• বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ০১:২৭ অপরাহ্ন
সর্বশেষ
শান্তিরক্ষার দায়িত্বে সরকার সচেতন থাকবে: আইনমন্ত্রী পদধারী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অবশ্যই দলীয় শৃঙ্খলা মাথায় রাখতে হবে: তথ্যমন্ত্রী হরতাল-অবরোধের প্রভাব পণ্য পরিবহনে, বাড়তি ব্যয়ের বোঝা ভোক্তাদের কাঁধে বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে উৎসাহিত করা হবে: এলজিআরডি মন্ত্রী বিশ্বকাপ ব্যর্থতা, অনুসন্ধানে বিসিবির কমিটি পোর্তোকে হারিয়ে নক আউট পর্বে বার্সেলোনা তাইজুল ঝলকে দ্বিতীয় দিন শেষেও এগিয়ে বাংলাদেশ জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর বিচারকের সই জাল: দুই পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ১৪ ডিসেম্বর ‘অনুমতি ছাড়া তথ্য ব্যবহারে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা’

অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ে দুদকের কোনো বিধি নেই

Reporter Name / ৬৫ Time View
Update : শনিবার, ২৫ জুন, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুর্নীতির অভিযোগ প্রাপ্তির প্রধান উৎস। কিন্তু সংস্থাটির ওই অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ে কোনো বিধি নেই। বরং সুনির্দিষ্ট মানদ- না থাকায় বাছাই কমিটি অভিযোগ নিচ্ছে খেয়াল-খুশিমতো। কিভাবে অভিযোগ দিলে তা তফসিলভুক্ত হবে অথবা কোন পদ্ধতি অনুসরণ করলে অভিযোগ দায়ের হবে দীর্ঘ দেড় যুগেও তা চূড়ান্ত হয়নি। ফলে কোনো প্রতিকার না পেয়ে ভুক্তভোগীরা হতাশ। বৃহৎ দুর্নীতির বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না থাকলেও জনবল অপচয়, অর্থ ব্যয় ও কালক্ষেপণ চলছেই। দুর্নীতি দমন কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সাধারণ মানুষ প্রতিকার চেয়ে হাজারও অভিযোগ দুদকে পাঠায়। কিন্তু ওসব অভিযোগের বেশিরভাগই সংস্থাটির বাছাই কমিটি আমলে নেয় না। ফলে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ সরকারি দফতরসহ নানা পর্যায়ে দুর্নীতি, হয়রানির শিকার হলেও ওই অনুপাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদকের কার্যক্রম নেই। যদিও দুদকের নিজস্ব গোয়েন্দা-ব্যবস্থা না থাকায় গণমাধ্যম এবং ভুক্তভোগীদের দাখিলকৃত অভিযোগের ওপরই দুর্নীতিবিষয়ক তথ্যের জন্য নির্ভর করতে হচ্ছে। অথচ প্রাপ্ত অভিযোগ যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই না করেই অধিকাংশ ফেলে দেয়া হচ্ছে। যদিও দুদকের বাছাই কমিটি সংশ্লিষ্টদের দাবি, অভিযোগ তফসিলের মধ্যে না পড়লে, প্রাসঙ্গিক না হলে, ত্রুটিপূর্ণ হলে কিংবা একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়ে হলে বাছাইয়ে ওই অভিযোগ বাতিল হয়ে যায়। অনেকেই একেবারে ব্যক্তিগত বিষয়ে অভিযোগ করে। কিন্তু দুদক তফসিলবহির্ভুত সব বিষয় নিয়ে কাজ করতে পারে না। আবার তফসিলভুক্ত হলেও গুরুত্ব এবং অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু নির্ধারণ করতে হয়। দেড় যুগেও অভিযোগ বাছাইয়ের কোনো বিধি না হলেও দুদকে একটি মানদ- অনুসরণ করা হচ্ছে। আর তা কমিশনেরই সিদ্ধান্ত।
সূত্র জানায়, দুদকের অভিযোগ যাচাই-বাছাই কমিটি সংশ্লিষ্টরা নিজেরই ১০ বৈশিষ্ট্যের একটি মানদ- তৈরি করে নিয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ বাছাইয়ের সময় ওই বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা হয়। আর তা হচ্ছে- অভিযোগটি দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ কিনা, কাকে সম্বোধন করে অভিযোগটি পাঠানো হয়েছে, অভিযোগকারীর পরিচয়, নাম-ঠিকানা, টেলিফোন নম্বর যথার্থ কিনা, প্রাপ্ত অভিযোগটি সুনির্দিষ্ট ও বস্তুনিষ্ঠ কিনা, পক্ষ-বিপক্ষ কর্তৃক (শত্রুতাবশত) অযথা হয়রানির উদ্দেশেই