোগাযোগ করলে কেউ ফোন ধরেন না বলে অভিযোগ করেন মেয়র আতিক। জন্ম নিবন্ধনের ৯০ দিন পর ভুল সংশোধন করতে এখন যেতে হচ্ছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। সে কথা তুল ধরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রশ্ন করেন, “যেখানে মেয়র আছে, সেখানে কেন ডিসি অফিসে যেতে হবে? সরকারি নীতিতেই তো আছে সহজীকরণের কথা। “আবার ডিসি অফিসে যে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রয়েছেন, তিনি যদি বদলি হয়ে আসেন, তার কোনো কোড নম্বর যদি না থাকে, তাহলে আরও এক সপ্তাহ বসে থাকতে হবে। এসব ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে মানুষকে।” ১০ আঞ্চলিক অঞ্চলের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরেরও যেন নিবন্ধন সনদ দেওয়ার ক্ষমতা থাকে, সে বিষয়ে জোর দেন মেয়র আতিক। “কেউ যদি ৯০ দিন পর নিবন্ধনের ভুল সংশোধন করতে চান, তখন দেখা যায়, তার ওটিপি নম্বর দালালের খপ্পরে চলে যায়। আবার নতুন করে নিবন্ধন করতে হয়। আমি নিজে প্র্যাক্টিক্যালি দেখেছি, এই সমস্যাগুলো হচ্ছে।”
জন্মনিবন্ধনে প্রাপ্ত সনদকে ‘জন ভোগান্তি’ এবং কিউআর কোডকে ‘স্বস্তি’ বলে বর্ণনা করে মেয়র বলেন, “সনদে তিনজনের সাইন লাগে। কিন্তু কিউআর কোড স্ক্যান করলেই সব তথ্য পাওয়া যায়। আমি বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখেছি, মানুষের কী যে ভোগান্তি!” ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, “আঞ্চলিক অফিসগুলোতে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা না থাকায় জনগণ দালালের খপ্পরে পড়ছে। কারণ ওঁরা তো জানেন না এই কাজটা কে করবেন? “আমরা সম্প্রতি পাঁচটি আঞ্চলিক অফিসে লোকবল নিয়োগ দিয়েছি, যদিও সেটা পর্যাপ্ত নয়। তারপরও এই কাজের জন্য তো একজন দায়বদ্ধ থাকবেন।” দালাল চক্র বা দুর্নীতি বন্ধে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক অফিসে ক্রমিক নম্বরের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তাপস। “যে আগে আসবে, তার জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন আগে নিষ্পত্তি হবে। এ ক্ষেত্রে দালালদের দুর্নীতি বন্ধ হবে।”
নিবন্ধন সার্ভারের সক্ষমতা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে মেয়র তাপস বলেন, “দ্বিগুণ করলেও হবে না। এটা চার-পাঁচগুণ করলে আগামী পাঁচ-ছয় বছরে অনায়াসে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন করতে পারব।” আগামী নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে স্কুলে ভর্তির মৌসুমের আগেই এ সমস্যা সমাধানের দাবি জানান তিনি। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনার কথা অনুষ্ঠানে স্বীকার করে নেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, “এই কাজের জন্য অনেক জায়গায় লোক নাই। লোক না থাকলে কাজ করবে কীভাবে? “সার্ভার সমস্যার কথা শুনলাম। কিন্তু এখানে আমরা কেন ৪-৫ কোটি টাকা দিতে পারছি না? আমি নিজেও এর জন্য দায়বদ্ধ। কিন্তু আমি তো একা এ কাজ করতে পারব না। আমরা সার্ভারের সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেব।” বাজেট সংকটের কথা তুলে মন্ত্রী বলেন, “আদমশুমারি করে আমরা ৭০০ কোটি টাকা খরচ করি, কিন্তু এখানে ৭ কোটি টাকা খরচ করবেন না, এটা তো ঠিক না।”