নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জামিনের পর এবার চট্টগ্রামে জামিন পেয়েছেন পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের বাবা আবদুল ওয়াদুদ মিয়া ও ভাই হাবিবুর রহমান লাবু। আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জহিরুল কবির শুনানি শেষে জামিনের আদেশ দেন। এদিন আদালতে আসামিরা আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী গোলাম মওলা মুরাদ। তিনি বলেন, আদালত শুনানি শেষে জামিন দিয়েছেন। তবে কতদিনের জামিন দিয়েছেন, সেটি আদেশ নিয়ে জানতে হবে। জানা যায়, এ মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন তারা। জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় আত্মসমর্পণ করে ফের জামিনের আবেদন করেন। এ মামলার অপর দুই আসামির মধ্যে বাবুল আক্তারকেও গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন। অপর আসামি সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন মামলার শুরু থেকে পলাতক। তিনি রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। এর আগে গত বছরের ১৭ অক্টোবর রাতে নগরীর খুলশী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাটি করেন পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর ইনচার্জ পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা। মামলার অভিযোগে বলা হয়, বাবুল আকতারসহ অন্য আসামিরা মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার তদন্ত ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার ষড়যন্ত্র করছেন। এর অংশ হিসেবে ইউটিউবার ইলিয়াস হোসেনকে দিয়ে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে ‘স্ত্রী খুন স্বামী জেলে খুনি পেয়েছে তদন্তের দায়িত্ব’ শিরোনামে ফেসবুক ও ইউটিউবে ডকুমেন্টারি ভিডিও প্রচার করছেন। ভিডিওতে যে বক্তব্য রয়েছে তার মাধ্যমে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি এবং বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এর আগে একই ঘটনা এবং একই অভিযোগে গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বাদী হয়ে রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরেকটি মামলা করেছিলেন। ওই মামলা ২ জানুয়ারি ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল থেকে জামিন নেন দুই আসামি। ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে তিনি পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। পরে বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলায় স্ত্রী হত্যাকা-ে তারই সম্পৃক্ততা পায় পিবিআই। এরপর গত বছরের ১২ মে আগের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় আরেকটি মামলা করেন মিতুর বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন। ওইদিনই মামলাটিতে বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পিবিআই। সেই থেকে কারাগারে আছেন তিনি। তবে আইনি জটিলতায় পরবর্তীতে বাবুল আকতারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা মামলাটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে আগের বাবুল আকতারের করা মামলাতেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই। বর্তমানে সাক্ষী পর্যায়ে রয়েছে মামলাটি। এরমধ্যে পিবিআই হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ এনে বনজ কুমার মজুমদারসহ ৬ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছিলেন বাবুল আক্তার। স্বীকারোক্তি আদায়ে হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর এই আবেদন করেছিলেন তিনি। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর একই আদালতে ফেনী কারাগারে নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আরেকটি আবেদন করেন বাবুল। একই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর বাবুল আক্তারের এসব আবেদন খারিজ করে দেন চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ আদালত।