• রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:১০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ
দুদক কর্মকর্তাদের নৈতিকতার সাথে দায়িত্ব পালনের আহ্বান রাষ্ট্রপতির বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছে বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামছে ভোক্তা-অধিকার রাজনীতি যার যার, অর্থনীতি সবার: এফবিসিসিআই সভাপতি বান্দরবানে হুমকির মুখে সরকারের হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ বান্দরবান জেলা সদর সহ ৬ টি উপজেেলায় শিশুদেরকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়া হবে বান্দরবানে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা মাদকদ্রব্য ধ্বংস বিচারপতির গাড়িতে তেল কম দেওয়ায় ফিলিং স্টেশনকে জরিমানা বিচারক সোহেল রানার সাজার বিরুদ্ধে আপিলের রায় ১২ ডিসেম্বর শেয়ারবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ ক্রমাগত কমছে

আন্তর্জাতিক ও দেশের বাজারের মধ্যে পণ্যের দামে বিস্তর ফারাক

Reporter Name / ৪৭ Time View
Update : রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
আন্তর্জাতিক ও দেশের বাজারের মধ্যে পণ্যের দামে বিস্তর ফারাক। বিগত এক বছরে বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশেও প্রায় সব পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। কিন্তু বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে ধীরে ধীরে বেশিরভাগ পণ্যের দাম কমলেও দেশের বাজারে পণ্যমূল্য ঊর্ধ্বমুখী। ফলে পণ্যমূল্যে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। বিশ্ববাজারে কিছু পণ্যের দাম ৬ থেকে ১৯ শতাংশ বাড়লেও দেশে বেড়েছে ১০ থেকে ৬৭ শতাংশ। সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে ওই চিত্র উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদনে বিভিন্ন পণ্যের বর্তমান চাহিদা, উৎপাদন ও আমদানির বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। সম্প্রতি সরকারের উচ্চ মহলে প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়েছে। তাতে নিত্যপণ্যের মধ্যে চাল, আটা, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার সার্বিক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। নির্মাণসামগ্রীর মধ্যে রড ও সিমেন্টের তুলনামূলক দামের চিত্রও দেখানো হয়েছে। তাছাড়া জ্বালানি তেলের বিশ্ববাজার ও দেশের দামের ব্যবধানও তুলে ধরা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ব্যবসা খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত এক বছরে বিশ্ববাজারে সরু চালের দাম বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ বাড়লেও দেশে বেড়েছে ১৩ শতাংশ। মাঝারি চালের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে ৭ শতাংশ বাড়লেও দেশে বেড়েছে ১০ শতাংশ। আর সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মোটা চালের দাম। বিশ্ববাজারে ওই মানের চালে দাম বেড়েছে ৭ শতাংশের কিছু বেশি বাড়লেও বাংলাদেশে বেড়েছে ১৯ শতাংশ। আর বিগত এক বছরে বিশ্ববাজারে চালের দাম গড়ে ৭ শতাংশ কমলেও দেশে বেড়েছে দ্বিগুণ, অর্থাৎ ১৪ শতাংশ। একইভাবে আটার দামেও বড় ঊর্ধ্বমুখিতা দেখা গেছে। এক বছরে আটার দাম বিশ্ববাজারে বেড়েছে ৮ শতাংশ বাড়লেও দেশে বেড়েছে তার ৮ গুণের বেশি, অর্থাৎ ৬৭ শতাংশ।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে মসুর ডাল, পেঁয়াজ ও চিনির দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমলেও দেশে উল্টো অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বিশ্ববাজারে ডালের দাম গড়ে ১৪ শতাংশ কমলেও দেশে বড় দানার মসুর ডালের দাম ৩৯ শতাংশ এবং মাঝারি ও ছোট দানার ডালের দাম প্রায় ২৯ শতাংশ বেড়েছে। গত এক বছরে দেশে পেঁয়াজের ৯ শতাংশ দাম বেড়েছে অথচ বিশ্ববাজারে পণ্যটির দাম কমেছে প্রায় ২৮ শতাংশ। অর্থাৎ দেশে গড়ে পেঁয়াজের দাম ৩২ শতাংশ বেড়েছে। ওই সময় দেশে চিনির দামও প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়েছে। অথচ বিশ্ববাজারে পণ্যটির প্রায় ১১ শতাংশ দাম কমেছে। তাছাড়া ৫ বছরে খোলা তেলের লিটারে ৭৫ টাকা ৫০ পয়সা এবং বোতলজাত তেলে ৮৩ টাকা ২৫ পয়সা দাম বেড়েছে। দেশে ২০ লাখ টনের ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। তার মধ্যে ২ লাখ টনের কিছু বেশি স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় আর ১৮ লাখ টন আমদানি হয়। তার মধ্যে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের আমদানি ৫ লাখ টন। তাছাড়া ২৪ লাখ টন সয়াবিন বীজ আমদানি হয়, যা থেকে ৪ লাখ টন অপরিশোধিত তেল উৎপাদন হয়। আর ১১ লাখ টন অপরিশোধিত পাম অয়েল আমদানি হয়। আমদানির দিক থেকে পাম অয়েল বেশি হলেও ২১ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের ১৫টিই নিজেদের প্রস্তুত করা খাদ্য প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করে। বাকি ৬টি প্রতিষ্ঠান আমদানি করা তেল বাজারে সরবরাহ করে। