• রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৮ পূর্বাহ্ন
  • ই-পেপার

ইতালি নেওয়ার কথা বলে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি, চক্রের ২ সদস্য গ্রেপ্তার

Reporter Name / ৮০ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
সফিকুল ইসলাম ওরফে শফিউল্লাহ শেখ। বাড়ি পিরোজপুরের নাজিপুরে। ভাগ্য বদলাতে ১৩ লাখ টাকায় ইতালি যাওয়ার জন্য চুক্তি করেন তিনি। প্রথমে সাত লাখ টাকা দেন ও পরবর্তীসময়ে আরও পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। ইতালি যাওয়ার কথা বলে প্রথমে দুবাই, পরে সিরিয়া হয়ে লিবিয়ায় নিয়ে শফিউল্লাহকে নির্যাতন করতো একটি সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারী চক্র। এ চক্রের বাংলাদেশি দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা (তেজগাঁও) বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনাল টিম। একই সঙ্গে অপহৃত শফিউল্লাহকে লিবিয়া থেকে উদ্ধার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। ভুক্তভোগী শফিউল্লাহ বলেন, লিবিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে সাত লাখ টাকা দেন মানবপাচারকারী একটি চক্রের হাতে। বাংলাদেশ থেকে প্রথমে দুবাই যাই। দুবাই এয়ারপোর্ট থেকে সিরিয়া যাই ৪০ জন বাংলাদেশি। সিরিয়ায় একটি ঘরে তিনদিন কোনো খাবার না দিয়ে আটকে রাখা হয় আমাদের। কেউ বাড়িতে যোগাযোগ করতে পারেনি। রাজিবের বোন জামাই সুলতানের নেতৃত্বে আমাদের আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। তিনি বলেন, তিনদিন পর সিরিয়া থেকে লিবিয়ায় যাই। লিবিয়ায় সুলতান নামে একজনকে বলা হয় আমরা রাজীবের লোক। লিবিয়ায় আমিসহ ৪০ জনের ওপর নির্যাতন চালায় এবং পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে দেশে পরিবারকে ফোন দেয়। পরবর্তীসময়ে আমার বড় ভাই তেজগাঁও গোয়েন্দা পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে তারা আমাকে উদ্ধার করে। গত ২৮ অক্টোবর রাজধানী যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- বাদশা (৩১) ও রাজিব মোল্লা (৩৫)। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, ভুক্তভোগী শফিউল্লাহকে গ্রেপ্তার বাদশা ইতালি পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে গত ৪ অক্টোবর ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে দুবাই পাঠান। হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেপ্তার রাজিবের আত্মীয় দুবাই অবস্থান করা সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রের সদস্য সবুজ দুবাই এয়ারপোর্টে ভুক্তভোগীসহ আরও ২০ জনকে রিসিভ করে একটি বাসায় নিয়ে যান। দুবাই থেকে সিরিয়া হয়ে লিবিয়ার মিসরাত এলাকার একটি ক্যাম্পে গ্রেপ্তার বাদশা ও রাজিবের বোন জামাই সুলতানের নেতৃত্বে ভিকটিমকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। তিনি আরও বলেন, ভুক্তভোগীকে নির্যাতন করে মোবাইলফোনে তার পরিবারকে কান্না শুনিয়ে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে চক্রটি। পরবর্তীসময়ে ভুক্তভোগীর পরিবার নিরুপায় হয়ে গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগে শরণাপন্ন হলে যাত্রাবাড়ী থানায় মানবপাচার আইনে গত ২৭ অক্টোবর একটি মামলা করা হয়। গোয়েন্দা তেঁজগাও বিভাগ তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রের দেশীয় দুই সদস্য বাদশা ও রাজিব মোল্লাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারদের মাধ্যমে লিবিয়ায় অবস্থান করা সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্য সুলতানের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভুক্তভোগী সফিকুল ইসলামকে লিবিয়া থেকে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে ভিকটিম সফিকুল ইসলাম চিকিৎসাধীন। গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে গোয়েন্দা প্রধান বলেন, গ্রেপ্তাররা আন্তঃদেশীয় সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রের সদস্য বাদশা ও রাজিব ভুক্তভোগীসহ দেশের বেকার যুবক ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকদের ইতালি ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় পাচার করেন। সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রের বিদেশে অবস্থান করা অন্যান্য সদস্যদের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের অপহরণ করে ক্যাম্পে আটক রেখে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. গোলাম সবুরের নির্দেশনায় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. আনিচ উদ্দীনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং মোহাম্মদপুর টিমের নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category