০৮:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫ | ই-পেপার

উন্নয়নের অদম্য গতিকে অব্যাহত রাখতে চায় সরকার: প্রধানমন্ত্রী

  • দৈনিক আইন বার্তা
  • আপডেট সময়ঃ ০৭:১৮:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ১১৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :
সরকার দেশে উন্নয়নের অদম্য গতিকে অব্যাহত রাখতে চায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সেজন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করে একটি সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে।’ আজ রোববার পিরোজপুরের বেকুটিয়ায় কচা নদীর ওপর ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ের চামেলী হল থেকে মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জানি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি একটি দেশের অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমরা এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাজ করে যাচ্ছি।’ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে এবং জনসাধারণের বিশেষ করে তৃণমূলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তার সরকারের উদ্যোগের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই দেশের উন্নয়নের গতি অব্যাহত থাকুক।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত ছিল। কারণ, তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক খর¯্রােতা বড় বড় নদী পাড়ি দিয়ে জীবিকা ও চিকিৎসার জন্য রাজধানীতে আসতে হতো। আমি ’৯৬ সালে বরিশালের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগের জন্য শিকারপুর-দোয়ারিকা সেতু নির্মাণ করে দেই এবং কীর্তনখোলার ওপর ব্রিজ নির্মাণের কাজ হাতে নেই।’ গাবখান ব্রিজও তার সরকারের আমলে নির্মিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নেও একের পর এক সেতু করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিরোজপুরের বেকুটিয়ায় কচা নদীর ওপর বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু উদ্বোধনের ফলে ঢাকার সঙ্গে পিরোজপুরের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। তিনি বলেন, জনগণ পিরোজপুরের তাজা পেয়ারা এবং আমড়া রাজধানীতে বসেই পাবে। এই অঞ্চলের শীতল পাটিও বিখ্যাত। জেলার বাসিন্দারা অন্যান্যের পাশাপাশি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন করতে পারে, যা জেলা ও অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তনে ব্যাপক অবদান রাখবে। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। সড়ক ও জনপথ বিভাগ ৮৯৪.০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু’ নির্মাণ করে। চীন সরকার সেতুটির জন্য প্রকল্প সহায়তা হিসেবে ৬৫৪ দশমিক ৮০ কোটি এবং বাংলাদেশ সরকার ২৩৯ দশমিক ৮০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। সেতুটি কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, মংলা সমুদ্রবন্দর এবং দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা করবে। অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বক্তৃতা করেন। সড়ক পরিবহন ও সহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী অনুষ্ঠানে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন। প্রকল্পের ওপর একটি ভিডিওচিত্রও অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। এ উপলক্ষে বঙ্গমাতা সেতু এলাকায় পশ্চিম এবং পূর্বপাড়ে দুটি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। পশ্চিমপাড়ে পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ও পূর্বপাড়ে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী পিরোজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী পরে প্রকল্প এলাকার জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য সরকারের পদক্ষেপের অংশ হিসেবে পায়রা বন্দরের উন্নয়নের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থনৈতিক অগ্রগতি বাড়াতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলাকে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে আমরা আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন করছি’। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ৭১৮ কিলোমিটার মহাসড়ককে চার লেন বা তার বেশি উন্নীত করার মাধ্যমে সারা দেশে মহাসড়কের মোট দৈর্ঘ্য ২২ হাজার কিলোমিটারে উন্নীত করেছে, পাশাপাশি ৬শ’ কিলোমিটার মহাসড়ককে ৪-লেন বা তার বেশি লেনে পরিণত করার কাজ চলছে। তিনি বলেন, সরকার ঢাকায় মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প, গাজীপুর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার র‌্যাপিড বাস ট্রানজিট, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল এবং ১০ লেনের টঙ্গী সেতু নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্প সম্পন্ন হলে আমাদের অর্থনীতি আরও গতি পাবে।
জয়ের রাজনীতিতে আসা নিয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শে সরকার নানা ডিজিটাল উদ্যোগ নিয়েছে। তবে রাজনীতিতে যোগ দেওয়া বা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত একান্তই তার নিজের এবং দেশের জনগণের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। গতকাল রোববার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালকে (এএনআই)-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেখুন, সে এখন একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। তাই এটা তার ব্যাপার। কিন্তু সে দেশের জন্য কাজ করছে। আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগ, এত সব স্যাটেলাইট, সাবমেরিন কেবল কিংবা কম্পিউটার প্রশিক্ষণের মতো এত সব ডিজিটাল ব্যবস্থা তার পরামর্শেই নেওয়া হয়েছে। আপনারা জানেন, সে আমাকে সহযোগিতা করছে। তবে কখনও দল কিংবা সরকারে কোনও পদ পাওয়ার কথা ভাবেনি।’ দলীয় এক অনুষ্ঠানে জয়কে দলের পদ দেওয়ার জন্য কর্মীদের জোরালো দাবি কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এমনকি আমাদের দলীয় সম্মেলনে পর্যন্ত তার জন্য জোরালো দাবি উঠেছিল। তখন আমি তাকে বললাম, মাইক্রোফোনের কাছে গিয়ে বলো, তুমি কী চাও। সে তাই করলো। বললো, এই মুহূর্তে আমি দলে কোনও পদ চাই না। বরং যারা এখানে কাজ করছেন তাদের এই পদ পাওয়া উচিত। কেন আমি একটা পদ দখল করে রাখবো? আমি আমার মায়ের সঙ্গে আছি। দেশের জন্য কাজ করছি। তাকে সহযোগিতা করছি। এটা আমি করে যাবো। সে এভাবেই চিন্তা করে। ফলে এমন নয় যে, আমাকেই তাকে তৈরি করতে হবে কিংবা এটা আমাকেই করতে হবে। সজীব ওয়াজেদ জয়ের কী কর্মীদের চাওয়ার প্রতি সায় দেওয়া উচিত? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা জনগণের ওপর নির্ভর করছে। আর পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি বাংলাদেশে কোনও ইস্যু নয়।
পর্যাপ্ত খাদ্যের মজুত নিশ্চিত করার নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর
রোনা মহামারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রয়েছে। আগামী নভেম্বর মাসে বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করে ‘যেকোনও কিছুর বিনিময়ে’ খাদ্যের মজুত বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে তিনি এ নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এই বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে এ নিয়ে ব্রিফ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, নভেম্বরে বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে। তাই এ নিয়ে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুতের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। চাল আমদানির জন্য যাদের ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ ফেল করতে পারে। এজন্য আগেই কিছু বিকল্প অর্ডার দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সাধারণত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণ করে সরকার। তবে এবছর নভেম্বরে সারা বিশ্বে খাদ্য সংকটের আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিও নভেম্বর পর্যন্ত চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই কর্মসূচি চালানোর জন্য অতিরিক্ত আরও ৫ থেকে ৬ লাখ টন চাল প্রয়োজন হবে। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, পাঁচটি দেশ থেকে খাদ্য আমদানি করা হবে। দেশগুলো হলো, রাশিয়া, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, ভারত ও থাইল্যান্ড। রাশিয়া থেকে খাদ্য আমদানিতে কূটনৈতিক কোনও সমস্যা নেই বলেও জানান তিনি। দেশে এখন ২০ লাখ টনের বেশি চাল মজুত আছে; যা ‘সন্তোষজনক’ বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, যাই হোক, প্রধানমন্ত্রী সবশেষে বলেছেন, খাদ্যের দিক থেকে আমরা নিরাপদে আছি। দেশে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রার আমন ফসল রোপণ বিঘিœত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি জানান, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করেও পর্যাপ্ত পানি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি নেই। দেশের অন্তত ১২ থেকে ১৩টি জেলার ডিসি মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে ফোন করে এ তথ্য জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ফলে বাজারে ইতোমধ্যে চালের দাম কমেছে উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘খবর পেয়েছি এই কর্মসূচির সুফল ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। এ কারণে বাজার থেকে কিছু বড় বড় পার্টি উঠে গেছে। আর এর ফলে বাজারে চালের সরবরাহও এখন ভালো।’
ভারত বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু: প্রধানমন্ত্রী
ভারত বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  রোববার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালকে (এএনআই)-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন তিনি। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর ভারত সফর যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। ৫-৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার দিনের এই রাষ্ট্রীয় সফরে বিভিন্ন ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হবে। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন এই ভারত সফরকে সামনে রেখে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছে এএনআই। সাক্ষাৎকারে প্রধামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আমাদের ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় তাদের অবদানের কথা সবসময় স্মরণ করি। এমনকি ১৯৭৫ সালে যখন আমার পরিবারের সব সদস্যকে হারালাম, তখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী (ইন্দিরা গান্ধী) আমাদেরকে ভারতে আশ্রয় দিয়েছিলেন। তাছাড়া আমরা ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী এবং আমি সবসময় আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বকে গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দেই।’ তিস্তার পানি বণ্টন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, এটি এখনও ঝুলে আছে। ভারত থেকে আমাদের এখানে পানি আসে, তাই তাদের আরও উদারতা দেখাতে হবে। এতে উভয় দেশই লাভবান হবে। পানির অভাবে কখনও কখনও আমাদের জনগণও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে তিস্তায় পানি না পেয়ে আমরা ফসল রোপণ করতে পারিনি। আরও নানা সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে এই বিষয়টির একটি সমাধান হওয়া উচিত। আমরা দেখেছি, এই সংকটের সমাধানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ রয়েছে। তবে সমস্যাটি আপনাদের দেশেই। আশা করি এর সমাধান হবে এবং সেটি হওয়া উচিত। ভারত ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কে ভারসাম্য রাখা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অত্যন্ত পরিষ্কার। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে জোরালোভাবে এটা বলেছিলেন। আমরা তার আদর্শ অনুসরণ করি। আমাদের উচিত জনগণকে নিয়ে কাজ করা। তাদেরকে কীভাবে আরও ভালো একটি জীবন উপহার দেওয়া যায়, তাদের জীবনমান কীভাবে আরও ভালো করা যায়।’ রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার যুদ্ধকে কেন্দ্র করে পূর্ব ইউরোপে আটকে পড়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগের প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি সত্যিই প্রধানমন্ত্রীকে (নরেন্দ্র মোদি) ধন্যবাদ জানাতে চাই যে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে এই যুদ্ধের সময় আমাদের অনেক শিক্ষার্থী আটকে পড়েছিল। তারা আশ্রয়ের জন্য পোল্যান্ডে গিয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় শিক্ষার্থীদের সরিয়ে নেওয়ার সময় আপনি তাদেরও নিয়ে এসেছিলেন। শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফিরেছে। আপনি স্পষ্টতই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করেছেন। এই উদ্যোগের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।’ শেখ হাসিনা বলেছেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশের জন্য ‘বড় বোঝা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে তার সরকার। এই সমস্যা সমাধানে প্রতিবেশী ভারত মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লক্ষাধিক রোহিঙ্গা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তার ভাষায়, ‘রোহিঙ্গারা আমাদের জন্য একটি বড় বোঝা। ভারত বড় একটি দেশ, সেখানে থাকার জায়গা অনেক হলেও কিন্তু দেশটিতে খুব বেশি রোহিঙ্গা নেই। আর আমাদের দেশে তাদের সংখ্যা ১১ লাখ। এই সমস্যাটি আপনারা মিটমাট করতে পারেন। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছি। তাদেরও কিছু করণীয় আছে, যেন রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরতে পারে। বাংলাদেশ সরকার মানবিক দিক বিবেচনা করে লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের দেখভাল করছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছি। সব ধরনের সহায়তা দিয়েছি। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে করোনা মহামারীর সময়ে টিকার আওতায় এনেছি। কিন্তু তারা আর কতদিন এখানে থাকবে? তারা এখন ক্যাম্পে অবস্থান করছে। আমাদের পরিবেশকে বিপজ্জনক করে তুলছে। রোহিঙ্গাদের কিছু অংশ মাদকপাচার, অস্ত্র ব্যবসা, নারী পাচারসহ নানা ধরনের সহিংসতায় জড়িয়ে পরিবেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। তারা যত দ্রুত নিজ দেশে ফিরবে, আমাদের ও মিয়ানমারের জন্য তত মঙ্গল হবে। আমাদের দিক থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। তাদের প্রত্যাবাসনে আসিয়ান, ইউএনওসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। এ ক্ষেত্রে ভারত বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে।’

