নিজস্ব প্রতিবেদক :
উত্তরা থেকে আগারগাঁও রুটে পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল করলো মেট্রোরেল। ১১ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ অংশে সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক লাইনে চলেছে মেট্রোরেল। আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে আট স্টেশন পার হয়ে আগারগাঁও আসে মেট্রোরেলের একটি সেট। এর আগে সকালে ৯টা ৩৯ মিনিটে উত্তরা থেকে আগারগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে ট্রেনটি। উত্তরা থেকে মিরপুর-১০ পর্যন্ত মেট্রোরেলের গতি ছিল ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। তবে মিরপুর-১০ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১৫ থেকে ২৫ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো হয়েছে। এর আগে উত্তরা থেকে মিরপুর পর্যন্ত ট্রেনের পারফরম্যান্স পরীক্ষা করা হলেও আগারগাঁও পর্যন্ত পরীক্ষা গতকাল রোববারই প্রথম হলো। এদিন মেট্রোরেলের পাড়ি দেওয়া স্টেশনগুলো হলো- উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও। মেট্রোরেল প্রকল্পের কর্মরতরাই ছিলেন পারফরম্যান্স পরীক্ষার যাত্রী। আগারগাঁও স্টেশনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, আগামী বছরের ১৬ ডিসেম্বর আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের বাণিজ্যিক চলাচল শুরু করতে যাচ্ছি। তারই ধারাবাহিকতা এই পারফরম্যান্স টেস্ট। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে এ রুটের বাকী অংশে চলাচল করবে মেট্রোরেল। সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। মেট্রোরেল রিয়েল টাইমে চলাচল করবে। এ ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছাড়বে ও স্টেশনগুলোতে নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাবে। এম এ এন ছিদ্দিক বলেন আরও বলেন, আজ আমাদের জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন। বিজয়ের মাসে আমরা আগারগাঁও পর্যন্ত পারফরম্যান্স টেস্ট করতে পেরেছি। এ মাসে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত ভায়াডাক্ট নির্মাণকাজ শেষ করতে পারবো। আর ২০২২ সালের জানুয়ারির মধ্যে মতিঝিল পর্যন্ত ভায়াডাক্ট নির্মাণ সম্পন্ন হবে। মেট্রোরেলের সাতটা সেট ডিপোতে এসে পৌঁছেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামীকাল (আজ সোমবার) আরেকটি মেট্রো রেলসেট আসবে। জানুয়ারিতে আরও দুইটা মেট্রোরেল সেট বহরে সংযুক্ত হবে। মোট ১০টা মেট্রোরেল সেট দিয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বাণিজ্যিক চলাচল শুরু হবে। মেট্রোরেল সেটগুলো আসার পর পারফরম্যান্স টেস্ট ও ট্রায়াল রান করা হয়। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেটগুলোর ট্রায়াল রান শেষ করতে পারবো। পরের তিন মাসে বাকী প্রস্তুতি গ্রহণ করবো, যাতে ডিসেম্বরে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চলতে পারে। স্টেশনগুলো ছাঁদ নির্মাণ ও বৈদ্যুতিক কিছু কাজ এখনো বাকী আছে জানিয়ে এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, আমাদের অনেক প্রস্তুতি বাকী আছে। প্রথম ৬টা স্টেশনে হুড বা ছাঁদ দেওয়া হয়েছে। বাকী যে তিনটা আছে তা আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে বসানো হবে। আশা করছি স্টেশনের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ করতে পারবো। সম্পূর্ণ বিদ্যুৎচালিত হওয়ায় মেট্রোরেলে কোনো ধরনের জীবাশ্ম ও তরল জ¦ালানি ব্যবহৃত হবে না। ফলে এতে বায়ু দূষণ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাজধানীতে মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১২ সালে। প্রকল্প নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও পাঁচ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত রুটটিকে লাইন-৬ বলা হয়। সব মিলিয়ে প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে ৭২ শতাংশ। উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের কাজ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এই অংশে কাজ হয়েছে ৮৯ দশমিক ৬১ শতাংশ। এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে।