• বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৪৫ অপরাহ্ন

ইলিশের কেজি ৭০০ টাকা নির্ধারণ চেয়ে আইনি নোটিশ

Reporter Name / ৬ Time View
Update : রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের জনগণের জন্য প্রতি কেজি ইলিশের খুচরা বিক্রয় মূল্য সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা নির্ধারণ চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের প্রধান নিয়ন্ত্রককে নোটিশটি পাঠানো হয়। আজ রোববার ডাকযোগে ও ই-মেইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার নোটিশ পাঠান। নোটিশে বলা হয়েছে, ইলিশ মূলত বঙ্গোপসাগরের মাছ। এই মাছ বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমারসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের চেয়ে ভারত ও মিয়ানমারের সমুদ্রসীমা অনেক বিস্তৃত। ভারত ও মিয়ানমারের সমুদ্রসীমায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে। এ ছাড়া ভারতের বিভিন্ন নদীতেও ইলিশ পাওয়া যায়। ইলিশ সাগরের মাছ হলেও ডিম ছাড়ার জন্য পদ্মা নদীতে আসে। এ সময় নদীর প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে পরিপুষ্ট ও সুস্বাদু হয়। মূলত পদ্মার ইলিশ স্বাদে-গন্ধে উৎকৃষ্ট। যেহেতু ইলিশ সাগরের মাছ, তাই পুকুর বা অন্য কোনো স্থানে এই মাছ চাষ করতে হয় না। ইলিশে উৎপাদন খরচ নাই। এটি শতভাগ প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশে রুই, কাতলাসহ যেসব মাছ চাষ করা হয়, তা বাজারে কেজি প্রতি সর্বোচ্চ ৫০০ টাকাতে খুচরা বিক্রি হয়। বাংলাদেশে ভারতীয় এজেন্ট ও মাছ রপ্তানিকারকরা সারা বছর পদ্মার ইলিশ মজুদ করে রাখে। সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে পদ্মার সব ইলিশ ভারতে রপ্তানি করে। ক্ষেত্র বিশেষে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পাচারও হয়। পদ্মার ইলিশ ভারতে রপ্তানি ও পাচার হওয়ার কারণে দেশের জনগণ বাজারে গিয়ে পদ্মার ইলিশ পায় না। বাংলাদেশে ইলিশ সুরক্ষায় তিন মেয়াদে নিষেধাজ্ঞা থাকে। এর মধ্যে অক্টোবরে ২২ দিন। এ সময় মা মাছকে ডিম ছাড়ার সুযোগ দেওয়া হয়। এরপর বাচ্চা ফুটলে তার সুরক্ষায় ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল দুই মাস নিষেধাজ্ঞা থাকে। মাছের বৃদ্ধির জন্য ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই আবার এক দফায় নিষেধাজ্ঞা থাকে সাগরে। অন্যদিকে ভারতে নিষেধাজ্ঞা থাকে ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত। ১৫ জুন তাদের মাছ ধরা শুরু হয়। বাংলাদেশে ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার সুবিধা পাচ্ছে ভারতের মৎস্যজীবীরা। এক মাসের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে চলা নিষেধাজ্ঞার সময় ভারতে ব্যাপকভাবে ইলিশ ধরা হয়। এতে বিশেষ করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে বেশি ইলিশ ধরা পড়ে। সাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলোর বাস্তবতা মেনে ভারত ও বাংলাদেশ মিলিয়ে একটি অভিন্ন সময়ে বা কাছাকাছি সময়ে ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা জরুরি। কিন্তু এ বিষয় নিয়ে এখনও ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি বাংলাদেশ। নোটিশ প্রাপকদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে বাংলাদেশের জনগণ কম দামে পদ্মার সুস্বাদু ইলিশ খাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নোটিশে আরও বলা হয়, ইলিশের দাম জনগণের ক্রয়সীমার বাইরে বলে দেশের গণমাধ্যমগুলোতে সংবাদ প্রকাশ হয়। পরে গত ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার কাওরান বাজার এবং ২৬ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে অভিযান চালানো হয়। সেই সময় অভিযান পরিচালনার স্থানে ইলিশের দাম কমে যায়। অথচ ইলিশ নিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক যোগসাজশ করে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে মনোপলি কর্মকা- করছে। কিন্তু নোটিশ প্রাপ্তরা প্রতি কেজি ইলিশের সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে দেশের জনগণকে সুলভে ইলিশ খাওয়ানোর ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেননি। নোটিশে আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার আরও বলেন, বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রতি কেজি ইলিশ ১ হাজার ১৮০ টাকা দরে রপ্তানি শুরু হয়েছে। ভারতে যে দামে ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে, তার চেয়ে প্রতি কেজিতে কমপক্ষে ৯০০ টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে দেশের ভোক্তাদের। ইলিশ রপ্তানির পরিপত্রটি কয়েক বছর আগে তৈরি করা। এ ছাড়া দেশের রপ্তানি নীতি ২০২১-২৪ অনুযায়ী ইলিশ মুক্তভাবে রপ্তানিযোগ্য কোনো পণ্য নয়। এই মাছ রপ্তানি করতে চাইলে যথাযথ শর্ত পূরণ করতে হবে। তাই ইলিশ রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশীয় বাজারদরের চেয়ে বেশি মূল্যে রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করা উচিত ছিল। দেশের জনগণ যেখানে প্রতি কেজি ইলিশ ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায় কিনছে সেখানে ভারতে রপ্তানি মূল্য কীভাবে ১ হাজার ১৮০ টাকা হতে পারে? এর ফলে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও নোটিশ প্রাপকরা চরম দায়িত্ব জ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়ে রাষ্ট্র ও জনগণের ক্ষতিসাধন করেছেন। এই নোটিশে আগামী সাত দিনের মধ্যে ইলিশের পাইকারি ও খুচরা বাজার মনিটরিং করা, সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ইলিশ পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, সাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলোর বাস্তবতা মেনে ভারত ও বাংলাদেশ মিলিয়ে একটি অভিন্ন সময়ে বা কাছাকাছি সময়ে ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার বিষয়ে লিখিতভাবে ভারতকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেওয়া এবং ভবিষ্যতে যেকোনও দেশে ইলিশ রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশের বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে যেন রপ্তানি না হয়, সেই বিষয় নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে। না হলে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/