০৭:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ | ই-পেপার

আসামিদের হাসপাতাল থেকে টেনেহিঁচড়ে হাজতে নেয়া ৪ এসআই বরখাস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক :
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আসামিদের টেনেহিঁচড়ে হাজতে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত চার পুলিশ উপ-পরিদর্শককে সাময়িক বরখাস্ত ও দুই কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। বরখাস্তকৃত পুলিশ সদস্যরা হলেন, পুলিশ উপপরিদর্শক আলতাফ হোসেন (এসআই), সাইফুল ইসলাম (এসআই), ওয়াজেদ আলী (এসআই) ও মুনতাজ (এসআই)। এছাড়াও মোজাম্মেল হক (কনস্টেবল) ও সাথী আক্তারকে (নারী কনস্টেবল) প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ বুধবার সকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাকির হোসেন সুমন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, এমন অমানবিক ঘটনায় পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত চার পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত এবং দুজনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়াও আমাকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্তে যাদের নাম আসবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি। এর আগে গত মঙ্গলবার বসতভিটার জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে হামলায় আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত ভিক্ষুক পরিবারকে উল্টো মামলায় জড়ানোর অভিযোগ ওঠে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। গুরুতর আহতরা চিকিৎসাধীন থাকলেও তাদের আসামি করায় পুলিশ তাদের পিটিয়ে ও টেনেহিঁচড়ে হাসপাতাল থেকে হাজতে পাঠায়। পুলিশের এমন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, সরিষাবাড়ী পৌরসভার বাউসি বাজার এলাকার মৃত মহির উদ্দিনের ছেলে ভিক্ষুক আবদুল জলিল (৬৪) ২০ শতক জমিতে বসতভিটা বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন। প্রতিপক্ষ মুজিবুর রহমান সম্প্রতি ওই জমি তাদের দাবি করায় দুইপক্ষের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে মামলা হলে আদালত আবদুল জলিলের পক্ষে ডিক্রি দেন। আদালতের আদেশ অমান্য করে সোমবার সকালে প্রতিপক্ষ মুজিবুর রহমান দলবল নিয়ে আবদুল জলিলের পরিবারের ওপর হামলা চালান। এ সময় রামদা, লোহার রড় ও লাঠির আঘাতে আবদুল জলিলসহ পরিবারের সবাই আহত হন। গুরুতর আহত আহত আবদুল জলিল (৬৪), তার স্ত্রী লাইলী বেগম (৫০), বড় ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক (৩০), মেজো ছেলে ওয়ায়েজ করোনি (২৫), ছোট ছেলে হামদাদুল হককে (১৬) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরিবারের অন্য সদস্য জসিম মিয়াকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে ঘটনার পর মুজিবুর রহমান বাদী হয়ে চিকিৎসাধীন ৪ জনসহ ১৫ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। মামলার পর গত মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এজাহারভুক্ত ৪ আসামিকে আটক করে। হাসপাতালের বিছানা থেকে পুলিশ তাদের ‘চ্যাং দোলা’ করে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় ঘণ্টাখানেক তাদের হাজতে রাখার পর বিকেলে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আব্দুল জলিলের জামাতা চান মিয়া, মেয়ে জুলেখা বেগম ও ভাতিজা রানা মিয়া বলেন, তারা মামলা করতে গেলেও পুলিশ তাদের মামলা নেয়নি। উল্টো আবদুল জলিলকে থানায় আটকে রাখা হয়। পরে তার শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে হাসপাতালে ভর্তি হন। রাতে উল্টো অভিযুক্তরা মামলা করে। সরিষাবাড়ী থানার ওসি মীর রকিবুল হক বলেন, মুজিবুর রহমান বাদী হয়ে সোমবার রাতে আবদুল জলিলসহ অন্যান্যের আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। এরপর হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে আসামিদের আটক করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় টেনেহিঁচড়ে আটকের বিষয়ে তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ায় তাদের আটক করা হয়েছে। না হলে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা দেওয়া হতো। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. দেবাশীষ রাজবংশী বলেন, আহতদের চিকিৎসা চলাকালীনই পুলিশ হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়েছে। চিকিৎসাধীন আসামিদের যেভাবে আটক করা হয়েছে তা অমানবিক।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

