০৫:৪১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫ | ই-পেপার

ক্রেতাদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের আচরণ ভালো করার পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
টানা দুদিন দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও তুমুল সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী এবং নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের আচার-ব্যবহার আরও ভালো করার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। তিনি বলেছেন, ব্যবসায়ী ও হকারদের বলতে চাই, ক্রেতাদের সঙ্গে এমন কোনো ব্যবহার করা উচিত নয় যেন শিক্ষার্থীদের মতো কেউ ক্ষুব্ধ হয়। আবার শিক্ষার্থীদের বলতে চাই, ব্যবসায়ীদের সন্তানেরাও স্কুল-কলেজে পড়ালেখা করে। সবাই আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। সবাই মিলে বিষয়টি আমরা সমাধান করি। আজ বুধবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ পরামর্শ দেন। ডিবি পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা কলেজ বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ কলেজ থেকে যারা পাস করেছেন তাদের অনেকেই বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবেন। সারাবছর বেচাকেনা যেটুকুই হোক, তারা ঈদকে কেন্দ্র করে টার্গেট থাকেন। তিনি বলেন, রমজানের মাস, সিয়াম সাধনার মাস। এ মাসটি শিক্ষা দেয়, আমরা যেন সমঝোতায় থাকি। সহমর্মিতায় থাকি। করোনা মহামারির কারণে বছরজুড়েই ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারেননি। অনেকেই এসব মার্কেট থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছেন, তারা আবার নিয়োগও পেয়েছেন, তাদের সংসার এখন ভালো চলবে। ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইকে নিয়েই মার্কেট চলবে। ডিবিপ্রধান বলেন, সোমবার রাতে শুরু হওয়া শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ একপর্যায়ে রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতির জন্ম দেয়। উভয়পক্ষ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। সাংবাদিকসহ পুলিশ সদস্যরাও আহত হন। যে কোনো রাইট কন্ট্রোলিংয়ের ক্ষেত্রে পুলিশের কাজ হলো নিবৃত্ত করা। নিবৃত্ত করতে প্রথমে নেগোসিয়েশনে যেতে হয়। সংঘর্ষ চলাকালে নিউমার্কেট এলাকায় রাবার বুলেট ছোড়ার নির্দেশ দেন এডিসি হারুন অর রশীদ, এ বিষয়ে জানতে চাইলে এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, বিষয়টি তাৎক্ষণিক কী হয়েছিল তা এখনই বলা যাবে না। তবে বিষয়টির দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করেছে পুলিশ: এদিকে গতকাল বুধবার নিউমার্কেটের সামনের সড়কে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার (এডিসি) শাহেন শাহ মাহমুদ বলেন, নিউমার্কেট এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে যা প্রয়োজন পুলিশ তাই করেছে। এডিসি বলেন, বর্তমানে এ এলাকার পরিস্থিতি শান্ত-স্বাভাবিক রয়েছে। ছাত্ররা আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে গেছে, পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও শান্ত থাকতে বলেছি। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে যা যা করণীয় পুলিশ সব করেছে। এতে ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সবাই আমাদের সহযোগিতা করেছেন। তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় অল্প অল্প করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে শুরু করেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে সব দোকানপাট খুলে স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আমরা মনে করি। দুদিনের সংঘর্ষে এ পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমের ১১ জন সাংবাদিক, ঢাকা কলেজের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী এবং ২৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সংঘর্ষের ঘটনায় নাহিদ (১৮) নামের এক কুরিয়ার সার্ভিসকর্মী গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তবে গতকাল বুধবার সকাল থেকে পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত ছিল। নিউমার্কেটসহ আশপাশের এলাকার সব সড়কে যান চলাচলও স্বাভাবিক হয়। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত দোকান খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে মালিক সমিতি। নিউমার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম শাহিন বলেন, এখনো দোকান খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা বিষয়টা পর্যবেক্ষণ করছি। পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হলে দোকান খোলা হবে। তিনি বলেন, গতকাল (গত মঙ্গলবার) আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মার্কেট খুলতে। এখন আমরা দোকান মালিকরা বৈঠকে বসবো। এরপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
অন্যদিকে গতকাল বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি অনুকূলে, যদি এরকম থাকে সব দেখে আমরা মার্কেট খুলে দেবো। তিনি বলেন, আমি ব্যবসায়ীদের বলেছি আজ (গতকাল বুধবার) দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে। সাত কলেজের ছাত্ররা নাকি ঢাকা অচল করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। নুরুল হক নুররাও ওদের সঙ্গে শামিল। ইডেনের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামার কথা বলেছে; বুঝে হোক আর না বুঝে হোক। পরিস্থিতি যাতে আর ঘোলা না হয়, সেজন্য আমি বলেছিলাম আজ (গতকাল বুধবার) দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করে পরিস্থিতি দেখে তারপর দোকান খুলতে। পরিস্থিতি এখন মার্কেট খোলার জন্য অনুকূল বলে মনে করেন কি না- এ প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত অনুকূলে, যদি এরকম থাকে, সব দেখে আমরা মার্কেট খুলে দেবো।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনায় পৃথিবীর সেরাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা

