নিজস্ব প্রতিবেদক :
কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার নারী পর্যটক সাহায্য চেয়ে জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করেও সাড়া পাননি বলে যে অভিযোগ করেছেন তা অস্বীকার করেছে পুলিশ। কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. হাসানুজ্জামান দাবি করেছেন, ওই নারী সাহায্য চেয়ে ৯৯৯-এ ফোন করেননি। ওই নারী পর্যটকের অভিযোগ, গত বুধবার রাতে কক্সবাজারের লাবণী পয়েন্ট থেকে তুলে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করা হয়। তখন জিম্মি করা হয় তার স্বামী ও সন্তানকে। ভুক্তভোগী ওই নারী অভিযোগ করেন, বিপদে পড়ে পুলিশের জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করেও তিনি কোনো সহায়তা পাননি। পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) পদের এক কর্মকর্তা তাকে থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তিনি র্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। র্যাবই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে মাঠে নামে। গতকাল শুক্রবার কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ভুক্তভোগী নারী ও তার স্বামী মাঝে মাঝেই কক্সবাজার আসেন। গত চার মাসে তারা তিন থেকে চারবার কক্সবাজার এসেছেন। তারা ঘন ঘন কক্সবাজার কেন আসেন বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তারা এর আগেও হোটেলে থাকার সমস্যা নিয়ে থানায় অভিযোগ করেছিলেন। অভিযোগের ভিত্তিতে থানা তদন্ত করে দেখে ওই নারীর অভিযোগ সঠিক নয়। এসপি বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় একজন অভিযুক্ত ওই নারীর পূর্ব পরিচিত। তাদের মধ্যে কী নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল, অন্য কোনো বিষয় ছিল কি না, এসব বিষয় নিয়ে পুলিশ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করছে। ৯৯৯ এ ফোন করার বিষয়ে এসপি বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি ধর্ষণের সময় কিংবা ওইদিনে তারা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেননি। ৯৯৯-এ যে কেউ ফোন করলে সেটি রেকর্ড থাকে। আমি নিজে ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে কথা বলেছি ও তার স্বামীর সঙ্গে কথা বলেছি, তারা বলেছেন ৯৯৯-এ ফোন করেননি। থানার অফিসারদের সঙ্গেও কথা বলেছি, তারাও জানিয়েছেন ৯৯৯-এ নারী ও তার স্বামী কেউ ফোন করেননি। ঘটনার সময় দায়িত্বরত থানার ডিউটি অফিসারও জানিয়েছেন, এমন ঘটনায় ৯৯৯ থেকে থানায় কোনো কল আসেনি। তার স্বামী বলেছেন, তিনি একটি সাইনবোর্ডে র্যাবের নম্বর দেখে সেখানে ফোন করেন। এসপি হাসানুজ্জামান আরও বলেন, ভুক্তভোগী নারী যেভাবে বর্ণনা করেছেন ঠিক সেভাবেই নথিভুক্ত করে আমরা মামলা নিয়েছি। ধর্ষণের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত ও ডাক্তারি পরীক্ষা প্রয়োজন। এরপর বলা যাবে ধর্ষণের বিষয়টি। এর আগে বেসরকারি একটি টেলিভিশনের লাইভ টক শোতে প্রশ্ন করা হলে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ৯৯৯-এ কল করা হলে তার কের্ড থাকে। এ ধরনের অভিযোগ বিষয়ে কোনো কল ৯৯৯-এ আসেনি। ওই নারী প্রথমে তার স্বামীকে ফোন করেন। এরপর তারা র্যাবকে ফোন করলে তাকে উদ্ধার করা হয়। গত বুধবার রাত ২টার দিকে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোনের জিয়া গেস্ট ইন নামের হোটেল থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করা হয়। ওই নারী অভিযোগ করেন, ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজারে বেড়াতে যান তিনি। ওঠেন শহরের হলিডে মোড়ের একটি হোটেলে। সেখান থেকে বিকেলে যান সৈকতের লাবনী পয়েন্টে। সেখানে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগলে কথা-কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে সন্ধ্যার পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার আট মাসের সন্তান ও স্বামীকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়। এ সময় আরেকটি অটোরিকশায় ওই নারীকে তুলে নেয় তিন যুবক। পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে তিনজন। এরপর তাকে নেওয়া হয় জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে। সেখানে আরেক দফা তাকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করে ওই তিন যুবক। ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে জানিয়ে কক্ষ বাইরে থেকে বন্ধ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে তারা। পরে খবর পেয়ে র্যাব-১৫ কক্সবাজারের একটি দল ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠায়। পরদিন গত বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ওই নারীর স্বামী বাদী হয়ে মামলা করেন। এ ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তিনজনকে শনাক্তের কথা জানিয়েছে র্যাব-১৫। এ ছাড়া রিয়াজ উদ্দিন ছোটন (৩৩) নামে এক হোটেল ম্যানেজারকে আটক করা হয়েছে।