• শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৬ অপরাহ্ন
  • ই-পেপার

আমেরিকার সব সিদ্ধান্ত সঠিক নয়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

Reporter Name / ১৫২ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক :
মার্কিন প্রশাসনের সব সিদ্ধান্ত সঠিক নয়। যুক্তরাষ্ট্রেও প্রতি বছর লাখ লাখ লোক নিখোঁজ হয়, পুলিশের গুলিতে হাজারও মানুষ মারা যায়। কিন্তু তার জন্য বাহিনীর সদস্যদের কোনো শাস্তি দেওয়া হয় না। মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। ভারতীয় রাষ্ট্রপতির আসন্ন সফর উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। রপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র?্যাব) এবং বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কাজ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনকে। গত সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে এ কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। এরপর ২৪ ঘণ্টার বেশি পার হয়েছে। এখন পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কারও সঙ্গে কথা বলেছেন কিনা তা জানতে চেয়েছিলেন এক সাংবাদিক। জবাবে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের একটি দায়িত্ব দিয়েছেন। আমরা এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে উত্তর দেবো। এমনি একা হুট করে উত্তর দেওয়া ঠিক হবে না। তবে একটি বিষয় জানাতে চাই, আমাদের সহকর্মীরা জানিয়েছেন, আমেরিকায় প্রতি বছর প্রায় ছয় লাখ লোক ‘মিসিং’ (নিখোঁজ) হয়। আর এরা বলছে, গত ১০ বছরে আমাদের দেশে নাকি ৬০০ লোক মিসিং হয়েছে। ছয় লাখ আর ছয়শ’! ড. মোমেন বলেন, আমেরিকার তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর সেখানে হাজারখানেক লোককে পুলিশ মেরে ফেলে। গুলি করে মেরে ফেলে। আর আমাদের এখানে কালেভদ্রে একজন-দুজন মারা যায়। কিন্তু আমেরিকায় যে এত লোক মারা যায়, এ নিয়ে আমেরিকান সংবাদমাধ্যম-টাধ্যম খুব… কারণ তারা মনে করে, লাইন অব ডিউটিতে এই কাজটা করেছে। আর আমাদের দেশে যে সংস্থার ওপর এই স্যাংশনটা এসেছে, এই সংস্থাটি আমেরিকার যে গ্লোবাল পলিসি -সন্ত্রাস দমন- আমাদের দেশে র‌্যাব এই সন্ত্রাস দমনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। শুধু সন্ত্রাস না, ড্রাগ ট্রাফিকিং (মাদকপাচার) বলেন, যেটা আমেরিকার একটা বড় ইস্যু, সেটাতেও তারা সাহায্য করছে। তারপরে ক্রাইমও কিন্তু কমে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, র‌্যাব ‘বাই এনলার্জ’ (সামগ্রিকভাবে), ওরা কিন্তু দুর্নীতিপরায়ণ না যে টাকা-পয়সা দিয়ে অবস্থা পরিবর্তন করাবে। এর ফলে তারা বাংলাদেশের জনগণের আস্থা অর্জন করেছে। এবং আমেরিকায় তো এই যে বললাম, ছয় লাখ লোক নিখোঁজ হয়, হাজার হাজার লোক পাওয়া যায় মৃত অবস্থায়, সেই জন্য সেসব প্রতিষ্ঠানে যারা চাকরি করেন, তাদের ওপর কোনো পানিশমেন্ট আমি শুনিনি কোনোদিন। কিন্তু বাংলাদেশে….। তিনি বলেন, আমরা এত শক্তিশালী দেশ নই, তার ফলে হঠাৎ করে কোনো লোকের প্ররোচণায় বা কোনো সংস্থার, বিভিন্ন হিউম্যান রাইটস এনজিওরৃ এর ফলে এরকম একটা বড় ডিসিশন নিলো আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা না বলে; যেখানে আমাদের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের সঙ্গে আলাপ করছি। এসব কিছুই না জানিয়ে হঠাৎ করে এরকম সিদ্ধান্তৃ আমরা এটা আলোচনা করবো। ড. মোমেন আরও বলেন, আমেরিকার সব সিদ্ধান্ত সঠিক এমন না। এর ভুরিভুরি এক্সাম্পল (উদাহরণ) রয়েছে। আমরা আশা করি, ওই দেশে পরিপক্ব লোকজন আছেন, জ্ঞানী লোক আছেন, তারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবেন। আমরা এখন সেই প্রচেষ্টাই চালাবো। তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা অব্যাহত থাকবে।
একই বছরে প্রতিবেশী দেশের রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে আসা ইতিহাসে বিরল ঘটনা বলে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত বাংলাদেশের প্রতিবেশী ও অকৃত্রিম বন্ধু। বাংলাদেশ-ভারত শুধু সীমান্ত সম্পর্কে আবদ্ধ নয়, ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এ দেশের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্কের ভিত্তি রচনা করে। পরবর্তীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও সৃদৃঢ় ও গতিশীল হয়েছে। তিনি জানান, প্রতিবেশী দুই দেশের সুম্পর্কের অনন্য নিদর্শন হিসেবে ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে ১৫ থেকে ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আসবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। তিনি বাংলাদেশের বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী, মুজিববর্ষের সমাপনী দিন উদযাপন এবং বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে এই সফর করবেন। এই রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতের ফার্স্টলেডি, মহামান্য রাষ্ট্রপতির কন্যা, ভারতের শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী, দুজন সংসদ সদস্য, ভারতের পররাষ্ট্রসচিবসহ বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তার সঙ্গী হিসেবে যোগ দেবেন বলে জানতে পেরেছি। ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের পর এটি হবে বাংলাদেশে তার প্রথম সফর। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনারা অবগত রয়েছেন যে, ২০২১ সালের ২৬ এবং ২৭ মার্চ ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, মুজিববর্ষ উদযাপন এবং বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশ সফর করেন। একই বছরে একটি দেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিবেশী দেশে রাষ্ট্রীয় সফর যেকোনো দেশের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। ভারতের পক্ষ থেকে এসব সফর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কেরই প্রতিফলন। বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ২০২১ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে এ ধরনের সফর দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কের খাতায় মাইলফলক অধ্যায় হিসেবে স্বর্ণাক্ষরে উল্লেখ থাকবে বলেও উল্লেখ করেন আবদুল মোমেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category