নিজস্ব প্রতিবেদক :
স্বাধীনতার ৫০ বছরের বেশি সময়েও মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার এখনো বাস্তবায়ন করতে পারিনি। যে যেই যুক্তি দিক, সর্বশেষ কথা সেটা হয়নি। স্বাধীনতার জন্য ৩০ লাখ লোক শহীদ হয়েছেন। তাদের রক্তদান তখনই সফল হবে যখন আমরা সবার মৌলিক অধিকার সঠিকভাবে পূরণ করতে পারবো। আজ মঙ্গলবার পেশাদার সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, তবে আমি বিশ্বাস রাখি, মানুষের অধিকার একদিন নিশ্চিত হবেই। এ জাতীর বোধোদয় হবে না, সেটা নয়। আমাদের যে মৌলিক রাষ্ট্রীয় নীতি গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্রের মতো বিষয়গুলো ব্যস্তবায়নের মাধ্যমে সেটা হবে। তিনি বলেন, দেশের মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে পৃথিরীর কোথাও কোনো বিতর্ক থাকে না। প্রতিটি সরকার সেটা ব্যস্তবায়ন করে। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন দল-মতের ভিন্ন পন্থা থাকতে পারে। কিন্তু দেশ আমাদের, সেটার সমৃদ্ধি সবার কাম্য। তবে আমাদের মধ্যে নানা বিরোধ রয়েছে। মোজাম্মেল হক বলেন, দেশে একটি বিষয় সরলীকরণ হয়ে গেছে যে বিরোধীদের কাজে সর্বক্ষেত্রে মতবিরোধ থাকবে। সেটা করলে যেকোনো দেশ, জাঁতি বা সমাজ স্থবির হয়ে যাবে। সমালোচনা থাকবে, তবে সেটা প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে নয়। অন্যের ভালোটাকে ভালো বলতে হবে। শুধু দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি বা ব্যক্তিগত ক্ষোভের কারণে বিরোধিতা বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, রাজনীতিতে ভ্রাতৃত্ব ও সহমর্মিতা নেই। বিরোধ আদর্শগত থাকতে পারে, কিন্তু আমরা বিপরীতমুখী মেরুতে থাকতে চাই। যাদের দেশের কর্ণধার মনে করি, তাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের খুব অভাব। মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা চাইলে একই সংবাদ নানাভাবে পরিবেশন করতে পারি। সাংবাদিকতায় বিরোধীতার জন্যে বিরোধীতা নয়, বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনা করতে হবে। দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করি, সেটা না করে সমালোচনা করতে হবে কল্যাণের জন্য। হেয় করার জন্যে নয়, ছোট করার জন্যে নয়। বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনা করলে ত্রুটি বিচ্যুতি শুধরে নিতে পারবে সবাই। সেটার ফলে দেশ এগিয়ে যাবে। মোজাম্মেল হক বলেন, সমাজ পরিবর্তনের অনেক প্রক্রিয়া রয়েছে, তার মধ্যে গণতন্ত্র সর্বোত্তম। গণতন্ত্রের অনেক সংকট থাকলেও গণতন্ত্রই সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। একটি পত্রিকার সংবাদের সূত্র ধরে মন্ত্রী বলেন, একটি ব্রিজ হয়েছে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কিন্তু সংযোগ সড়ক নেই। এটার তো ইউটিলিটি নেই, দায়সারা কাজ। প্রতিষ্ঠান যদি দায়িত্বশীল হয়, তাহলে চোখ খুলে যাবে। দেশ এগিয়ে যাবে। ডিআরইউ সদস্যদের পরমত সহিষ্ণুতার প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, আমরা হতাশ হবো না, এখনে সবাই একসঙ্গে বসছেন, এটা ভালো দিক। ভোট দেওয়ার সময় তখন যাকে ইচ্ছে ভোট দেন, এটা ভালো। মুক্তিযুদ্ধে নিজের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদেশের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যেহেতু আমার সম্পৃক্ততা ছিল সেই জায়গা থেকে বলছি, পতাকা বা ভূখ-ের জন্যেই শুধু বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেননি। মৌলিক অধিকার বিশেষ করে ভাত, কাপড়, চিকিৎসা ও বাসস্থানের অধিকার প্রতিষ্ঠা করাই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য। মন্ত্রী বলেন, যে কারণে দেশ স্বাধীন হয়েছে সেটা নিয়ে কোনো দেশে বিতর্ক হয় না। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত যেন বৃথা না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে আমাদের। ডিআরইউ সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংগঠনের সাবেক সভাপতি মুরসালিন নোমানী, রফিকুল ইসলাম আজাদ, সাইফুল ইসলাম, ইলিয়াস হোসেনসহ বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিব, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু আহম্মেদ এবং অন্যান্য কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।