নিজস্ব প্রতিবেদক :
নির্বাচনে কোনো একটি দলের পক্ষে কাজ না করার জন্য প্রশাসন ও পুলিশকে কঠোর নির্দেশনা দিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন বিষয়ে আপনাদের কর্ম ও আচরণে এমন কিছুর প্রতিফলন হবে না যাতে জনগণ ভাবতে পারেন যে আপনারা কোনো একটি দলের পক্ষে কাজ করছেন। আজ শনিবার নির্বাচন ভবনের অডিটরিয়ামে আয়োজিত জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি) এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিয়ে তিনি এই নির্দেশনা দেন। কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ সাধারণ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। ইভিএম প্রশ্নেও বিতর্ক রয়েছে। আমরা কেবল বিশ্বাস করি না, প্রমাণ পেয়েছি ইভিএম প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্বাচনি সহিংসতা ও কারচুপি নিয়ন্ত্রণ সহজতর। ১৫০ টি আসনে, প্রাপ্যতা সাপেক্ষে, ইভিএম প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। তবে প্রয়োজনে সকল আসনে কিংবা ১৫০ এর অধিক আসনে ব্যালটে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি ও সামর্থ্য আমাদের থাকবে। সে লক্ষ্যে নির্বাহী ও পুলিশ প্রশাসনকেও আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সামর্থ্য ও প্রস্তুতি রাখতে হবে। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশে একই দিনে একই সময়ে ৪২ থেকে ৪৫ হাজার ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। কর্মযজ্ঞটি সহজসাধ্য না হলেও, অসাধ্য নয় এবং সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমে সার্থকভাবেই সাধন করতে হবে। সাবেক এই আইন সচিব বলেন, আমি নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে পুনর্ব্যক্ত করতে চাই প্রতিটি নির্বাচন বিশেষত, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ সাধারণ নির্বাচন বিষয়ে আপনাদের কঠোরভাবে দায়িত্ব-সচেতন হতে হবে। কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন বিষয়ে আপনাদের কর্ম ও আচরণে এমন কিছুর প্রতিফলন হবে না যাতে জনগণ ভাবতে পারেন যে আপনারা কোনো একটি দলের পক্ষে কাজ করছেন। সংবিধান, আইন ও বিধি-বিধানের আলোকে আপনারা দায়িত্ব পালন করবেন এবং প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন। যে কোনো মূল্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখবেন। জনগণের স্বাধীন ভোটাধিকার প্রয়োগের সহায়ক অবাধ, সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করতে হবে। তিনি মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের আরো বলেন, নিরপেক্ষ থেকে আপনারা সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে প্রজাতন্ত্রের কর্মের কাঙিক্ষত মান ও আদর্শকে সমুন্নত রাখবেন। গণতন্ত্রের প্রয়োগ, চর্চা ও বিকাশে স্ব স্ব অবস্থান থেকে অবদান রাখবেন। দায়িত্ব পালনে নূন্যতম শৈথিল্য প্রদর্শন করা যাবে না। নির্বাচন কমিশন তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন ও ক্ষমতা প্রয়োগে কঠোর অবস্থানে থাকবে। সিইসি আরো বলেন, বাংলাদেশ সম্প্রতি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছে। আগামীতে উন্নত রাষ্ট্রে উন্নীত হবে। ফলে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে উপেক্ষা করা যাবে না। সংসদীয় পদ্ধতির বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রশ্নে মতপার্থক্য বা মতের বিভিন্নতা থাকতেই পারে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ বিভাজন নিয়ে সংশয় থাকলেও আমরা আশা করি সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ ও সার্বিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের সদিচ্ছা, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা যে কোনো সংকট ও সংশয় নিরসনে সামর্থ্য রাখে। মতৈক্য ও সমঝোতা হবে। সংকট ও সংশয় কেটে যাবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরও বলেছেন, আগামী বছরের (২০২৩ সাল) শেষ প্রান্তিকে বা ২৪ সালের শুরুতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। লিখিত বক্তব্যে সিইসি বলেন, প্রথমেই আমি আমার নিজ এবং সহকর্মী মাননীয় নির্বাচন কমিশনারদের পক্ষ থেকে উপস্থিত জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের আন্তরিক স্বাগত ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সম্মানিত সিনিয়র সচিব এবং বাংলাদেশ পুলিশের সম্মানিত অতিরিক্ত মহা-পরিদর্শকও উপস্থিত আছেন। আপনাদেরকেও আন্তরিক স্বাগত ও শুভেচ্ছা। আমন্ত্রণপত্রের মাধ্যমেই আপনারা আজকের সভার উদ্দেশ্য অবহিত হয়েছেন। তিনি বলেন, সংবিধান ও বিভিন্ন আইন অনুযায়ী নির্বাচন বছর ধরেই একটি চলমান প্রক্রিয়া। সামেদ নির্বাচন পাঁচ বছর অন্তর অন্তর হয়ে থাকলেও স্থানীয় সরকার বিষয়ক বিভিন্ন নির্বাচন বছর ধরেই, কোনো না কোনো কারণে, চলমান থাকে। যেমন আগামী ১৭ তারিখে জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর জাতীয় সংসদের দুটো উপ-নির্বাচন রয়েছে। সাবেক এ আইন সচিব বলেন, আপনারা জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপাররা রাষ্ট্রের মূল প্রশাসনিক ইউনিট, জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা। পদাধিকারবলে আপনারা জনগণের নিকট সান্নিধ্যে থেকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার ও স্থানীয় সরকার গঠনের গুরুত্ব আপনারা নিশ্চয়ই অনুধাবন করে থাকেন। আজকের সভার উদ্দেশ্য সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ সব নির্বাচন বিষয়ে আপনাদের এবং কমিশনের সমন্বিত দায়িত্ব, ভূমিকা ও করণীয় নিয়ে আলোচনা ও মতবিনিময় করা। আশা করি কার্যকর আলোচনা ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে আজকের সভা সফল ও ফলপ্রসূ হবে। বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।