• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫২ পূর্বাহ্ন

কুমিল্লার ঘটনার দায় এককভাবে কোনো রাজনৈতিক দলের নয়: ডিএমপি কমিশনার

Reporter Name / ৩১৫ Time View
Update : শনিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক :
কুমিল্লার ঘটনার দায় এককভাবে কোনো রাজনৈতিক দলকে দেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখন কুমিল্লার ঘটনায় যারা তদন্ত করছেন তারা ভালো বলতে পারবেন (কারা দায়ী)। তবে অতীতের যে বিষয়গুলো আমরা লক্ষ্য করেছি, তাতে ঠিক এককভাবে কোনো রাজনৈতিক দলকে চিহ্নিত করা খুব দুরূহ হবে। শনিবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (এফডিসি) ‘গণজাগরণই পারে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধ করতে’ শীর্ষক ছায়া সংসদ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, এ ঘটনা মূলত ঘটেছে ঢাকার বাইরে। এ ঘটনায় যারা একেবারে তৃণমূলে কাজ করেছে তাদের সঙ্গে কথা না বলে কিছু বলতে পারবো না। তবে রামুর ঘটনা এবং নাসিরনগরের ঘটনায় আমি চট্টগ্রাম বিভাগের ডিআইজি ছিলাম। নাসিরনগরের সহিংসতার ঘটনায় এক সপ্তাহ আমি সেখানে ছিলাম। সেখানে যারা আসামি ছিল, তাদের মধ্যে সব রাজনৈতিক দলেরই সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। ইকবালকে ভবঘুরে ও মাদকাসক্ত বলা হচ্ছে, তার ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছে কিনা এবং সে কী নিজেই ঘটনা ঘটিয়েছে, নাকি কেউ তার মাধ্যমে ঘটিয়েছে- জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমার যে টিম সেখানে আছে তার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি কিছু মানুষের উসকানি সেখানে রয়েছে। সেটা তদন্তে আরও প্রকাশ হবে বলে আশা করছি। মানসিক অসুস্থ হলে যে সে এ ধরনের কাজ করতে পারে না তা কিন্তু নয়। তাকে সহজে ৫০০ টাকা কিংবা একটা মাদক কিনে দিয়েই এ ধরনের ঘটনা ঘটানো আরও সহজ। এ ধরনের মানুষকে ব্যবহার করা আরও সহজ। আমরা কিছু নাম পেয়েছি, শুধু কুমিল্লার ঘটনা না একে কেন্দ্র করে বিভন্ন এলাকা যেমন- চাঁদপুর, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জায়গায় যা ঘটেছে সেখানে আমরা আরও চক্রান্ত বেশি দেখতে পেয়েছি। আমরা প্রযুক্তিগতভাবে কিছু তথ্য-প্রমাণ পেয়েছি, সেগুলো তদন্ত করা হচ্ছে। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, একেবারে সুস্পষ্টভাবে কিছু মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেবো। কুমিল্লার ঘটনায় পুলিশের কোনো দায় আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মনে করি এটা তদন্ত করে দেখা উচিত, বিশেষ করে যখন পবিত্র কোরআন শরিফ আমাদের তদন্ত কর্মকর্তা উদ্ধার করলো, সেটা লাইভে প্রচার হচ্ছিল। সেটা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা উসকে দিয়েছে কিনা সেটার তদন্ত হওয়া উচিত। এ ধরনের কিছু থাকলে তার বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তার এ কাজটি এমনভাবে করা উচিত ছিল যেন কোরআন শরিফের পবিত্রতা রক্ষা পায় এবং এ নিয়ে যাতে অপপ্রচার না হয়। সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্বও তার ছিল। এটি তদন্তে যদি তার কোনো দায় থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভবিষ্যতে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের হামলার আশঙ্কা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের সাম্প্রদায়িক কর্মকা- কখন ঘটবে, ঘটবে কী ঘটবে না তা অনুমান করা খুবই জটিল কাজ। কারণ ফেসবুকে কে কখন একটা স্ট্যাটাস লিখবে এবং সমাজের একটি অংশ মনে হয় বসে থাকে, যেন এ ধরনের একটি পোস্ট হবে আর সাথে সাথে আমরা কাজে লেগে পড়বো। এ ধরনের কাজ কারা ঘটাবে বা ঘটাচ্ছে তাদের চিহ্নিত করা খুবই কঠিন। আপনারা জানেন এ ধরনের প্রযুক্তির যে বিষয় আছে তা ফেসবুক কর্তৃপক্ষের হাতে থাকে না। এ পোস্ট কে দিয়েছে সেটা বের করতে সিঙ্গাপুরে ফেসবুকের অফিসে আমরা পাঠাই। তা যদি তাদের আইন অনুমতি দেয়, তাহলে এ তথ্যসূত্র আমরা জানতে পারি। না হলে আমরা জানতেও পারি না যে এই পোস্ট কোথা থেকে হয়েছে, কে দিয়েছে, এর পেছনে কে বা কারা দায়ী। ফলে আগে থেকে জানাটা খুবই কঠিন। তবে আমরা আশ্বস্ত করতে চাই, সাম্প্রতিক যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তার প্রেক্ষিতে আইজিপিসহ আমরা বসেছি এবং কী করণীয় তা বের করার চেষ্টায় আছি। আমরা থানাগুলোকে দায়িত্ব দিয়েছি। আশা করছি, এখন আর এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না। সাধারণ মানুষের কাছে সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, আপনাদের কাছে সাহায্য চাই, আপনারা যদি একটা স্ট্যাটাসও দেখেন, শেয়ার না করে আমাদের জানাবেন। তাহলে হয়তো আমরা আরেকটি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা থেকে দেশকে রক্ষা করতে পারবো। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এদেশে সব ধর্মের ধর্মীয় অনুষ্ঠান যথাযোগ্যভাবে পালনের ঐতিহ্য রয়েছে। চিরায়ত ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার এই ঐতিহ্যের বিচ্যুতি কোনোভাবেই কাম্য নয়। ধর্মীয় সম্প্রীতির যে মূল মন্ত্রের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, তার ওপর আঘাত মেনে নেওয়া যায় না। তিনি বলেন, সম্প্রতি দুর্গাপূজার সময় যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হয়েছে তাতে আমরা লজ্জিত, ব্যথিত ও মর্মাহত। উগ্রবাদীরা বারবার দায়মুক্তি পাওয়ার কারণে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। উগ্রবাদীরা যেন ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে না পারে সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হলে কারা লাভবান হয় তা উদ্ঘাটন করা জরুরি। শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একার পক্ষে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। এজন্য দরকার গণজাগরণ। এই গণজাগরণের সম্মুখসারিতে থাকবে আজকের এ তরুণরা। ধর্মীয় সহিংসতা রোধে একই সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, নাগরিক সংগঠন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, ইসলামিক স্কলার, মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত, জনপ্রতিনিধিসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধে তিনি সাত দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে-
১. দলমত নির্বিশেষে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে।
২. সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার করে যারা সংঘাত উসকে দিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। একই সঙ্গে ধর্মীয় অবমাননার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে করে দৃশ্যমান শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধে সমাজের বিভিন্ন অংশীজনকে সম্পৃক্ত করে মোটিভেশনাল কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। যাতে তরুণসমাজকে সঙ্গে নিয়ে অসাম্প্রদায়িক কার্যক্রম বেগবান করা যায়।
৪. বেশি বেশি করে আন্তঃধর্মীয় সংলাপ আয়োজনের মাধ্যমে ধর্মীয় ও সামাজিক সম্প্রীতি বৃদ্ধি করতে হবে।
৫. স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে পাড়া-মহল্লা, গ্রামগঞ্জে সমাজভিত্তিক কমিটি গঠন করে সামাজিক জাগরণ তৈরির মাধ্যমে ওয়াচডগের ভূমিকা পালন করতে হবে।
৬. ধর্মীয় সংঘাত সৃষ্টির মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের অশুভ উদ্যোগ চিহ্নিত ও প্রতিহত করতে হবে।
৭. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্ট রেগুলেটরি অথরিটিকে আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
প্রতিযোগিতায় সরকারি দল হিসেবে প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি ও বিরোধী দল হিসেবে কুমিল্লা ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণ করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম, বিপিএম (বার)। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রতিযোগিতার আয়োজক সংগঠন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category