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

সিডিএ’র জমিতে অন্যের নামে গ্যাস সংযোগ

উন্নয়নের অদম্য গতিকে অব্যাহত রাখতে চায় সরকার: প্রধানমন্ত্রী

আপডেট সময়ঃ ০৭:১৮:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
সরকার দেশে উন্নয়নের অদম্য গতিকে অব্যাহত রাখতে চায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সেজন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করে একটি সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে।’ আজ রোববার পিরোজপুরের বেকুটিয়ায় কচা নদীর ওপর ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ের চামেলী হল থেকে মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জানি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি একটি দেশের অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমরা এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাজ করে যাচ্ছি।’ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে এবং জনসাধারণের বিশেষ করে তৃণমূলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তার সরকারের উদ্যোগের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই দেশের উন্নয়নের গতি অব্যাহত থাকুক।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত ছিল। কারণ, তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক খর¯্রােতা বড় বড় নদী পাড়ি দিয়ে জীবিকা ও চিকিৎসার জন্য রাজধানীতে আসতে হতো। আমি ’৯৬ সালে বরিশালের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগের জন্য শিকারপুর-দোয়ারিকা সেতু নির্মাণ করে দেই এবং কীর্তনখোলার ওপর ব্রিজ নির্মাণের কাজ হাতে নেই।’ গাবখান ব্রিজও তার সরকারের আমলে নির্মিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নেও একের পর এক সেতু করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিরোজপুরের বেকুটিয়ায় কচা নদীর ওপর বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু উদ্বোধনের ফলে ঢাকার সঙ্গে পিরোজপুরের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। তিনি বলেন, জনগণ পিরোজপুরের তাজা পেয়ারা এবং আমড়া রাজধানীতে বসেই পাবে। এই অঞ্চলের শীতল পাটিও বিখ্যাত। জেলার বাসিন্দারা অন্যান্যের পাশাপাশি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন করতে পারে, যা জেলা ও অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তনে ব্যাপক অবদান রাখবে। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। সড়ক ও জনপথ বিভাগ ৮৯৪.০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু’ নির্মাণ করে। চীন সরকার সেতুটির জন্য প্রকল্প সহায়তা হিসেবে ৬৫৪ দশমিক ৮০ কোটি এবং বাংলাদেশ সরকার ২৩৯ দশমিক ৮০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। সেতুটি কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, মংলা সমুদ্রবন্দর এবং দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা করবে। অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বক্তৃতা করেন। সড়ক পরিবহন ও সহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী অনুষ্ঠানে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন। প্রকল্পের ওপর একটি ভিডিওচিত্রও অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। এ উপলক্ষে বঙ্গমাতা সেতু এলাকায় পশ্চিম এবং পূর্বপাড়ে দুটি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। পশ্চিমপাড়ে পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ও পূর্বপাড়ে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী পিরোজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী পরে প্রকল্প এলাকার জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য সরকারের পদক্ষেপের অংশ হিসেবে পায়রা বন্দরের উন্নয়নের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থনৈতিক অগ্রগতি বাড়াতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলাকে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে আমরা আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন করছি’। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ৭১৮ কিলোমিটার মহাসড়ককে চার লেন বা তার বেশি উন্নীত করার মাধ্যমে সারা দেশে মহাসড়কের মোট দৈর্ঘ্য ২২ হাজার কিলোমিটারে উন্নীত করেছে, পাশাপাশি ৬শ’ কিলোমিটার মহাসড়ককে ৪-লেন বা তার বেশি লেনে পরিণত করার কাজ চলছে। তিনি বলেন, সরকার ঢাকায় মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প, গাজীপুর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার র‌্যাপিড বাস ট্রানজিট, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল এবং ১০ লেনের টঙ্গী সেতু নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্প সম্পন্ন হলে আমাদের অর্থনীতি আরও গতি পাবে।