সমুদ্রসম্পদ আহরণের জন্য গবেষণার ওপর জোর দিতে হবে:চসিক মেয়র

আসামিদের হাসপাতাল থেকে টেনেহিঁচড়ে হাজতে নেয়া ৪ এসআই বরখাস্ত

আপডেট সময়ঃ ০৬:৪৬:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ মে ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আসামিদের টেনেহিঁচড়ে হাজতে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত চার পুলিশ উপ-পরিদর্শককে সাময়িক বরখাস্ত ও দুই কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। বরখাস্তকৃত পুলিশ সদস্যরা হলেন, পুলিশ উপপরিদর্শক আলতাফ হোসেন (এসআই), সাইফুল ইসলাম (এসআই), ওয়াজেদ আলী (এসআই) ও মুনতাজ (এসআই)। এছাড়াও মোজাম্মেল হক (কনস্টেবল) ও সাথী আক্তারকে (নারী কনস্টেবল) প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ বুধবার সকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাকির হোসেন সুমন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, এমন অমানবিক ঘটনায় পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত চার পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত এবং দুজনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়াও আমাকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্তে যাদের নাম আসবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি। এর আগে গত মঙ্গলবার বসতভিটার জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে হামলায় আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত ভিক্ষুক পরিবারকে উল্টো মামলায় জড়ানোর অভিযোগ ওঠে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। গুরুতর আহতরা চিকিৎসাধীন থাকলেও তাদের আসামি করায় পুলিশ তাদের পিটিয়ে ও টেনেহিঁচড়ে হাসপাতাল থেকে হাজতে পাঠায়। পুলিশের এমন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, সরিষাবাড়ী পৌরসভার বাউসি বাজার এলাকার মৃত মহির উদ্দিনের ছেলে ভিক্ষুক আবদুল জলিল (৬৪) ২০ শতক জমিতে বসতভিটা বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন। প্রতিপক্ষ মুজিবুর রহমান সম্প্রতি ওই জমি তাদের দাবি করায় দুইপক্ষের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে মামলা হলে আদালত আবদুল জলিলের পক্ষে ডিক্রি দেন। আদালতের আদেশ অমান্য করে সোমবার সকালে প্রতিপক্ষ মুজিবুর রহমান দলবল নিয়ে আবদুল জলিলের পরিবারের ওপর হামলা চালান। এ সময় রামদা, লোহার রড় ও লাঠির আঘাতে আবদুল জলিলসহ পরিবারের সবাই আহত হন। গুরুতর আহত আহত আবদুল জলিল (৬৪), তার স্ত্রী লাইলী বেগম (৫০), বড় ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক (৩০), মেজো ছেলে ওয়ায়েজ করোনি (২৫), ছোট ছেলে হামদাদুল হককে (১৬) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরিবারের অন্য সদস্য জসিম মিয়াকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে ঘটনার পর মুজিবুর রহমান বাদী হয়ে চিকিৎসাধীন ৪ জনসহ ১৫ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। মামলার পর গত মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এজাহারভুক্ত ৪ আসামিকে আটক করে। হাসপাতালের বিছানা থেকে পুলিশ তাদের ‘চ্যাং দোলা’ করে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় ঘণ্টাখানেক তাদের হাজতে রাখার পর বিকেলে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আব্দুল জলিলের জামাতা চান মিয়া, মেয়ে জুলেখা বেগম ও ভাতিজা রানা মিয়া বলেন, তারা মামলা করতে গেলেও পুলিশ তাদের মামলা নেয়নি। উল্টো আবদুল জলিলকে থানায় আটকে রাখা হয়। পরে তার শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে হাসপাতালে ভর্তি হন। রাতে উল্টো অভিযুক্তরা মামলা করে। সরিষাবাড়ী থানার ওসি মীর রকিবুল হক বলেন, মুজিবুর রহমান বাদী হয়ে সোমবার রাতে আবদুল জলিলসহ অন্যান্যের আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। এরপর হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে আসামিদের আটক করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় টেনেহিঁচড়ে আটকের বিষয়ে তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ায় তাদের আটক করা হয়েছে। না হলে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা দেওয়া হতো। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. দেবাশীষ রাজবংশী বলেন, আহতদের চিকিৎসা চলাকালীনই পুলিশ হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়েছে। চিকিৎসাধীন আসামিদের যেভাবে আটক করা হয়েছে তা অমানবিক।