ক্রেতাদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের আচরণ ভালো করার পরামর্শ

আপডেট সময়ঃ ০৮:২৭:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ এপ্রিল ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
টানা দুদিন দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও তুমুল সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী এবং নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের আচার-ব্যবহার আরও ভালো করার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। তিনি বলেছেন, ব্যবসায়ী ও হকারদের বলতে চাই, ক্রেতাদের সঙ্গে এমন কোনো ব্যবহার করা উচিত নয় যেন শিক্ষার্থীদের মতো কেউ ক্ষুব্ধ হয়। আবার শিক্ষার্থীদের বলতে চাই, ব্যবসায়ীদের সন্তানেরাও স্কুল-কলেজে পড়ালেখা করে। সবাই আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। সবাই মিলে বিষয়টি আমরা সমাধান করি। আজ বুধবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ পরামর্শ দেন। ডিবি পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা কলেজ বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ কলেজ থেকে যারা পাস করেছেন তাদের অনেকেই বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবেন। সারাবছর বেচাকেনা যেটুকুই হোক, তারা ঈদকে কেন্দ্র করে টার্গেট থাকেন। তিনি বলেন, রমজানের মাস, সিয়াম সাধনার মাস। এ মাসটি শিক্ষা দেয়, আমরা যেন সমঝোতায় থাকি। সহমর্মিতায় থাকি। করোনা মহামারির কারণে বছরজুড়েই ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারেননি। অনেকেই এসব মার্কেট থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছেন, তারা আবার নিয়োগও পেয়েছেন, তাদের সংসার এখন ভালো চলবে। ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইকে নিয়েই মার্কেট চলবে। ডিবিপ্রধান বলেন, সোমবার রাতে শুরু হওয়া শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ একপর্যায়ে রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতির জন্ম দেয়। উভয়পক্ষ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। সাংবাদিকসহ পুলিশ সদস্যরাও আহত হন। যে কোনো রাইট কন্ট্রোলিংয়ের ক্ষেত্রে পুলিশের কাজ হলো নিবৃত্ত করা। নিবৃত্ত করতে প্রথমে নেগোসিয়েশনে যেতে হয়। সংঘর্ষ চলাকালে নিউমার্কেট এলাকায় রাবার বুলেট ছোড়ার নির্দেশ দেন এডিসি হারুন অর রশীদ, এ বিষয়ে জানতে চাইলে এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, বিষয়টি তাৎক্ষণিক কী হয়েছিল তা এখনই বলা যাবে না। তবে বিষয়টির দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করেছে পুলিশ: এদিকে গতকাল বুধবার নিউমার্কেটের সামনের সড়কে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার (এডিসি) শাহেন শাহ মাহমুদ বলেন, নিউমার্কেট এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে যা প্রয়োজন পুলিশ তাই করেছে। এডিসি বলেন, বর্তমানে এ এলাকার পরিস্থিতি শান্ত-স্বাভাবিক রয়েছে। ছাত্ররা আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে গেছে, পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও শান্ত থাকতে বলেছি। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে যা যা করণীয় পুলিশ সব করেছে। এতে ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সবাই আমাদের সহযোগিতা করেছেন। তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় অল্প অল্প করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে শুরু করেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে সব দোকানপাট খুলে স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আমরা মনে করি। দুদিনের সংঘর্ষে এ পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমের ১১ জন সাংবাদিক, ঢাকা কলেজের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী এবং ২৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সংঘর্ষের ঘটনায় নাহিদ (১৮) নামের এক কুরিয়ার সার্ভিসকর্মী গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তবে গতকাল বুধবার সকাল থেকে পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত ছিল। নিউমার্কেটসহ আশপাশের এলাকার সব সড়কে যান চলাচলও স্বাভাবিক হয়। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত দোকান খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে মালিক সমিতি। নিউমার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম শাহিন বলেন, এখনো দোকান খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা বিষয়টা পর্যবেক্ষণ করছি। পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হলে দোকান খোলা হবে। তিনি বলেন, গতকাল (গত মঙ্গলবার) আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মার্কেট খুলতে। এখন আমরা দোকান মালিকরা বৈঠকে বসবো। এরপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
অন্যদিকে গতকাল বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি অনুকূলে, যদি এরকম থাকে সব দেখে আমরা মার্কেট খুলে দেবো। তিনি বলেন, আমি ব্যবসায়ীদের বলেছি আজ (গতকাল বুধবার) দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে। সাত কলেজের ছাত্ররা নাকি ঢাকা অচল করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। নুরুল হক নুররাও ওদের সঙ্গে শামিল। ইডেনের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামার কথা বলেছে; বুঝে হোক আর না বুঝে হোক। পরিস্থিতি যাতে আর ঘোলা না হয়, সেজন্য আমি বলেছিলাম আজ (গতকাল বুধবার) দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করে পরিস্থিতি দেখে তারপর দোকান খুলতে। পরিস্থিতি এখন মার্কেট খোলার জন্য অনুকূল বলে মনে করেন কি না- এ প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত অনুকূলে, যদি এরকম থাকে, সব দেখে আমরা মার্কেট খুলে দেবো।