জয়ের রাজনীতিতে আসা নিয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শে সরকার নানা ডিজিটাল উদ্যোগ নিয়েছে। তবে রাজনীতিতে যোগ দেওয়া বা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত একান্তই তার নিজের এবং দেশের জনগণের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। গতকাল রোববার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালকে (এএনআই)-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেখুন, সে এখন একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। তাই এটা তার ব্যাপার। কিন্তু সে দেশের জন্য কাজ করছে। আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগ, এত সব স্যাটেলাইট, সাবমেরিন কেবল কিংবা কম্পিউটার প্রশিক্ষণের মতো এত সব ডিজিটাল ব্যবস্থা তার পরামর্শেই নেওয়া হয়েছে। আপনারা জানেন, সে আমাকে সহযোগিতা করছে। তবে কখনও দল কিংবা সরকারে কোনও পদ পাওয়ার কথা ভাবেনি।’ দলীয় এক অনুষ্ঠানে জয়কে দলের পদ দেওয়ার জন্য কর্মীদের জোরালো দাবি কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এমনকি আমাদের দলীয় সম্মেলনে পর্যন্ত তার জন্য জোরালো দাবি উঠেছিল। তখন আমি তাকে বললাম, মাইক্রোফোনের কাছে গিয়ে বলো, তুমি কী চাও। সে তাই করলো। বললো, এই মুহূর্তে আমি দলে কোনও পদ চাই না। বরং যারা এখানে কাজ করছেন তাদের এই পদ পাওয়া উচিত। কেন আমি একটা পদ দখল করে রাখবো? আমি আমার মায়ের সঙ্গে আছি। দেশের জন্য কাজ করছি। তাকে সহযোগিতা করছি। এটা আমি করে যাবো। সে এভাবেই চিন্তা করে। ফলে এমন নয় যে, আমাকেই তাকে তৈরি করতে হবে কিংবা এটা আমাকেই করতে হবে। সজীব ওয়াজেদ জয়ের কী কর্মীদের চাওয়ার প্রতি সায় দেওয়া উচিত? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা জনগণের ওপর নির্ভর করছে। আর পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি বাংলাদেশে কোনও ইস্যু নয়।
পর্যাপ্ত খাদ্যের মজুত নিশ্চিত করার নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর
রোনা মহামারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রয়েছে। আগামী নভেম্বর মাসে বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করে ‘যেকোনও কিছুর বিনিময়ে’ খাদ্যের মজুত বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে তিনি এ নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এই বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে এ নিয়ে ব্রিফ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, নভেম্বরে বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে। তাই এ নিয়ে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুতের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। চাল আমদানির জন্য যাদের ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ ফেল করতে পারে। এজন্য আগেই কিছু বিকল্প অর্ডার দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সাধারণত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণ করে সরকার। তবে এবছর নভেম্বরে সারা বিশ্বে খাদ্য সংকটের আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিও নভেম্বর পর্যন্ত চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই কর্মসূচি চালানোর জন্য অতিরিক্ত আরও ৫ থেকে ৬ লাখ টন চাল প্রয়োজন হবে। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, পাঁচটি দেশ থেকে খাদ্য আমদানি করা হবে। দেশগুলো হলো, রাশিয়া, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, ভারত ও থাইল্যান্ড। রাশিয়া থেকে খাদ্য আমদানিতে কূটনৈতিক কোনও সমস্যা নেই বলেও জানান তিনি। দেশে এখন ২০ লাখ টনের বেশি চাল মজুত আছে; যা ‘সন্তোষজনক’ বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, যাই হোক, প্রধানমন্ত্রী সবশেষে বলেছেন, খাদ্যের দিক থেকে আমরা নিরাপদে আছি। দেশে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রার আমন ফসল রোপণ বিঘিœত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি জানান, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করেও পর্যাপ্ত পানি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি নেই। দেশের অন্তত ১২ থেকে ১৩টি জেলার ডিসি মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে ফোন করে এ তথ্য জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ফলে বাজারে ইতোমধ্যে চালের দাম কমেছে উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘খবর পেয়েছি এই কর্মসূচির সুফল ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। এ কারণে বাজার থেকে কিছু বড় বড় পার্টি উঠে গেছে। আর এর ফলে বাজারে চালের সরবরাহও এখন ভালো।’
ভারত বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু: প্রধানমন্ত্রী
