• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০২:২০ পূর্বাহ্ন

কৃষিপণ্য রফতানিতে দেশের বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনা

Reporter Name / ৩৬৬ Time View
Update : মঙ্গলবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক :
কৃষিপণ্য রফতানিতে বাংলাদেশের বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। মাত্র ৪ বছরের এদেশ থেকে কৃষিপণ্য রফতানি প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। কৃষি অর্থনীতিবিদ এবং কৃষিপণ্য রফতানিকারকদের মতে, আগামী ২/৩ বছরে দেশের কৃষিপণ্যের রফতানি ৬ গুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে ইউরোপ, আমেরিকা ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশসহ ১৪৪টি দেশে বাংলাদেশি কৃষিজাত পণ্য রফতানি হচ্ছে। একসময় দেশীয় পণ্যে প্রবাসীদের রসনা তৃপ্তির জন্য মুড়ি, চানাচুর ও বিস্কুটের মতো পণ্য রপ্তানি শুরু হয়। এখন ওই তালিকায় জ্যাম-জেলি, সস, নানা রকম মসলা, জুস, সরিষার তেল, আচার, সুগন্ধি চালসহ আরো কয়েকটি পণ্য যোগ হয়েছে। আর যেসব দেশে ওসব কৃষিপণ্য রফতানি হচ্ছে সেখানকার মানুষের মধ্যেও তা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কৃষি অর্থনীতিবিদ এবং কৃষিপণ্য রফতানি খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে মাত্র ৫৫ কোটি ডলারের কৃষিপণ্য রফতানি হতো। কিন্তু ২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষিপণ্য রফতানি থেকে আয় এসেছে ১০৩ কোটি ডলার। তাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯ শতাংশেরও বেশি। আর চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) প্রথম দুই মাস জুলাই-আগস্টে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রফতানি থেকে আয় হয়েছে প্রায় ২১ কোটি ডলার বা এক হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এই সময় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ শতাংশেরও বেশি। গত অর্থবছরের একই সময় আয় হয় ১৭ কোটি ৮২ লাখ ডলার। তবে কৃষিপণ্য রফতানির এই বিশাল সম্ভাবনার পথের কাঁটা অশুল্ক বাধা। আর তা দূর করা গেলে রফতানি আয়ে শীর্ষে থাকা তৈরি পোশাক খাতের পরেই কৃষিজাত পণ্যজায়গা করে নিতে পারে।
সূত্র জানায়, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের অভ্যন্তরীণ বার্ষিক বাজার ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। আর তাতে কাজ করছে প্রায় ২০ লাখ মানুষ। ২০০০ সালের দিকে এ খাতের পণ্য রফতানি শুরু হয়। সরকারের ১০ বছরের কর অবকাশ সুবিধা, ২০ শতাংশ নগদ প্রণোদনার ফলে প্রতিযোগী দেশ ভারত, এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোর পাশাপাশি দ্রুত দেশের রপ্তানির বাজার বাড়ছে। তবে সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত না করার কারণে কৃষকের উৎপাদিত বিভিন্ন ফসলের ৩০ শতাংশই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যদি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করা যায় এবং বিদেশে পাঠানো যায় তাহলে দেশে কর্মসংস্থান বাড়ার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা আসবে। বর্তমানে কয়েকটি দেশের সঙ্গে পণ্য রফতানিতে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে সরকার ও ব্যবসায়ীরা সম্মিলিত উদ্যোগ নিলে রফতানির পথ আরো প্রশস্ত হবে। একই সাথে বন্দরে পণ্য পাঠানো সহজ করা, দেশে বিশ্বমানের ল্যাবরেটরি স্থাপন ও রফতানিতে শুল্ক-অশুল্ক বাধাকে গুরুত্ব দেয়া জরুরি। তাহলে দেশে তৈরি পোশাক শিল্পের পর সবচেয়ে সম্ভাবনাময় রফতানির খাত হিসেবে কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য খাতটি উঠে আসবে।
সূত্র আরো জানায়, বিশ্বে খাদ্যজাত পণ্যের বড় বাজার রয়েছে। যার পরিমাণ ৭ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি। সেখানে বাংলাদেশের অংশ মাত্র ১০০ কোটি ডলার। আগামীতে আরো দ্রুত ওই বাজার বাড়বে। সেজন্য পুঁজি সহায়ক বিনিয়োগ নিয়ে ব্যাংকিং খাত এগিয়ে আসা প্রয়োজন। আগামী ২০২৬ সালের পর বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যুক্ত হলে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। ওই সংকট মোকাবেলায় এখনই প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন। বর্তমানে দেশের ৪৭৯টি প্রতিষ্ঠান ১৪৪ দেশে প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রফতানি করছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকারী সংগঠনের (বাপা) সহ-সভাপতি সৈয়দ মো. শোয়েব হাসান জানান, প্রতিবেশী দেশগুলোতে অশুল্ক বাধা দূর করা গেলে এবং প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা পেলে আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে কৃষিপণ্য রফতানি করে ৩০০ কোটি ডলার বা ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি রফতানি আয় করা সম্ভব। আন্তর্জাতিক বাজার আরো বাড়াতে ব্র্যান্ড এবং গুণগত মান উন্নয়নে জোর দেয়া প্রয়োজনভ সেক্ষেত্রে বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির মহাসচিব ড. মিজানুল হক জানান, দেশের কৃষিজাত পণ্য রফতানি কিছুটা বাড়লেও এর পরিবহন ব্যবস্থার ঘাটতির ফলে বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। পচনশীল পণ্য হিসেবে এ খাতে বিশেষায়িত পরিবহন ব্যবস্থা, বিশ্বমানের কৃষিপণ্য উৎপাদনে ফাইটোস্যানিটারি (উদ্ভিদ স্বাস্থ্য সম্পর্কিত) সনদ, গুড অ্যাগ্রিকালচার প্র্যাকটিস (গ্যাপ) নিশ্চিত করে পণ্য তৈরি করতে হবে। পণ্যের গুণগত মান ঠিক রাখতে রফতানিকারক থেকে কৃষক পর্যন্ত নিবিড় যোগাযোগ বাড়ানো এবং মূল্য সংযোজন নিশ্চিত ও সহজ করা প্রয়োজন। দেশে বিশ্বমানের কৃষিজাত পণ্যের শিল্প গড়ে তুলতে আন্তর্জাতিক মান সনদের দেশীয় সংস্থা বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডকে (বিএবি) কাগুজে বাঘ হয়ে থাকলে চলবে না।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category