• বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:০৬ অপরাহ্ন
  • ই-পেপার
সর্বশেষ
চট্টগ্রামে চলমান-প্রস্তাবিত কার্যক্রম প্রসঙ্গে নানা প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিলেন বাপাউবো বিজিবি-বিএসএফের মহানুভবতায় জিরো পয়েন্টে মা-মেয়ের শেষবিদায় বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন, বিশ্বমিডিয়ায় তোলপাড় ‘মব’ সংস্কৃতির কারণে জাতীয় সম্ভাবনা ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে: মাহফুজ আলম অপারেশন ডেভিল হান্টে আশানুরূপ অস্ত্র উদ্ধার হয়নি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শেখ হাসিনা আইয়ামে জাহেলিয়াতের নমুনা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন: ড. ইউনূস ডিসেম্বরকে লক্ষ্য রেখে জাতীয় নির্বাচনেরই প্রস্ততি নিচ্ছে ইসি দদুর্নীতির বড় অভিযুক্তরা পাশের দেশে আছেন: দুদক চেয়ারম্যান এবারও আসছে তীব্র তাপপ্রবাহ, নেই তেমন প্রস্তুতি লিবিয়ায় দুই গণকবর থেকে ৪৯ অভিবাসী-শরণার্থীর মরদেহ উদ্ধার

কপ ২৬: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির বিশাল ফারাক

Reporter Name / ১৫০ Time View
Update : সোমবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকৃতি তার অনুকূলতা হারিয়েছে। একদিকে উন্নত দেশগুলো নিজেদের দেশে এবং উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোতে কার্বন নিঃসরণে এবং বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে। অথচ নগণ্য ভূমিকা থাকার পরও বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোকে এর সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। অন্যদিকে, এ প্রভাব মোকাবিলায় যে অর্থ ও প্রযুক্তি প্রয়োজন, তা নেই বেশির ভাগ উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশের, যার জন্য তাদের ব্যাপকভাবে বা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করতে হয় সেই উন্নত দেশগুলোর ওপরেই। আবার উন্নত দেশগুলোর মধ্যে এই ক্ষতিপূরণে প্রয়োজনীয় অর্থায়নে কাজ করছে একধরনের অনীহা। সব বিবেচনায় এ যেন এক জলবায়ু পরাধীনতার শৃঙ্খল।
করোনা মহামারীর শুরুতে দাবানলে পুড়েছে আমাজন আর আফ্রিকার হাজার হাজার একর বন। ভারত-জাপানে লু হাওয়ায় প্রভাবে ২০০ জনের বেশি মারা গেছে। সারাবছর জুড়েই একের পর এক সাইক্লোন আঘাত হেনেছে বিভিন্ন উপকুলে। শুধু আফ্রিকা, জাপান আর চীনেই সাইক্লোনে প্রায় ১২০০ লোকের মৃত্যু হয়েছে ২০১৯ সালে। আর বাংলাদেশের মতো অনেক দেশে অকাল বৃষ্টি, বন্যা, সাইক্লোন তো বছর জুড়ে লেগেই আছে।
এদিকে, চলতি বছরের নভেম্বরে বঙ্গোপসাগরে একাধিক নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল। এ নিম্নচাপের যে কোন একটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এবার সেই আশঙ্কাই সত্যি হতে যাচ্ছে। নভেম্বরের মাঝামাঝি দেশে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’। শুক্রবার রাতে বাংলাদেশ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ দলের পক্ষ থেকে এ সতর্কবার্তা দেয়া হয়।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ১৫-১৬ নভেম্বরের ভেতর বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার পরিবেশ আসতে যাচ্ছে। উপযুক্ত পরিবেশ পেলে এটি ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ এ পরিণত হবে, যা ১৮ থেকে ১৯ নবেম্বর উপকূলে আঘাত হানতে পারে। সতর্ক বার্তায় বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ এ সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা আওতায় থাকতে পারে ভারতের ওড়িশা উপকূল থেকে অন্ধ্রপ্রদেশ। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য অঞ্চলগুলো হলো ব্রাহ্মপুর, শ্রীকাকুলাম ও বিশাখাপট্টম।
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে থাকবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা, বাংলাদেশের সুন্দরবন, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা ও পটুয়াখালী উপকূলীয় এলাকাগুলো। পিরোজপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, ভোলাকেও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে হাতিয়া, লক্ষ্মীপুর, ফেনী থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কুতুবদিয়া এবং ভারতের দক্ষিণ অন্ধ্রপ্রদেশের কিছু অংশকে চিহ্নিত করা হয়েছে। পৃথিবীর প্রত্যেকটি অঞ্চলের মানুষ জলবায়ুর পরিবর্তনের আঘাতে এ বছর যখন বিপর্যস্ত, অনেকেই আশা করেছিলেন বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে বিশ্বনেতৃবৃন্দ এবার হয়তো আন্তরিক হয়ে উদ্যোগ নিবে। কিন্তু তারপরও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলো ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য ঝুঁকি প্রশমন