নিজস্ব প্রতিবেদক :
সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশে আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। উপকূলীয় ১৩ জেলায় মারাত্মক এবং দুই জেলায় হালকাভাবে আঘাত হানবে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বরগুনার পাথরঘাটা ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং নিয়ে আজ সোমবার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান দুর্যোগ এ ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। তিনি জানান, সিত্রাং সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশে আঘাত হানবে। ভারতে আঘাত হানার সম্ভাবনা নেই। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এটি আঘাত হানবে। আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে অতিক্রম করবে উপকূল। মূল আঘাত হানবে বরগুনা সদর, পাথরঘাটা এবং পটুয়াখালীর কলাপাড়ায়। যে ১৩টি জেলায় সিত্রাং মারাত্মক আঘাত হানবে তার মধ্যে রয়েছে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী এবং ফেনী। অর্থাৎ চট্টগ্রাম, খুলনা এবং বরিশাল বিভাগের বেশিরভাগ জায়গায় এটি আঘাত হানবে এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের দ্বীপ অঞ্চলগুলো বিশেষ করে মহেশখালী, সন্দীপ এগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এসব অঞ্চলে লোক সরানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান দুর্যোগ এ ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। তিনি বলেন, সিত্রাং সিভিয়ার সাইক্লোন হিসেবে রূপ নিয়েছে। সন্ধ্যার মধ্যে উপকূলে আঘাত হানবে। কেন্দ্র আঘাত করবে মঙ্গলবার ভোরে। এটা পুরোপুরি বাংলাদেশ ভূখ-ে আঘাত হানবে। ভারতে আঘাত করার কোনো সম্ভাবনা নাই। প্রতিমন্ত্রী জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে বরগুনার পাথরঘাটা ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দুর্যোগ এ ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, উপকূলে সাত হাজার ৩০ শেল্টার প্রস্তুত করা হয়েছে। সকাল থেকেই মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হচ্ছে। আমরা আম্ফানে ২৪ লাখ সরিয়েছিলাম। এবার ২৫ লাখ সরানোর লক্ষ্য রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ৭ হাজার ৩০ টির মতো সেল্টার (আশ্রয়কেন্দ্র) প্রস্তুত করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ নেওয়ার কাজ সকাল থেকে শুরু হয়েছে। এ মুহূর্তে এটা আরও জোরদার করা হচ্ছে। আশাকরি, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার শতভাগ মানুষকে সরিয়ে আনতে পারবো। এরইমধ্যে আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের প্রতিনিধিদের বলা হয়েছে- তারা যেনো সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ডকে সম্পৃক্ত করে। দুর্গম এলাকা থেকে লোকজন সরিয়ে আনার ক্ষেত্রে তারা যেন সহযোগিতা করে। তারা এতে সম্মতি দিয়েছে- বলেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস ও রেড ক্রিসেন্টের ভলান্টিয়াররা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে কাজ করছে। কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ আরও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় যারা আছে তারা তাদের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের দিক-নির্দেশনা দিয়েছে। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রতিমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয় ১৫ জেলার কত মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হবে? এর উত্তরে তিনি বলেন, আম্ফানে আমরা ২৪ লাখ ৭৬ হাজার মানুষকে সেল্টার দিয়েছিলাম। এবার আমরা ২৫ লাখের মতো টার্গেটে রেখেছি। কতজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সব তথ্য এখনো পাইনি। এখনো এটা যোগ করিনি। সুতরাং এখনি বলা যাবে না। আমরা কন্ট্রোলরুমে গিয়ে ঘণ্টায় ঘণ্টায় যোগ করে জানাবো। ফেসবুকে প্রচার চালানো হচ্ছে যে সিত্রাং সিডরের মতো আঘাত হানবে। এটি সিডরের মতো ধ্বংসাত্মক কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সিডর ছিল সুপার সাইক্লোন। এটা সিভিয়ার সাইক্লোন। ঘণ্টায় এর বাতাসের গতিবেগ ৮০-১০০ কিলোমিটার। এটি সিডরের মতো মারাত্মক না। আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন একজন মানুষও যেন মারা না যায়, সেটা হবে বড় সফলতা। পাশাপাশি গবাদি পশুগুলোকেও আশ্রয়কেন্দ্রে আনতে বলা হয়েছে। কি পরিমাণ খাদ্য ও অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা প্রতি জেলায় ৫ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দিয়েছি। ড্রাই কেক এবং ড্রাই বিস্কুট পাঠিয়েছি। চাল, তেল, লবণ, চিনি, গুড়ামসলা পাঠিয়েছি। যাতে রান্না করে খাবার খেতে পারেন। বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ সর্বাত্মক রক্ষা করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিয়েছে বলেও জানান ডা. মো. এনামুর রহমান।