নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিপুলসংখ্যক ই-টিআইএনধারী ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করে না। জমি ক্রয়-বিক্রয়, গাড়ি কেনা, ব্যাংক হিসাব খোলাসহ বিভিন্ন সেবা নিতে অনেকেই ই-টিআইএন নিবন্ধন নিয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর রিটার্ন দাখিল করছে না। সিস্টেম থেকে বাতিল করা হয়নি ওসব ই-টিআইএন। তাদের কারো কারো নামে থাকা কর ফাইলও বাতিল করা হয়নি। এমন লাখ লাখ নিষ্ক্রিয় করদাতা বা ই-টিআইএনধারী কর অঞ্চলগুলোর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে নিবন্ধিত ই-টিআইএন সংখ্যা প্রায় ৭৯ লাখ। তার মধ্যে নিষ্ক্রিয় নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৭ লাখ। অর্থাৎ নিবন্ধিত ই-টিআইএনধারীর প্রায় ৩৪ দশমিক ২৩ শতাংশই নিষ্ক্রিয়। ২০২১-২২ করবর্ষে ২৪ লাখ ৯৭ হাজার ৩১৫ রিটার্ন দাখিল হয়েছে। তার মধ্যে ব্যক্তি শ্রেণির ২৪ লাখ ৮৬০টি ও কোম্পানি ২৯ হাজার ৭৮৫টি। নিবন্ধিত ই-টিআইএন হিসেবে বিদায়ি করবর্ষে রিটার্ন দাখিলের হার ৩১ দশমিক ২৩ শতাংশ।। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কর অঞ্চলগুলোর নিষ্ক্রিয় ওসব ই-টিআইএন বাতিল করার কথা বললেও এনবিআর বলছে, ই-টিআইএন সার্ভারে নিবন্ধন বাতিল করার কোনো অপশন বা সুযোগ রাখা হয়নি।
সূত্র জানায়, বর্তমান ই-টিআইএনকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বলা হতো জিআইআর (জেনারেল ইনডেক্স রেজিস্ট্রেশন)। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে রেজিস্টার বইয়ে করদাতার নাম ও তথ্য নিবন্ধন করা হতো। তাতে যে নাম্বার পড়তো সেটাই হতো করদাতার নম্বর। কোনো কারণে করদাতা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলে যাচাই করে ওই নম্বর বন্ধ করে দেয়া হতো। ১৯৯৩ সালে টিআইএন চালু করা হয়। ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ই-টিআইএন (ইলেকট্রনিক ট্যাক্সপেয়ারস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) চালু করা হয়। তারপর থেকে ইনঅ্যাক্টিভ টিআইএন আর নিষ্ক্রিওয় বা বাতিল করা হচ্ছে না। আর সচল ই-টিআইএন ও রিটার্ন এবং নিষ্ক্রিয় বা অকেজো ই-টিআইএন ও কর ফাইল জানতে কর অঞ্চলগুলোকে চিঠি দেয় এনবিআর। কর অঞ্চলগুলো নিবন্ধিত করদাতা, চালু নথি ও নথিস্থ মামলার সংখ্যা এনবিআর পাঠায়। কিন্তু বিপুলসংখ্যক ই-টিআইএন নিয়ে রিটার্ন দাখিল না করলেও ওসব ই-টিআইএন বা কর ফাইল বন্ধ করা হয়নি।
সূত্র আরো জানায়, বিগত ২০১৩ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত নিবন্ধিত ই-টিআইএন সংখ্যা ৭৯ লাখ ছয় হাজার ৯২৬। তার মধ্যে কোম্পানি এক লাখ ৬৮ হাজার ৬২৮টি, ব্যক্তি ৭৭ লাখ ৩৮ হাজার ২৯৮ জন। তবে এপ্রিল পর্যন্ত ব্যক্তি নিবন্ধন ছিল ৭২ লাখ ৪০ হাজার ৯১০টি আর কোম্পানি ছিল এক লাখ ৮১ হাজার ১৮৪টি। তার মধ্যে চালু নথির সংখ্যা ছিল ৩৮ লাখ ৮৫ হাজার ৭১০টি, কোম্পানি ছিল ৮১ হাজার ১৮৪টি। তাছাড়া এপ্রিল পর্যন্ত নথিস্থ (ই-টিআইএন ও কর ফাইল নিষ্ক্রিয়) মামলার সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ ছয় হাজার ৪০৭টি। তার মধ্যে কোম্পানি ৭২ হাজার ৭২৪টি আর ব্যক্তি ২৬ লাখ ৩৩ হাজার ৬৮৩ জন। অর্থাৎ ২৭ লাখ ৬ হাজার ৪০৭টি ই-টিআইএন অকেজো অবস্থায় রয়েছে। আর চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ই-টিআইএন নিবন্ধন নিয়েছে ৭৯ লাখ ৮৮ হাজার ৮২৫টি। যেখানে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত ছিল ৬৫ লাখ ৫০ হাজার ৮৬৪। অর্থাৎ এক বছরে করদাতা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৪ লাখ ৩৭ হাজার ৯৬১ বা ১৮ শতাংশ।
এদিকে এ বিষয়ে একজন কর কমিশনার জানান, যে ঠিকানায় ই-টিআইএন নেওয়া হয়েছে সেখানে চিঠি পাঠালে ফেরত আসে। আবার অনেক করদাতা মারা গেছে, কেউ বিদেশ চলে গেছে, কেউ কোনো কাজে ই-টিআইএন নিয়ে আর রিটার্ন দেয়নি। এভাবে নিষ্ক্রিয় ই-টিআইএন সংখ্যা বেড়ে গেছে। এনবিআর উদ্যোগ নিয়ে সিস্টেম থেকে নিষ্ক্রিয় ওসব ই-টিআইএন বাতিল করতে পারবে।
সর্বশেষঃ
কর অঞ্চলগুলোর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিপুলসংখ্যক নিষ্ক্রিয় ই-টিআইএনধারী
-
দৈনিক আইন বার্তা
- আপডেট সময়ঃ ১০:১৭:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ অক্টোবর ২০২২
- ১০৯ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