ও অভিযোজনের জরুরি অর্থায়নের নিশ্চয়তা এবারও পেল না। শনিবার সম্মেলন অতিরিক্ত সময়ে গড়ালেও অর্থায়নের বিষয়ে কোনো চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তাদের জন্য এবারের সম্মেলনও কার্যত প্রাপ্তি শূন্য একটি আয়োজন। তবে ‘মন্দের ভালো’ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি এসেছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে জীবাশ্ম জ¦ালানির ব্যবহার হ্রাসে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সব দেশ একটি ঘোষণায় সম্মত হয়েছে। টানা ১৪ দিনের দরকষাকষি শেষে শনিবার ‘গ্লাসগো ক্লাইমেট প্যাক্ট’ নামে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হওয়ার কথা কপ২৬ জলবায়ু সম্মেলনের।
সূত্র জানায়, গ্লাসগো ক্লাইমেট প্যাক্টে প্রতিশ্রুত জলবায়ু তহবিলের অর্থ পাওয়ার বিষয়টি কপ২৭ সম্মেলনে অধিকতর আলোচনার জন্য রেখে দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী ধনী দেশগুলো বছরে যে ১০০ বিলিয়ন অর্থায়ন করতে চেয়েছিল, তা ২০২৩ সালের আগে পাওয়া যাবে না বলে সম্মেলন থেকে পরিস্কার বার্তা পাওয়া গেছে। এ অর্থ পেতে ২০২৫ সাল পর্যন্তও লেগে যেতে পারে। একইস সঙ্গে তা কীভাবে, কী উপায়ে পাওয়া যাবে- সেটি নিয়েও এবারের সম্মেলনে বিতর্কের অবসান হয়নি।
এ নিয়ে ক্ষোভ রয়ে গেছে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে। ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশস্বরূপ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর নেতা ও আদিবাসী প্রতিনিধিরা শুক্রবার স্লোগান দিয়ে সম্মেলনস্থল ত্যাগ করেন। সেইসঙ্গে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো এরইমধ্যে কপ২৬-কে ব্যর্থ আখ্যা দিয়ে বিশ্বনেতাদের কঠোর সমালোচনা করেছে। শনিবার বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন শেষমুহূর্তেও বিশ্বকে বাঁচানোর কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করেছে বলে সূত্র জানায়।
কপ২৬ সম্মেলন নিয়ে অবশ্য মোটেই আশাবাদী ছিলেন না তরুণ পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। শনিবার এক টুইটে থুন
বার্গ বলেছেন, কপ২৬ সম্মেলন ব্যর্থ। পুরোটা জনসংযোগের একটি মহড়া। তিনি পরিবেশকর্মীদের সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, গ্রিনওয়াশ (সব কথার সঙ্গে সবুজ জুড়ে দিয়ে সবুজধোলাই করার চেষ্টা) ও গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে এই সম্মেলনকে ‘ভালো’ অগ্রগতিমূলক, আশাবাদী, সঠিক পথে চালিত হওয়ার মতো বিশেষণে আবদ্ধ করার চেষ্টা হবে।
জলবায়ু তহবিল ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর প্রাপ্য। কিন্তু সূত্র জানায়,
উন্নত দেশের মধ্যস্থতাকারীরা জলবায়ু তহবিলের অর্থ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের সরকারের হাতে দিতে চায় না। তারা উন্নয়ন ঋণ হিসেবে বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই সহায়তা দিতে চায়। দরিদ্র দেশগুলোর প্রতিনিধিরা এই বিষয়টিকে নতুন ঋণের বোঝা চাপানোর কৌশল হিসেবে অভিহিত করে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের দাবি, বিনাশর্তে ধনীদের কাছ থেকে তাদের এই অর্থ প্রাপ্য। এক দশক আগেই ধনী দেশগুলো এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু সম্মেলনে দৃঢ়তার সঙ্গে তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণের আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের উদ্যোগে ও যুক্তরাজ্যের আয়োজনে ৩১ অক্টোবর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে শুরু হওয়া এবারের জলবায়ু সম্মেলন শুক্রবার শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে তা শনিবার অতিরিক্ত দিনে গড়ায়। এবারের সম্মেলনে অংশ নেন দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চল এবং তাদের পক্ষে কাজ করা মধ্যস্থতাকারী, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংগঠনের প্রায় ৫০ হাজার প্রতিনিধি। শুরু থেকে আশা করা হচ্ছিল, ধনী দেশগুলোর আরাম-আয়েশের আয়োজনের কারণে কার্বন নিঃসরণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো ঝড়, বন্যা, ক্ষরার প্রভাব কাটিয়ে ওঠা এবং উপকূলীয় জীবনে অভিযোজন ঘটানোর জন্য তাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুত অর্থ পাওয়ার নিশ্চয়তা পাবে।
বাংলাদেশ, মালদ্বীপসহ বিশ্বের উপকূলীয় ও দ্বীপদেশগুলো প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য ধনী দেশগুলোর তহবিল বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি রক্ষার জোর তাগিদ দেয় গ্লাসগো সম্মেলনে। তবে তাদের আহ্বানের কোনো প্রতিফল নেই গ্লাসগো ক্লাইমেট প্যাক্টে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category