নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি এখন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ভবনের সামনের অংশে বেজম্যান্টের বেইজ ভিম ও পিলার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিস্ফোরণে ভবনের নিচ তলা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। তবে ভবনের বেইজম্যান্টের কোন জায়গা থেকে এই বিস্ফোরণের সূত্রপাত সেই জায়গার সন্ধানে নেমেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট। কিন্তু তদন্তে এখনও বিস্ফোরণের সূত্রপাত স্থল খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরজন্য ভবনের বাইরে ও ভেতরে পরিদর্শন করে বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করেছে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট। গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে বিস্ফোরণের ঘটনাস্থলে পরিদর্শন ও আলামত সংগ্রহ শেষে এসব তথ্য জানিয়েছেন সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, আসলে ভবনের কোন জায়গা থেকে বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটেছে মূলত তার সন্ধানেই আমরা আলামত সংগ্রহের কাজ করছি। বিস্ফোরণে ভবনের কোন জায়গাতে সবচেয়ে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে- সেখানের ধোয়া বা বিভিন্ন আলামত খুঁজে বের করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ভবনের কিছু জায়গা আমরা সোয়াভিং করেছি। দেখা গেছে ভবনের গ্রিল ধরে নাড়ালে সেটি নড়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে দেয়ালও নড়তে দেখা গেছে। ঘটনাস্থলে এখনও কোনো বিস্ফোরক দ্রব্য বা মিথেন গ্যাস রয়েছে কি না, তা জানতেও আলামত নেওয়া হয়েছে। এএসপি মিজানুর রহমান আরও বলেন, সংগ্রহ করা আলামতগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হবে। সেগুলো বিধি মোতাবেক পরীক্ষা করে দেখা হবে। পরবর্তীতে বিশেষজ্ঞরা বিস্তারিত জানাতে পারবে। কিন্তু যেখানে মূলত বিস্ফোরণের সূত্রপাত ঘটেছে সেই জায়গাতে আমরা এখনও যেতে পারিনি। অন্যদিকে ভবনটি ঝুঁকিমুক্ত করে অ্যাসেসম্যান্টের কাজ করতে প্রথমেই এর কলামে এমএস (মাইল্ড স্টিল) পাইপ দিয়ে অস্থায়ী প্রপিং সাপোর্ট দেওয়ার কাজ চলছে। ভবনটি স্থিতিশীল করতে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ৪টি প্রপিং সার্পোট দেওয়া হয়েছে, এই কাজ এখনও চলমান রয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি এখনও ঝুঁকিপূর্ণ। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বলছে, এই ভবনটি ভেঙে ফেলা হবে, না কি মেরামত করা যাবে তা জানতে অ্যাসেসম্যান্ট করতে হবে। আর এই অ্যাসেসম্যান্ট করতে কম করে হলেও ৪৫ দিন সময় লাগবে। ৪৫ দিনের আগে কোনোভাবেই ভবনটির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। গতকাল শুক্রবার বেলা ১১ টার দিকে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি পরিদর্শনে এসে এসব তথ্য জানিয়েছেন রাজউকের জোন-৩ ও ৫ এর অথরাইজড অফিসার প্রকৌশলী রঙ্গণ মন্ডল। তিনি বলেন, আশপাশের ভবনগুলো আমরা দেখেছি, সেগুলোতে ভিম-কলামের কোনো ফেইলোর পাওয়া যায়নি। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ভিম-কলামের ক্র্যাক দেখা গেছে। তাই সেখানে প্রপিং সাপোর্ট দেওয়ার কাজ চলছে। গত রাত ৯টা থেকে এখন পর্যন্ত ৪টি কলামের সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে। ভেতরেরগুলো পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে। এই মূহূর্তে সামনের অংশের বেজমেন্টে ব্লকার দিতে হবে। সেটা কংক্রিট দিয়েও হতে পারে। সার্পোট না দেওয়া হলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। গত বৃহস্পতিবারও বুয়েট ও রাজউকের সমন্বয় একটি টিম ভবনটি পরিদর্শন করে গেছেন। তারাও বলেছেন, ভবনটিকে প্রথমেই প্রপিং করতে হবে। সেজন্য আমরা থার্ড পার্টি নিয়োগ করছি। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে তারা ভবনের ক্ষতিগ্রস্ত কলামগুলোকে প্রপিং করে যাচ্ছে। যাতে কোনো ধরনের নতুন দুর্ঘটনা না ঘটে সেই কাজটি চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এই ভবনের কাজ করতে অন্যান্য সংস্থার সঙ্গেও আলোচনা করতে হবে। আমাদের কাজের সুরক্ষার জন্য প্রথমে ভবনের সামনের রাস্তা বন্ধ রাখতে হবে। রাস্তার একটা নির্দিষ্ট অংশ বন্ধ থাকলে আমাদের কাজের সুবিধা হবে, ঝুঁকিও থাকবে না। ভবনটি ভাঙা হবে, নাকি মেরামত করা হবে এ বিষয়ে রাজউকের পক্ষ থেকে গতকাল শুক্রবার একটি সিদ্ধান্ত জানানোর কথা ছিল, যা গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলা হয়েছিল। সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে রাজউকের এই প্রকৌশলী বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের অ্যাসেসম্যান্ট করতে হবে। তারপর আমরা জানতে পারব ভবনটি ভেঙে ফেলা হবে, নাকি মেরামত করা যাবে। এই অ্যাসেসম্যান্ট করতে কম করে হলেও ৪৫ দিন সময় লাগবে। তার আগে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে গতকাল (গত বৃহস্পতিবার) আমাদের কমিটির বুয়েটের টিমের সঙ্গে কথা বলেছিলাম, তারা জানিয়েছে এই ভবনের অ্যাসেসম্যান্টের সময়সীমা। তিনি বলেন, অ্যাসেসম্যান্ট করার সময়সীমা পর্যন্ত ভবন ব্যবহারে সব ধরনের কার্যক্রম অবশ্যই বন্ধ থাকবে। অ্যাসেসম্যান্টের পর যদি ভবনটি ব্যবহারের উপযোগী জানা যায়, সেক্ষেত্রে রাজউকের একটি সার্টিফিকেট লাগবে। তারপরই ভবনটি ব্যবহার করা যাবে। ভবনের নকশা ও নথি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভবন মালিকের কাছ থেকে আমরা একটি নকশা পেয়েছি। কিন্তু এই ভবনটি অনেক পুরাতন তাই এর নথি খুঁজে পেতে সময় লাগছে। নকশার নাম মিললেও তার লে-আউট মিলছে না। পরে গতকাল (গত বৃহস্পতিবার) ভবন মালিক একটি বাণিজ্যিক ভবনের নকশা দিয়েছেন। সেই নকশাটি রাজউকের আবেদন শাখায় জমা আছে। অনুমোদনের পর ইস্যু পেলেও সেটি এন্ট্রি রয়েছে। তবে সেখানে ভবনের অনুমোদন ছিল ৫ তলা। ভবনটি ৭ তলা, তাহলে বাকি দুটি অংশ অবৈধভাবে করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে প্রকৌশলী রঙ্গন মন্ডল বলেন, এখন পর্যন্ত তাই মনে হচ্ছে। তবে ভবন মালিকরা আরও একটি নকশা দেখিয়েছে সেটিতে ১০ তলা পর্যন্ত রয়েছে। যদিও ওই নকশায় রাজউকের কোনো অনুমোদন নেই। ভবন মালিক বলছেন, তাদের ওই নকশার অনুমোদন রয়েছে, কিন্তু সেই অনুমোদন এখনও তারা দেখাতে পারেননি। প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারের কুইন্স স্যানেটারি মার্কেটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন শতাধিক। এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনায় অবহেলার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ বাদি হয়ে করা এ মামলায় অজ্ঞাতনামা একাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এর আগে বিস্ফোরণের ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়। এ নিয়ে ওই ঘটনায় মোট দুটি মামলা দায়ের হলো। গতকাল শুক্রবার বিকালে রাজধানীর বংশাল থানার ওসি মো. মুজিবুর রহমান বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সিদ্দিক বাজারের বিস্ফোরণের ঘটনায় অবহেলার অভিযোগ এনে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে পুলিশ বাদি হয়ে ডিএমপির বংশাল থানায় অজ্ঞাতনামা একাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করে। এর আগে বুধবার পুলিশ বাদি হয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছিল। বংশাল থানা সূত্রে জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের গ্যাস সংযোগ, নকশাসহ আর কি গাফিলতি রয়েছে; বিস্ফোরণে ভবন মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের কোনো দায় আছে কিনা- এসব অবহেলাজনিত বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
সর্বশেষঃ
গুলিস্তানে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি এখন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ
-
দৈনিক আইন বার্তা
- আপডেট সময়ঃ ০৫:৫৫:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ মার্চ ২০২৩
- ১২০ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