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত ও নাইজেরিয়া থেকে পাম অয়েল এবং প্যারাগুয়ে, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল ও তুরস্ক থেকে সয়াবিন তেল আমদানি করা হয়। সঙ্কটকালে আমেরিকা, কানাডা, বলিভিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকেও তেল আমদানির সুযোগ রয়েছে। সর্বশেষ গত ২৩ আগস্ট ভোজ্যতেলের ব্যবসায়ীরা পণ্যটির দাম বাড়ায়। খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১৭৫ টাকা, বোতলজাত প্রতি লিটার ১৯২ টাকা ও ৫ লিটারের বোতল ৯৪৫ টাকা এবং পাম অয়েলের লিটার ১৪৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া। তবে কোথাও কোথাও ওই দরের চেয়েও কয়েক টাকা বেশি দামে ভোজ্যতেল বিক্রি করা হচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, দেশে মাসখানেক আগে প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম ৪৪ টাকা, ডিজেল ও কেরোসিনের ৩৪ টাকা এবং অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়ানো হয়। বর্তমানে প্রতি লিটার পেট্রোল ১৩০ টাকা, ডিজেল ১১৪ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা ও কেরোসিন ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের পাশাপাশি দেশে নির্মাণসামগ্রীর দামও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। দেশে ৮০ লাখ টনের বেশি এসএম রডের চাহিদা রয়েছে এবং তার সিংহভাগই দেশে উৎপাদন হয়। তবে বিশেষায়িত কিছু রড আমদানি হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪ দশমিক ৬ লাখ টন রড আমদানি হয়েছে। আর এ বছরের শুরুর দিকে বিশ্ববাজারে রড উৎপাদনের কাঁচামাল স্ক্র্যাপ স্টিলের দাম বাড়লেও গত জুলাইতে তা কমে দেড় বছর আগের অবস্থানে ফিরে গেছে। জুলাইয়ে কমে প্রতি টনের দাম ৪০০ ডলারের নিচে নেমে আসে। অর্থাৎ গত এক বছরে বিশ্ববাজারে রডের দাম ১৪ শতাংশ কমেছে। কিন্তু দেশে পণ্যটির দাম না কমে বরং ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ বেড়েছে। তাছাড়া সিমেন্টের দাম বেড়েছে ৩১ শতাংশ। দেশে বছরে ৩৩৬ লাখ ৫০ হাজার টন সিমেন্টের ব্যবহার হয় এবং তার সিংহভাগই স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয়। তবে রডের মতো বিশেষায়িত কিছু সিমেন্টও আমদানি হয়। বিশ্ববাজারে এক বছরে দাম বেড়েছে ১৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ আর দেশে বেড়েছে ৩১ শতাংশ।
এদিকে দেশের বাজারে চালের দাম বাড়া প্রসঙ্গে উৎপাদনকারীরা বলছেন, কিছু সিন্ডিকেট ও মজুতদার চালের দাম বাড়ার পেছনে মূল কারিগর। মিল মালিকরা ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি দরে আড়তদারদের মোটা চাল সরবরাহ করে। ওই চাল পাইকার ও খুচরা বিক্রেতা হয়ে তিন হাত ঘুরে ভোক্তার কাছে যাওয়ায় দাম বেড়ে যায়। তবে এতো দাম বাড়ার কোনো যুক্তি নেই। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খোরশেদ আলম খান জানান, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর বড় বিনিয়োগের কারণে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বহু চালকল বন্ধ হয়ে গেছে। যে কারণে চালের বাজার কিছু সিন্ডিকেট ও মজুতদারের হাতে চলে গেছে। ফলে বেড়ে যাচ্ছে দাম। তাদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যাওয়া চালকলগুলোকে ঋণ-সহায়তা দিয়ে ফের চালু করা প্রয়োজন। তাহলে চালের বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে। দামও ভোক্তার নাগালে চলে আসবে। আর আটা, মসুর ডাল, চিনি ও ভোজ্যতেলের দামের ফারাকের ব্যাপারে বসুন্ধরা মাল্টি ফুড প্রোডাক্টসের নির্বাহী পরিচালক (বিক্রয়) মো. রেদওয়ানুর রহমান জানান, গম আমদানিতে ব্যাঘাত ঘটার কারণে আটা-ময়দার দাম বেড়েছে। সামনে গম আমদানিতে সঙ্কটের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। দেশে এখন যেসব আমদানি করা নিত্যপণ্য বেচাকেনা হচ্ছে সেগুলো অন্তত দুই-তিন মাস আগের আমদানি করা। তবে বিশ্ববাজারে যেহেতু এখন খাদ্যপণ্যের দাম কমছে তখন দেশেও কমবে। সেজন্য দেড় থেকে দুই মাস অপেক্ষা করা লাগতে পারে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) এ কে এম আলী আহাদ খান জানান, ট্যারিফ কমিশনকে বিশ্ববাজার পরিস্থিতির সঙ্গে দেশের বাজারে নিত্যপণ্যসহ অন্য জিনিসপত্রের দাম সমন্বয় করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বিশ্ববাজার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে ট্যারিফ কমিশনকে ১৫ দিন সময় দেয়া হয়েছে। ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা বিচার-বিশ্নেষণ করে দেশের বাজারে পণ্যের দাম পুননির্ধারণ করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category