ভারত বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  রোববার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালকে (এএনআই)-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন তিনি। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর ভারত সফর যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। ৫-৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার দিনের এই রাষ্ট্রীয় সফরে বিভিন্ন ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হবে। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন এই ভারত সফরকে সামনে রেখে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছে এএনআই। সাক্ষাৎকারে প্রধামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আমাদের ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় তাদের অবদানের কথা সবসময় স্মরণ করি। এমনকি ১৯৭৫ সালে যখন আমার পরিবারের সব সদস্যকে হারালাম, তখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী (ইন্দিরা গান্ধী) আমাদেরকে ভারতে আশ্রয় দিয়েছিলেন। তাছাড়া আমরা ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী এবং আমি সবসময় আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বকে গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দেই।’ তিস্তার পানি বণ্টন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, এটি এখনও ঝুলে আছে। ভারত থেকে আমাদের এখানে পানি আসে, তাই তাদের আরও উদারতা দেখাতে হবে। এতে উভয় দেশই লাভবান হবে। পানির অভাবে কখনও কখনও আমাদের জনগণও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে তিস্তায় পানি না পেয়ে আমরা ফসল রোপণ করতে পারিনি। আরও নানা সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে এই বিষয়টির একটি সমাধান হওয়া উচিত। আমরা দেখেছি, এই সংকটের সমাধানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ রয়েছে। তবে সমস্যাটি আপনাদের দেশেই। আশা করি এর সমাধান হবে এবং সেটি হওয়া উচিত। ভারত ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কে ভারসাম্য রাখা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অত্যন্ত পরিষ্কার। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে জোরালোভাবে এটা বলেছিলেন। আমরা তার আদর্শ অনুসরণ করি। আমাদের উচিত জনগণকে নিয়ে কাজ করা। তাদেরকে কীভাবে আরও ভালো একটি জীবন উপহার দেওয়া যায়, তাদের জীবনমান কীভাবে আরও ভালো করা যায়।’ রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার যুদ্ধকে কেন্দ্র করে পূর্ব ইউরোপে আটকে পড়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগের প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি সত্যিই প্রধানমন্ত্রীকে (নরেন্দ্র মোদি) ধন্যবাদ জানাতে চাই যে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে এই যুদ্ধের সময় আমাদের অনেক শিক্ষার্থী আটকে পড়েছিল। তারা আশ্রয়ের জন্য পোল্যান্ডে গিয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় শিক্ষার্থীদের সরিয়ে নেওয়ার সময় আপনি তাদেরও নিয়ে এসেছিলেন। শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফিরেছে। আপনি স্পষ্টতই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করেছেন। এই উদ্যোগের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।’ শেখ হাসিনা বলেছেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশের জন্য ‘বড় বোঝা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে তার সরকার। এই সমস্যা সমাধানে প্রতিবেশী ভারত মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লক্ষাধিক রোহিঙ্গা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তার ভাষায়, ‘রোহিঙ্গারা আমাদের জন্য একটি বড় বোঝা। ভারত বড় একটি দেশ, সেখানে থাকার জায়গা অনেক হলেও কিন্তু দেশটিতে খুব বেশি রোহিঙ্গা নেই। আর আমাদের দেশে তাদের সংখ্যা ১১ লাখ। এই সমস্যাটি আপনারা মিটমাট করতে পারেন। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছি। তাদেরও কিছু করণীয় আছে, যেন রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরতে পারে। বাংলাদেশ সরকার মানবিক দিক বিবেচনা করে লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের দেখভাল করছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছি। সব ধরনের সহায়তা দিয়েছি। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে করোনা মহামারীর সময়ে টিকার আওতায় এনেছি। কিন্তু তারা আর কতদিন এখানে থাকবে? তারা এখন ক্যাম্পে অবস্থান করছে। আমাদের পরিবেশকে বিপজ্জনক করে তুলছে। রোহিঙ্গাদের কিছু অংশ মাদকপাচার, অস্ত্র ব্যবসা, নারী পাচারসহ নানা ধরনের সহিংসতায় জড়িয়ে পরিবেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। তারা যত দ্রুত নিজ দেশে ফিরবে, আমাদের ও মিয়ানমারের জন্য তত মঙ্গল হবে। আমাদের দিক থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। তাদের প্রত্যাবাসনে আসিয়ান, ইউএনওসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। এ ক্ষেত্রে ভারত বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে।’