নিজস্ব প্রতিবেদক :
পর্যটননগরী কক্সবাজারের উন্নয়নে মাস্টার প্ল্যান করার নির্দেশ দিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কক্সবাজার এত চমৎকার একটা জায়গাÑএটা পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা একান্তভাবে অপরিহার্য। কক্সবাজারবাসীর কাছে আমার একটা অনুরোধ থাকবে, যত্রতত্র কোনও স্থাপনা করবেন না। কক্সবাজারে আমরা অনেকগুলো প্রকল্প নিয়েছি। একটা মাস্টার প্ল্যান করার নির্দেশ দিয়েছি পুরো কক্সবাজার ঘিরে। আমরা চাই, এর উন্নয়নটা যাতে পরিকল্পিতভাবে হয়। আজ বুধবার কক্সবাজারের বীর মুক্তিযোদ্ধা মাঠে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নবনির্মিত বহুতল ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। কক্সবাজার বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক করার কাজ চলমান রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজার বিমান বন্দরই হবে আন্তর্জাতিক আকাশ পথে রিফুয়েলিংয়ের জায়গা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত দূরদর্শী নেতৃত্ব ছিল, আপনারা দেখেন, ১৯৭৪ সালে তিনি সমুদ্রসীমা আইন করেন। এমন কী জাতিসংঘও কিন্তু তখন করেনি। জাতিসংঘ করেছে ৮২ সালে। কিন্তু ১৯৭৪ সালে এই বিশাল সমুদ্রে আমাদের যে অধিকার রয়েছে, সে অধিকার নিশ্চিত করবার জন্য জাতির পিতা এই আইনটি করে দিয়ে যান। আমাদের দুর্ভাগ্য ৭৫ সালে নির্মমভাবে তাকে হত্যার পর যারা ক্ষমতা দখল করেছিল, তারা এই সমুদ্রসীমায় আমাদের অধিকার নিয়ে কখনোই কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। শেখ হাসিনা বলেন, ’৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর আমি প্রথম এই উদ্যোগটা গ্রহণ করি। কিন্তু এটা নিতে গেলে অনেক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে কাজ করতে হয়। আমরা অনেক দূর কাজ করে যাই। কিন্তু এর পরে ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত আমরা দেখেছি, তখনও কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ২০০৮ এর নির্বাচনে সরকারে এসে আমরা আবার উদ্যোগ নিই। সমুদ্রসীমায় আমাদের যে অধিকার, সে অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। এখন এই সমুদ্র সম্পদকে ব্যবহার করে আমাদের অর্থনীতিতে যাতে অবদান রাখা যায়, সে ব্যবস্থাটা আমরা করতে চাই। তাই আমরা সুনীল অর্থনীতি গ্রহণ করেছি। এর ভিত্তিতে উন্নয়ন আরও তরান্বিত করতে চাই। বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আমাদের এই যে বিশাল সমুদ্রসীমা রয়েছে, এটাতে পর্যটনের ক্ষেত্রটা আরও প্রসারিত করা, আবার দেশীয় পর্যটকদের জন্য যেমন সুযোগ সৃষ্টি করা, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্যও আকর্ষণীয় করা, সেই উদ্যোগটাই আমরা নিতে চাচ্ছি। তাছাড়া এটা আন্তর্জাতিক এয়ার রুটে পড়ে। আমরা কক্সবাজার যে বিমানবন্দর সেই বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার কাজ করছি। এই বিমানবন্দরটা যখন হবে তখন আপনারা জানেন যে, আজকে যারা পশ্চিমা দেশ থেকে প্রাচ্যের দেশে যায়, তারা কিন্তু এই কক্সবাজার থেকে রিফুয়েলিং করবে। তিনি বলেন, কারণ রিফুয়েলিং কিন্তু একেক সময় একেকটা দেশ অগ্রাধিকার পায়। একসময় হংকং ছিল। এরপরে আমরা দেখেছি থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর। এখন দুবাই। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কক্সবাজারই হবে আন্তর্জাতিক আকাশ পথে রিফুয়েলিংয়ের একটা জায়গা। তার ফলে এখানে অনেক কাজ হবে। আমরা ক্রিকেট স্টেডিয়াম করেছি। সেখানে ফুটবল স্টেডিয়াম হবে। সেখানে অন্যান্য খেলাধুলার পুরো ব্যবস্থাটা নেওয়া হবে। যেকোনও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট এখানে যাতে হতে পারে সে ব্যবস্থাটা আমরা নিচ্ছি। কক্সবাজার প্রান্তে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নতুন ভবনের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
কক্সবাজার জেলার সবচেয়ে আধুনিক কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) নতুন ১০ তলা ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার সকাল ১১টার দিকে গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নিয়ে এই ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। কক্সবাজারে বাহারছড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মাঠে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এরই মধ্যদিয়ে দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিজ কার্যালয়ে যাত্রা শুরু হয়েছে। এর আগেই আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ভবনটির পুরো কাজ শেষ করে বুঝিয়ে দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কক্সবাজারের পর্যটন, সমুদ্র সম্পদ ও ব্যবসা-বাণিজ্যকে ঘিরে সরকারের বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এই পরিকল্পনার ভেতরে ২০১৬ সালে কক্সবাজারে যাত্রা শুরু করে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)। অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন কউক চেয়ারম্যান লেফট্যানেন্ট কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি, একই মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লাহ খন্দকার। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ কানিজ ফাতেমা মোস্তাক, জেলা প্রশাসক মো. মানুনুর রশীদ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান প্রমুখ। কউক চেয়ারম্যান জানান, নানা সংকট-সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে ৬ বছরের মধ্যে কউক নিজস্ব ভবনের কাজ শেষ করতে পেরেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টায় কউকের ভবনসহ বড় উন্নয়ন কাজগুলো সম্ভব হচ্ছে। তিনি বলেন বলেন, সরকার কউক ভবন নির্মাণের জন্যে ১ দশমিক ২১ একর জমি বরাদ্দ দেয়। এরপর ২০১৭ সালে এই জমিতে ১০ তলা স্থায়ী কার্যালয় নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১১৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এনডিই লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি বাস্তবায়ন করেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর ৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বেঁচে গেছে। ইতোমধ্যে এই টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে জানান কউক চেয়ারম্যান ফোরকান আহমেদ। কউক চেয়ারম্যান ফোরকান আহমেদ জানান, প্রাক্কলিত মূল্য থেকে কয়েকটি আইটেমে অতিরিক্ত খরচ কর্তন করে এই টাকা বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। এতে কাজের গুণ ও মানের কোনো সমস্যা হয়নি।
সর্বশেষঃ
কক্সবাজারের উন্নয়নে মাস্টার প্ল্যান করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
-
দৈনিক আইন বার্তা
- আপডেট সময়ঃ ০৭:৩৭:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ মে ২০২২
- ৩২১ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