নিজস্ব প্রতিবেদক :
কক্সবাজারের ঝিলনজা, সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্টসহ সমুদ্রসৈকতের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে দেওয়া স্থিতাবস্থা (স্ট্যাটাস-কো) প্রত্যাহার করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেননি আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। ফলে সমুদ্রসৈকতের নির্ধারিত সীমানা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কোনো বাধা রইলো না। সমুদ্রসৈকতের অবৈধ স্থাপনার পক্ষে করা আপিল আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে বুধবার আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহীমের চেম্বার জজ আদালত এ আদেশ দেন। আদালতে আজ আপিল আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট অজিউল্লাহ। অন্যদিকে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। গত ১৯ এপ্রিল কক্সবাজারের ঝিলনজা, সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্টসহ সমুদ্রসৈকতের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে দেওয়া স্থিতাবস্থা প্রত্যাহার করে নিয়ে আদেশ দেন হাইকোর্ট। জারি করা রুল ও আদালত অবমাননার আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে রুল খারিজ করে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, ২০১১ সালের ৭ জুন মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সমুদ্রসৈকতের অবৈধ স্থাপনা তৈরি বন্ধ ও স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে আদেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রুল জারি করেন। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারে সমুদ্রতীর এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রকল্প নির্মাণ বন্ধ রাখতে নির্বাহী প্রকৌশলী তানভির সাইদ আহেমেদকে লিগ্যাল (আইনি) নোটিশ পাঠানো হয়। হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে এ নোটিশ পাঠিয়েছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। এরপর কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) তলবে উপস্থিত হয়ে বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ওপর হাইকোর্টের স্থিতিবস্থা থাকায় কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছি না। এ পর্যায়ে আদালত অবমাননার অভিযোগ শুনানি নিয়ে রুল খারিজ করে স্থাপনা উচ্ছেদের ওপর স্থিতাবস্থা প্রত্যাহার করে নেন আদালত। ফলে এখন সমুদ্রসৈকতের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আর কোনো বাধা রইলো না। আইনজীবী আদালতের শুনানিতে বলেন, স্থানীয় প্রশাসন, মেয়রের যোগসাজশে দোকান মালিকদের থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়ে তারা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আর সরকারে কোষাগারে দোকানপ্রতি কয়েক হাজার টাকা জমা দিয়েছে। মনজিল মোরসেদ জানান, আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে সৈকত এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অক্ষুণœ রাখতে ও কক্সবাজারের ঝিলনজা মৌজায় নির্মিত স্থাপনার প্রকল্প বন্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল। ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়াই সংশ্লিষ্টদের প্রতি আদালত অবমাননার অভিযোগে আবেদন করা হয়। নোটিশে বলা হয়, ১৯৯৯ সালে কক্সবাজার-টেকনাফ সৈকত এলাকার ঝিলনজা মৌজাকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ হয়। এরপর হোটেল-মোটেল জোন এলাকার কিছু স্থাপনা অপসারণের নির্দেশনা দিলে হোটেল মালিকরা রিট করলে তা খারিজ হয়। একই সঙ্গে পাবলিক ট্রাস্ট ঘোষণা করে সমুদ্রসৈকত রক্ষার নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। পরবর্তীতে আপিল হলে তাও খারিজ হয়। এছাড়া তিনটি রিভিউ পিটিশন দায়ের করলে খারিজ হয় তাও। অন্যদিকে ২০১১ সালের ৭ জুন অপর এক রায়ে কক্সবাজার সৈকত এলাকার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য রক্ষার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ অবস্থায় স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সমুদ্রতীরে শত শত কোটি টাকার নির্মাণকাজের একটি প্রকল্প প্রণয়ন করে। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে কক্সবাজারের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তানভির সাইদ আহমেদকে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায় অনুসারে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ ও সৈকত এলাকার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বজায় রাখার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধের অনুরোধ জানানো হয়।