১০:০৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫ | ই-পেপার

কোম্পানি আইন সংশোধনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ১৪ পরামর্শ

  • দৈনিক আইন বার্তা
  • আপডেট সময়ঃ ০৯:০০:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ১২৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশের বর্তমান কোম্পানি আইন সংশোধন করে নতুন আইন প্রণয়ন এবং প্রাইভেট ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির মালিকানা সংক্রান্ত বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। টপ টেন ফেব্রিক্স অ্যান্ড টেইলার্স লিমিটেডের মালিকানা নিয়ে কোম্পানি আইনে দায়ের করা মামলা নিষ্পত্তি করে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক বেঞ্চ রায়ে এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। আজ বুধবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে রায়টি প্রকাশ করা হয়েছে। রায়ে হাইকোর্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ১৪টি পরামর্শ দিয়েছেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, বর্তমান কোম্পানি আইন ১৯৯৪ অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োগের অনুপযোগী। কোম্পানি আইন ১৯৯৪ এটিকে বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি পুরোটাই কোম্পানি আইন ১৯১৩-ই রয়ে গেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশকে উন্নত দেশের পর্যায়ে নিতে হলে অবশ্যই ১০৯ বছরের পুরোনো কোম্পানি আইন আমূল পরিবর্তন একান্তভাবে অপরিহার্য। আদালত বলেন, প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে কয়েক লাখ প্রাইভেট ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির জন্য একটি মাত্র কোম্পানি আদালত। অসংখ্য কোম্পানি বিরোধের জন্য একটি কোম্পানি বেঞ্চ থাকার কারণে দৈনন্দিন কার্যক্রম চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। দ্রুত বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারলে কোম্পানিগুলো নিজে উন্নত হয়ে দেশকেও উন্নত করতে ভূমিকা রাখতে পারবে। আধুনিক ও উন্নত বিশ্বের আদলে আমাদের কোম্পানি আইনকে ঢেলে না সাজালে উন্নত বিশ্বের পর্যায়ে উঠতে অনেক সময় লেগে যাবে। উন্নত ও যুগোপযোগী কোম্পানি আইনেই উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ে উঠবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে আদালতের ১৪ পরামর্শÑ
অতি দ্রুততার সঙ্গে ভারতের কোম্পানি আইনের আদলে বাংলাদেশের কোম্পানি আইন সংশোধন করে নতুন আইন প্রণয়ন। প্রতি বছর ওই আইনের হালনাগাদীকরণ করার নিমিত্তে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ।
প্রতিটি জেলায় কোম্পানির সংখ্যানুপাতে এক বা একাধিক কোম্পানি আইনের ট্রাইব্যুনাল গঠন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ প্রদান।
প্রতিটি বিভাগে একটি করে কোম্পানি আপিল্যাট ট্রাইব্যুনাল গঠন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে পরামর্শ প্রদান।
কোম্পানি আইনের অধীনে অপরাধসমূহের জন্য বিশেষ ফৌজদারি আদালত প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ প্রদান।
যৌথমূলধনী কোম্পানি ও কার্যসমূহের পরিদপ্তরকে (আরজেএসসি) আধুনিকীকরণ ও আইনি কাঠামো শাক্তিশালীকরণের নিমিত্তে এবং এর সেবার উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ প্রদান।
কর্পোরেট ল কোড বাংলায় প্রকাশ করে প্রত্যেক কোম্পানির অফিসে সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদানে পরামর্শ প্রদান।
প্রত্যেক কোম্পানিতে একজন স্থায়ী আইন কর্মকর্তার পদ সৃজন করে স্থায়ী আইন কর্মকর্তা রাখা এবং কোম্পানি আইনে অভিজ্ঞ একজন আইনজীবীকে পরামর্শক রাখা বাধ্যতামূলক করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে পরামর্শ প্রদান।
প্রতিটি জেলায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন কোম্পানি গঠন, ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন। নিয়মিত প্রতিটি কোম্পানির কর্মকর্তাদেরকে বৎসরে অন্তত একবার ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ বাধ্যতামূলক করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ প্রদান।
প্রতি কোম্পানিতে একজন করে নিরপেক্ষ পরিচালক, কোম্পানি সচিব, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষক নিয়োগ বাধ্যতামূলক করার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ প্রদান।
পরিশোধিত মূলধন পাঁচ কোটি টাকার উপরে হলে প্রত্যেক কোম্পানিতে সার্বক্ষণিক কোম্পানি সচিব রাখা বাধ্যতামূলক করে (যারা আইসিএসবির সদস্য হবে) প্রয়োজনীয় পরিপত্র ইস্যু করতে পরামর্শ প্রদান।
কোম্পানির কার্যালয় যে শহরে নিবন্ধিত, সে শহরে এজিএম বাধ্যতামূলক করে দ্রুত পরিপত্র ইস্যু করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পরামর্শ।
শেয়ারবাজারের আইনের সঙ্গে সংঘাত এড়ানো, কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) অনাহূত পরিস্থিতির অবসান, রিটার্ন দাখিল সহজতর করা ইত্যাদি বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ প্রদান।
এজিএমে বা অন্য কোথাও কোম্পানির পক্ষ থেকে শেয়ারহোল্ডারদের কোনোরূপ উপহার, উপঢৌকন, নগদ অর্থ প্রদান সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করে বিধি প্রণয়ন। এজিএম অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির নিবন্ধন আপনা আপনি বাতিল মর্মে বিধি প্রণয়নের পরামর্শ প্রদান।
লাভ-ক্ষতির হিসাব, উদ্বৃত্তপত্র, রিটার্ন বা করের বিষয় আরজেএসসিতে দাখিল করার বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে বিধি বিধান করার পরামর্শ প্রদান।
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যানকে রায়ের অনুলিপি দ্রুত পাঠাতে বলা হয়েছে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

