নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশ থেকে দিন দিন কৃষিপণ্যের রপ্তানির পরিমাণ বাড়ছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে কৃষিপণ্য থেকে ১১০ কোটি ৯২ লাখ ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কিন্তু অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসেই (জুলাই ২০২১ থেকে এপ্রিল ২০২২) কৃষিপণ্য রপ্তানি থেকে ১০৪ কোটি ১৪ লাখ ডলার আয় হয়েছে। টাকার হিসাবে তার পরিমাণ ৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি। আর এ ধারা অব্যাহত থাকলে কৃষিপণ্য রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবারো নতুন রেকর্ড গড়বে। গত অর্থবছরে (২০২০-২১) কৃষিপণ্য রপ্তানি এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার আয়ের মাইলফলক ছুঁয়েছিল। ওই সময় বাংলাদেশ থেকে ১০২ কোটি ৮১ লাখ ডলারের কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়। এবার দশ মাসেই ওই মাইলফলক ছাড়িয়ে গেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কৃষিপণ্য রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে এখন পর্যন্ত ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে কৃষিপণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৮২ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। প্রতি বছরের মতো এবারও কৃষিপণ্যের মধ্যে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের রপ্তানি আয়ের হিস্যাই বেশি। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে ২১ কোটি ৫৯ লাখ ডলারের খাবার বিদেশে গেছে। যদিও গত বছর একই সময়ে ওসব পণ্যের ২৪ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের রপ্তানি ছিল। তবে চলতি বছরের রপ্তানি গত বছরের থেকে কম হলেও অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। গত বছর করোনার কারণে শুকনা খাবারের চাহিদা তুঙ্গে ছিল।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্যের রপ্তানি আয় ১০ বছর আগেও ছিল মাত্র ৪০ কোটি ডলার। কিন্তু বিগত ৫ বছর ধরে খাতটির রপ্তানি আয় দ্রুত বাড়ছে। অবশ্য করোনার কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে কৃষিপণ্য খাতের রপ্তানি ৫ শতাংশ কমেছিল। তবে ২০২০-২১ অর্থবছরে খাতটি ঘুরে দাঁড়ায় এবং রপ্তানি আয় ১৯ শতাংশ বাড়ে। যদিও পুরো বছরটিই করোনা মহামারির মধ্যেই কেটেছে। এ বছর করোনা প্রকোপ কমায় কৃষিপণ্য রপ্তানির গতি আরো বেড়েছে। কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের মধ্যে বেশি রপ্তানি হয় রুটি, বিস্কুট ও চানাচুর জাতীয় শুকনা খাবার, ভোজ্যতেল ও সমজাতীয় পণ্য, ফলের রস, বিভিন্ন ধরনের মসলা, পানীয় এবং জ্যাম-জেলির মতো বিভিন্ন সুগার কনফেকশনারি। তার বাইরে চা, শাকসবজি এবং ফলমূলও রপ্তানি হচ্ছে। অপ্রচলিত পণ্য হিসেবে পান-শুপারিসহ অন্যান্য পণ্যও যাচ্ছে। বর্তমানে সবজি, তামাক, ফুল, ফলসহ অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। ১০ মাসে ৮ কোটি ৮২ লাখ ডলারের সবজি রপ্তানি হয়েছে। তাছাড়া ৯ কোটি ৩৭ লাখ ডলারের তামাক, ৩ কোটি ২৭ লাখ ডলারের মসলা রপ্তানি হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, সরকার বর্তমানে কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা দিচ্ছে। প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের পাশাপাশি দেশ থেকে শাকসবজি, আলু ও ফলমূল রপ্তানির সম্ভাবনাও অনেক। সেজন্য রপ্তানির বাধাগুলো দূর করতে গত বছর সরকার নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। শাকসবজি, আলু, ফলমূল ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে রোডম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি শাকসবজি, ফলমূল রপ্তানির জন্য একটি ও আলু রপ্তানির জন্য একটিসহ মোট দুটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করেছে। যা বাস্তবায়ন করে সরকার ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষিপণ্য রপ্তানি আয় ২ বিলিয়ন ডলারে নিতে চায়। এদিকে প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) জানায়, কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য উৎপাদনের সঙ্গে ৫ শতাধিক প্রতিষ্ঠান জড়িত রয়েছে। তার মধ্যে বড় ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান আছে ২০টি। আর রপ্তানি করছে ১০০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান।
অন্যদিকে এ বিষয়ে সবজি, ফল ও অন্যান্য পণ্য রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রুটস-ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফভিএপিইএ) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনসুর জানান, অর্থবছরের শেষ অংশে এসে রপ্তানি দ্রুত বাড়ছে। করোনা পরবর্তী সময়ে চাহিদা বেড়েছে। পুরোনো ক্রেতারা বেশি বেশি অর্ডার করছে। তবে অর্থবছরের শুরুর দিকে জাহাজ ভাড়া ও কন্টেইনার সমস্যার কারণে রপ্তানি কম ছিল। সেটা না হলে সবজি রপ্তানি আরো অনেক বেশি হতো।
কৃষিপণ্য রপ্তানি বিষয়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল জানান, সার্বিকভাবে কৃষিপণ্য রপ্তানি অনেক বহুমুখী হয়েছে। আগে যেখানে ডিংকস এবং জুসের মতো মাত্র কয়েক ধরনের পণ্য রপ্তানি হতো, সেখানে এখন প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য হিসেবে ব্রেড-বিস্কুটসহ অন্যান্য কনফেকশনারির বড় বাজার ধরেছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি আরো প্রচুর নতুন নতুন খাদ্যপণ্যের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করছে। সেগুলোর বাজারও ভালো। করোনা কেটে যাওয়ার পর বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের চাহিদা থাকলেও পণ্য জাহাজীকরণের বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কন্টেইনার সঙ্কটের কারণে একদিকে যেমন ঠিক সময় পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে, অন্যদিকে ভাড়াও অনেক বেশি ছিল।