নিজস্ব প্রতিবেদক :
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে অর্থ চেয়ে চিঠি দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়নি বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আজ বুধবার দুপুরে ভার্চুয়ালি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। গত সপ্তাহে বলেছিলেন আইএমএফয়ের ঋণ আপাতত প্রয়োজন নেই, দুদিন পরই গণমাধ্যমে এসেছে ঋণ চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা বিশ্বব্যাংকে যাব, জাইকায় যাব, সব জায়গায় সব সময় চেষ্টা করি আমাদের যে ঋণ প্রয়োজন হয় তা ভালো সুদে ও ভালো শর্তে নিতে। তিনি বলেন, আইএমএফ টিম এখানে এসেছিলো, তারা প্রতি বছরই আসে। তারা বাৎসরিক কনসালটেশন করে, সেজন্য তারা এসেছে। সে সময় যদি বলি আমাদের টাকা দরকার, তখন তারা টাকা দিলেও সুদহার বাড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। বায়ার হিসেবে আমরাও খুব ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করি। আমরা ভাব দেখাই আমাদের দরকার নাই, এটাই হলো মূল কথা। এটি দেশের ভালোর জন্য করা হয়েছে। এতে কোনো রকম টাকা-পয়সা নেওয়া হয়নি, দেন দরবার হয়নি। সুতরাং চিন্তার কোনো কারণ নেই। আইএমএফকে দেওয়া চিঠিতে লোনের পরিমাণ ৪.৫ বিলিয়ন ডলার উল্লেখ করা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা কোনো পরিমাণ উল্লেখ করিনি। আপনি কোথায় পেয়েছেন আমরা কি পরিমাণ লোন চেয়েছি। আমি তো চাইনি, তাহলে কে চাইতে পারে? এটা আমার মনে হয় ভুল বোঝাবুঝি। আমরা যা করবো, আমরা যদি লোন নেই সেক্ষেত্রে আমার দায়িত্ব আপনাদের ব্যাখ্যা দেওয়া। কারণ আমি সবসময় ব্যাখ্যা দিতে রাজি। সুদের হার উঠানোর বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের সুদের হার ৬ ও ৯ হওয়ার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি আজকে তার অবস্থানে আছে। আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো। আপনারা ভালোটা দেখে যদি না বলেন, তাহলে আমাদের সমস্যা। যদি ৬ ও ৯ শতাংশ হারে সুদ না হতো, তাহলে কোভিড পরিস্থিতিতে ছোট, বড়, মাঝারি কোনো প্রতিষ্ঠানকে খুঁজেও পেতাম না। এটা সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত। দরকার লাগলে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক তাদের মতো বলবে। তাদের যে চাহিদা সেটা পূরণের চেষ্টা করবে। তারা বাংলাদেশের প্রশংসা করবে, কারণ আমরা যা করেছি। মন্ত্রী বলেন, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক বরাবর বলে যাচ্ছে বাংলাদেশ ভালোভাবে এগুচ্ছে। আমরা ৬ ও ৯ শতাংশ করার কারণে ব্যাংকিং খাত স্থিতিশীল অবস্থা আছে। সরকারি ব্যাংকগুলোকে দায়িত্ব দিয়েছি তাদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য। পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টরের ব্যাংককগুলো যেটা লালে ছিলো সেটা সবুজ হয়ছে। আইএমএফের লোন প্রসঙ্গে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি যদি বলি আমার দরকার, আমরা তো ডলার প্রিন্ট করি না। ডলার আমাদের অর্জন করতে হয়। আমরা ডলার অর্জন করি বিদেশের যে শ্রমিকরা আমাদের ডলার পাঠিয়ে সাহায্য করছেন। যারা