নিজস্ব প্রতিবেদক :
গ্যাস সঙ্কটে দেশজুড়েই ভোগান্তি তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিএনজি স্টেশনগুলোতে দাঁড়িয়ে থেকেও গাড়িচালকরা গ্যাস পাচ্ছেন না। আর গ্যাস স্বল্পতায় বন্ধ রাখতে হচ্ছে অনেক সিএনজি স্টেশন। তাছাড়া গ্যাসের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিল্প উৎপাদন বিভিন্ন কারখানায়। আবাসিকেও মিলছে না গ্যাস। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অনেকেই প্রাকৃতিক গ্যাসের বিকল্প হিসেবে শুরু করেছেন এলপিজির ব্যবহার। পেট্রোবাংলা এবং ভুক্তভোগীদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, উৎপাদন কমে যাওয়ায় প্রাকৃতিক গ্যাসের স্বল্পতা আগে থেকেই ছিল। সম্প্রতি কক্সবাজারের এলএনজি রিগ্যাসিফিকেশন টার্মিনাল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আরো বেড়েছে গ্যাস সংকট। আর তাতে বাড়িঘর, কারখানা ও যানবাহন খাতে প্রভাব পড়েছে। গ্যাসের অভাবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মানুষজন রান্না করতে হিমশিম খাচ্ছেন। গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে কিছু কারখানা। রাজধানীর প্রায় সব সিএনজি ফিলিং স্টেশনে দেখা যাচ্ছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। দেশের অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গ্যাস সরবরাহ না করায় গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছে। সূত্র জানায়, মে মাসে ঘূর্ণিঝড় রিমালের সময় কক্সবাজারের মহেশখালীতে এলএনজি রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর এক বিবৃতিতে সামিট কর্তৃপক্ষ জানায়, সামিট গ্রুপ পরিচালিত ইউনিটটি মেরামতের জন্য বিদেশের একটি ড্রাই ডকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সামিট আশা করছে তিন সপ্তাহের মধ্যে এলএনজি টার্মিনালটি চালু করা সম্ভব হবে। দৈনিক ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি) গ্যাস প্রক্রিয়াজাতকরণের সক্ষমতা সম্পন্ন দুটি ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট থেকে দেশে এলএনজি আসে। এর একটি এখন বন্ধ থাকায় সরবরাহ কমে দাঁড়িয়েছে ৬০০ এমএমসিএফডিতে। এর আগেও সিঙ্গাপুরে আড়াই মাস রক্ষণাবেক্ষণের পর এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে সামিটের এফএসআরইউ পুনরায় কার্যক্রম শুরু করে। সেসময়ও দেশে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি একই রকম ছিল এবং জনগণকে গ্যাস সংকটে ভুগতে হয়েছিল। বর্তমানে পেট্রোবাংলা ৩ হাজার ৮০০ এমএমসিএফডি চাহিদার বিপরীতে প্রায় ২ হাজার ৬০০ এমএমসিএফডি সরবরাহ করতে পারছে। অন্যদিকে দেশের স্থানীয় গ্যাস উৎপাদনও দিন দিন কমে আসছে। সূত্র আরো জানায়, তীব্র গ্যাস সংকটে ঘরের রান্নার কাজে অনেকেই এলপি সিলিন্ডার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। তাছাড়া প্রতিটি সিএনজি ফিলিং স্টেশনেই গ্যাসের জন্য দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করছে প্রাইভেট গাড়ি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চালকরা গ্যাস নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। আর সিএনজি স্টেশনগুলো থেকে বলা হচ্ছে গ্যাসের চাপ একেবারেই কম। গ্যাসের স্বাভাবিক চাপ প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে (পিএসআই) ১৫ পাউন্ড থাকার কথা থাকলেও এখন দিনের বেশিরভাগ সময় তা দুই থেকে তিন পিএসআই থাকে। এদিকে গ্যাসের দাবিতে দেশের ঢাকার আশপাশে মানুষজন বিক্ষোভ করেছেন। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃপক্ষ এরইমধ্যে নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মাওনা, সাভার, আশুলিয়া, টঙ্গী, শ্রীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য পেট্রোবাংলার কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। গ্যাস না থাকায় শত শত কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অনেক কারখানা আবার গ্যাসের অভাবে বন্ধ আছে। কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।