চট্টগ্রামে মাঠ রক্ষার আন্দোলনে মেয়র শাহাদাতের একাত্মতা ঘোষণা

কোম্পানি আইন সংশোধনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ১৪ পরামর্শ

আপডেট সময়ঃ ০৯:০০:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশের বর্তমান কোম্পানি আইন সংশোধন করে নতুন আইন প্রণয়ন এবং প্রাইভেট ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির মালিকানা সংক্রান্ত বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। টপ টেন ফেব্রিক্স অ্যান্ড টেইলার্স লিমিটেডের মালিকানা নিয়ে কোম্পানি আইনে দায়ের করা মামলা নিষ্পত্তি করে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক বেঞ্চ রায়ে এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। আজ বুধবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে রায়টি প্রকাশ করা হয়েছে। রায়ে হাইকোর্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ১৪টি পরামর্শ দিয়েছেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, বর্তমান কোম্পানি আইন ১৯৯৪ অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োগের অনুপযোগী। কোম্পানি আইন ১৯৯৪ এটিকে বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি পুরোটাই কোম্পানি আইন ১৯১৩-ই রয়ে গেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশকে উন্নত দেশের পর্যায়ে নিতে হলে অবশ্যই ১০৯ বছরের পুরোনো কোম্পানি আইন আমূল পরিবর্তন একান্তভাবে অপরিহার্য। আদালত বলেন, প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে কয়েক লাখ প্রাইভেট ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির জন্য একটি মাত্র কোম্পানি আদালত। অসংখ্য কোম্পানি বিরোধের জন্য একটি কোম্পানি বেঞ্চ থাকার কারণে দৈনন্দিন কার্যক্রম চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। দ্রুত বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারলে কোম্পানিগুলো নিজে উন্নত হয়ে দেশকেও উন্নত করতে ভূমিকা রাখতে পারবে। আধুনিক ও উন্নত বিশ্বের আদলে আমাদের কোম্পানি আইনকে ঢেলে না সাজালে উন্নত বিশ্বের পর্যায়ে উঠতে অনেক সময় লেগে যাবে। উন্নত ও যুগোপযোগী কোম্পানি আইনেই উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ে উঠবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে আদালতের ১৪ পরামর্শÑ
অতি দ্রুততার সঙ্গে ভারতের কোম্পানি আইনের আদলে বাংলাদেশের কোম্পানি আইন সংশোধন করে নতুন আইন প্রণয়ন। প্রতি বছর ওই আইনের হালনাগাদীকরণ করার নিমিত্তে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ।
প্রতিটি জেলায় কোম্পানির সংখ্যানুপাতে এক বা একাধিক কোম্পানি আইনের ট্রাইব্যুনাল গঠন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ প্রদান।