অভিযোগ দেয়া হয়েছে কিনা, অভিযুক্ত ব্যক্তির দফতর, তার দাফতরিক পদমর্যাদা, বর্ণিত অপরাধ করার ক্ষমতা ও সুযোগ আছে কিনা ইত্যাদি। তাছাড়া অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময়কাল, অভিযোগের দরখাস্তে বর্ণিত অপরাধের ব্যক্তি ও অর্থ-সঙ্গতির পরিমাণ এবং অপরাধ সংঘটিত হওয়ার স্থান ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় কর্তৃক অভিযোগের অনুসন্ধান/তদন্ত করা হতে পারে কিনা এবং প্রাপ্ত অভিযোগটি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ ও দুর্নীতি দমন বিধিমালা-২০০৭ মোতাবেক কার্য সম্পাদন শেষে কোর্টে অপরাধ প্রমাণ করা যাবে কিনা, প্রমাণে কি পরিমাণ অর্থ, শ্রম, মেধা, সময় এবং উপকরণ প্রয়োজন হবে তাও বিবেচনা করা হয়। সূত্র আরো জানায়, অনুসন্ধানযোগ্য বৃহৎ দুর্নীতির অভিযোগগুলো বাছাই পর্যায়েই নথিভুক্ত হয়ে যায়। কিন্তু অনেক সময় কমিশনের টেবিলকে পাশ কাটিয়ে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে আর্থিক সুবিধা আদায়ের কথাও জানা যায়। ফলে দুর্নীতির অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি কমিশনে ওঠার আগেই নাই হয়ে যায়। বাছাই প্রক্রিয়াকে স্পর্শকাতর গণ্য করে বাছাই কক্ষকে নিñিদ্র নিরাপদ করা হয়েছে। কিন্তু বাছাই প্রক্রিয়াকে আরো অস্বচ্ছ করে তোলা হয়েছে। আর বাছাই প্রক্রিয়াকে প্রশাসন ক্যাডারের কর্তৃত্বে রাখা হযেছে। ফলে সরকারের বিভিন্ন দফতরে সংঘটিত প্রশাসনের দুর্নীতির অভিযোগগুলো অনুসন্ধানে আসে না বললেই চলে। অথচ আগে দুদকে কতোগুলো অভিযোগ জমা পড়লো আর কতগুলো নিষ্পত্তি করা হলো ওই সংক্রান্ত তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হতো। এখন তা হয় না। তাছাড়া যেসব অভিযোগ অনুসন্ধান যোগ্য নয় সেগুলোর কোনো তালিকাও প্রকাশ করা হয় না।
এদিকে দুদক গত ৫ বছরে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ১০ হাজার ৭৬৬টি চিঠি দিয়েছে। বিপরীতে ওসব অভিযোগের বিষয়ে আদৌ কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা দুদক সংশ্লিষ্টদেরই তা জানা নেই।
অন্যদিকে দুদকের গ্যারেজ ভবনে স্থাপন করা হয়েছে বাছাই কমিটির পৃথক কার্যালয়। অত্যন্ত সুরক্ষিত ওই কক্ষে দুদক কর্মকর্তাদেরও প্রবেশ বারণ। সেখানে আসলে কি হয় তা কেউ বলতে পারে না। যদিও অভিযোগ বাছাইয়ের নামে অসদুপায় অবলম্বনের মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে। দুদকের তদন্তের প্রথম ভিত্তি হচ্ছে অভিযোগ। মামলা রুজু, তদন্ত, ডকুমেন্ট সংগ্রহ, চার্জশিট দাখিল, বিচার ও রায় এবং রায়ের বিরুদ্ধে আপিলসহ অনেক কিছুই অভিযোগের ওপর নির্ভর করে। অথচ অনুসন্ধান, তদন্ত এবং দুর্নীতি মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় অভিজ্ঞতাহীন ব্যক্তিরাই দুর্নীতি অভিযোগের বাছাই করছে। ফলে একদিকে যেমন অভিযোগ সংশ্লিষ্ট অনেক নিরীহ ব্যক্তির হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ রয়েছে, তেমনি অনেক বড় দুর্নীতিবাজকে অনুসন্ধান পর্যায়েই দায়মুক্তি পেয়ে যাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, অভিযোগ বাছাইয়ে একজন ডিজির নেতৃত্বে ৫/৭ জনের একটি কমিটি রয়েছে। কিন্তু এখানে অভিযোগে যেমন ত্রুটি থাকছে, তেমনটি বাছাই পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। বেশির ভাগ অভিযোগকারীই দুর্নীতির বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে না। আবার অনেক অভিযোগ রয়েছে দুদকের তফসিল বহির্ভুত। ফলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলোকে গুরুত্ব দেয়া হয়। আর অভিযোগের বস্তুনিষ্ঠতা না থাকার কারণে অভিযোগ মাত্রই অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা সম্ভব হয় না।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category