দেশ থেকে গিয়ে বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন তারা আমাদের সেই ডলার বা বিভিন্ন কারেন্সি দিয়ে সাহায্য করে, তারাই আমাদের চালিয়ে নিচ্ছে। অল্প দিনের মধ্যে খারাপ কোনো অবস্থা হয়নি। তিনি বলেন, আমরা যখন অর্থনীতি ম্যানেজ করি আমাদের কাছে বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিত দেখতে হয়। আমাদের ঋণ দরকার। আর কিছুদিন, এরপর ঋণ থাকবে না। আমরা তো বলেছিলাম ঋণ আমরা দেব। আমি আবারও বলি আমরা ঋণ দিতে পারব। আমি আমার চাহিদা সবাই জানতে পারলে আমার ওপর খরচটা বেশি দেবে, সেজন্যই প্রয়োজন নেই বলেছি। এভাবেই আমাদের ম্যানেজ করা হয়। ঋণের বিষয়টি যেন কোনোভাবেই আমাদের বিপক্ষে না যায়। আমরা অর্থ চাই, আমরা বলেছি। কিন্তু কত লাগবে সেটি বলিনি। তিনি আরও বলেন, তারা কি শর্তে ঋণ দিতে চাচ্ছে, তাদের যদি পজিটিভলি দেখি তাহলে আমরা হয়ত বিবেচনা করতে পারি। আমরা বিবেচনা করবই এ ধরনের কোনো প্রস্তাবনা আমরা দেইনি। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের মাধ্যমেই ডলারের মূল চাহিদা পূরণ হবে বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী। ডলারের দাম নিয়ে নানান উদ্যোগ নিলেও কাজ হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, অপেক্ষা করতে হবে, কাজ হবে। এগুলো কারা করছে, সেখানে কী উদ্যেশ্য আছে- জানি না। এখন কী অব্যবস্থাপনা ছিল সেগুলো আমরা দেখছি। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি এগুলো যাতে আর না হয় সেগুলো দেখছি। মার্কেটে ডিমান্ডের ওপর ভিত্তি করে সাপ্লাই দিতে হবে, এটা কেউ ঠেকাতে পারবে না। এগুলো যদি আর্টিফিসিয়াল পর্যায়ে নিয়ে যায় আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো। এগুলো নিয়ন্ত্রণে সরকারের বিভিন্ন মেশিনারিজ আছে সেগুলো কার্যকর হবে। আর সেগুলো কার্যকর হলেই কমে আসবে। তিনি বলেন, আমরা দেখি যখন আমদানি করা প্রয়োজন, তখন (কখনো কখনো) ডলারের দাম বাড়িয়ে আমদানির ব্যবস্থা করা হয়। যখন বাধা দেওয়া হয় তখন এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে নিয়ে তথ্য গোপন করে এলসি খোলার ব্যবস্থা করা হয়, এগুলো ঠিক নয়। এগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে করে এগুলো করতে না পারে। আ হ ম মুস্তফা কামাল আরও বলেন, আমাদের যে খরচ সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের ফরেন এক্সচেঞ্জ প্রয়োজন, আমাদের দেশে কিছু পণ্য আমদানি করতে হয়। এগুলোর জন্য যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন তা আমাদের কাছে আছে। কী পরিমাণ অর্থ লাগবে, আমরা সেগুলো কোথায় পাবো- সেটি হলো প্রশ্ন। আমাদের রপ্তানি বেড়েছে, রপ্তানি পণ্যের বিপরীতে কিছু আমদানি পণ্য থাকে। কিন্তু নেট রপ্তানিতে সেটা আমাদের পক্ষে যাচ্ছে। তিনি বলেন, রেমিট্যান্স আমাদের বড় খাত। আমরা বিশ্বাস করি এ বছর আমাদের রেমিট্যান্স অনেক বাড়বে। এরইমধ্যে যেসব শ্রমিক বিদেশে গেছেন, তাদের সংখ্যাও বেশি। তারা করোনার পরেই গিয়েছেন। তারা আস্তে আস্তে সেখানে সেটেল হয়ে রেমিট্যান্স পাঠাবেন। আমরা বিশ্বাস করি রেমিট্যান্স ও রপ্তানির মাধ্যমেই আমাদের মূল চাহিদা পূরণ হবে।