প্রতিটি বিভাগে একটি করে কোম্পানি আপিল্যাট ট্রাইব্যুনাল গঠন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে পরামর্শ প্রদান।
কোম্পানি আইনের অধীনে অপরাধসমূহের জন্য বিশেষ ফৌজদারি আদালত প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ প্রদান।
যৌথমূলধনী কোম্পানি ও কার্যসমূহের পরিদপ্তরকে (আরজেএসসি) আধুনিকীকরণ ও আইনি কাঠামো শাক্তিশালীকরণের নিমিত্তে এবং এর সেবার উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ প্রদান।
কর্পোরেট ল কোড বাংলায় প্রকাশ করে প্রত্যেক কোম্পানির অফিসে সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদানে পরামর্শ প্রদান।
প্রত্যেক কোম্পানিতে একজন স্থায়ী আইন কর্মকর্তার পদ সৃজন করে স্থায়ী আইন কর্মকর্তা রাখা এবং কোম্পানি আইনে অভিজ্ঞ একজন আইনজীবীকে পরামর্শক রাখা বাধ্যতামূলক করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে পরামর্শ প্রদান।
প্রতিটি জেলায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন কোম্পানি গঠন, ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন। নিয়মিত প্রতিটি কোম্পানির কর্মকর্তাদেরকে বৎসরে অন্তত একবার ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ বাধ্যতামূলক করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ প্রদান।
প্রতি কোম্পানিতে একজন করে নিরপেক্ষ পরিচালক, কোম্পানি সচিব, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষক নিয়োগ বাধ্যতামূলক করার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ প্রদান।
পরিশোধিত মূলধন পাঁচ কোটি টাকার উপরে হলে প্রত্যেক কোম্পানিতে সার্বক্ষণিক কোম্পানি সচিব রাখা বাধ্যতামূলক করে (যারা আইসিএসবির সদস্য হবে) প্রয়োজনীয় পরিপত্র ইস্যু করতে পরামর্শ প্রদান।
কোম্পানির কার্যালয় যে শহরে নিবন্ধিত, সে শহরে এজিএম বাধ্যতামূলক করে দ্রুত পরিপত্র ইস্যু করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পরামর্শ।
শেয়ারবাজারের আইনের সঙ্গে সংঘাত এড়ানো, কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) অনাহূত পরিস্থিতির অবসান, রিটার্ন দাখিল সহজতর করা ইত্যাদি বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ প্রদান।
এজিএমে বা অন্য কোথাও কোম্পানির পক্ষ থেকে শেয়ারহোল্ডারদের কোনোরূপ উপহার, উপঢৌকন, নগদ অর্থ প্রদান সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করে বিধি প্রণয়ন। এজিএম অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির নিবন্ধন আপনা আপনি বাতিল মর্মে বিধি প্রণয়নের পরামর্শ প্রদান।
লাভ-ক্ষতির হিসাব, উদ্বৃত্তপত্র, রিটার্ন বা করের বিষয় আরজেএসসিতে দাখিল করার বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে বিধি বিধান করার পরামর্শ প্রদান।
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যানকে রায়ের অনুলিপি দ্রুত পাঠাতে বলা হয়েছে।