নিজস্ব প্রতিবেদক :
চট্টগ্রামে ছয় বছর আগে এক ব্যবসায়ীকে খুনের ঘটনায় দুই আসামিকে মৃত্যুদন্ড এবং অন্য দুইজনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছে আদালত। চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ শরিফুল আলম ভুঁইয়া আজ রোববার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- কামাল হোসেন ও মো. রাসেল। আর যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে লিলু আক্তার রিনা ও সুরমা আক্তারের। তাদের মধ্যে কামাল হোসেনের স্ত্রী লিলু আক্তার পলাতক। বাকি তিন আসামিকে রায় ঘোষণার পর কারাগারে পাঠানো হয়। ২০১৬ সালের ১৯ নভেম্বর ডবলমুরিং থানার সিডিএ আবাসিক এলাকায় জালাল উদ্দিন সুলতান নামের এক ব্যবসায়ীকে শ্বাস রোধের হত্যার পর এ মামলা দায়ের করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ নোমান চৌধুরী বলেন, “আসামিরা পরিকল্পিতভাবে জালাল উদ্দিনকে শ্বাসরোধে এবং শারীরিকভাবে জখম করে হত্যা করে। তারপর আগ্রাবাদ সিডিএ বাংলাদেশ ব্যাংক কলোনির সামনে নালার পাশে লাশ ফেলে দেয়। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুইজনকে মৃত্যুদ- এবং দুইজনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি লাশ গুমের অভিযোগে আসামিদের প্রত্যেককে ২০১ ধারায় ৫ বছর করে কারাদ- দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত পিপি নোমান চৌধুরী বলেন, “ভিকটিমকে পরিকল্পিতভাবে ডেকে নিয়ে গিয়ে চাঁদা দাবি করেছিল আসামিরা। উনি টাকা দিতে শুরুতে অস্বীকার করেন। পরে তিনি টাকা দিতে রাজি হলেও নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ গুমের জন্য বস্তাবন্দি করে ফেলে দেওয়া হয়। “আসামিরা সবাই ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। ঘটনা কীভাবে ঘটিয়েছে তা তারাই জানিয়েছে। আমরা ২২ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেছি। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এ রায় দিয়েছেন আদালত।”
দুই আসামি নারী হওয়ায় বিচারক তাদের মৃত্যুদ-ের বদলে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছেন বলে জানান আইনজীবী নোমান। নিহত জালাল উদ্দিন সুলতানের ছেলে ইমাজ উদ্দিন সুলতান ফরহাদ বাদী হয়ে ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। ওই বছরের ২৮ মে চারজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। সেখানে বলা হয়, ২০১৬ সালের ১৯ নভেম্বর সকালে আগ্রাবাদে জামান হোটেলের পঞ্চম তলায় নিজের অফিসে যাওয়ার জন্য পশ্চিম গোসাইলডাঙ্গা এলাকার সুলতান আহমদ মঞ্জিলের বাসা থেকে বের হন জালাল উদ্দিন সুলতান। দুপুরে ছেলে ইমাজ উদ্দিন বাবার নম্বরে ফোন করলেও তিনি ধরেননি। সেদিন বেলা ২টার দিকে জালাম উদ্দিনের নম্বর থেকে একটি এসএমএস আসে ছেলের ফোনে। তাতে লেখা ছিল- ‘আমি একটু কাজে আছি’। এতে সন্দেহ হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে তার খোঁজ শুরু করে পরিবার। পরদিন সকালে সিডিএ আবাসিক এলাকার ২৯ নম্বর রোডে ব্যাংক কলোনির উত্তর গেইট সংলগ্ন নালার উপর বস্তাবন্দি লাশ পড়ে থাকার খবর শুনে সেখানে গিয়ে জালাল উদ্দিনকে শনাক্ত করেন পরিবারের সদস্যরা। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামি কামাল হোসেনের সাথে জালাল উদ্দিনের দীর্ঘদিনের পরিচয় ছিল। সেই সূত্রে কামাল ফোন করে জালাল উদ্দিনকে মাদারবাড়ির ২ নম্বর রোডে নিজের বাসায় ডেকে নেন। “সেখানে জালাল উদ্দিন আসামি সুরমা আক্তারের সাথে কিছু অন্তরঙ্গ সময় কাটায়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে এই ঘটনাকে পুঁজি করে কামাল হোসেন টাকা দাবি করে। শুরুতে টাকা দিতে রাজি না হলেও, ছেড়ে দিলে পরে টাকা দেবেন এই শর্তে রাজি হন জালাল উদ্দিন।”
কিন্তু ছেড়ে দিলে ভবিষ্যতে তাদের ক্ষতি হতে পারে এই আশঙ্কায় আসামিরা শ্বাস রোধ ও আঘাত করে জালাল উদ্দিনকে হত্যা করে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করে পুলিশ। এরপর গুমের জন্য রিকশা ভ্যানে করে বস্তাবন্দি লাশ নিয়ে যাচ্ছিল তারা। কিন্তু ব্যাংক কলোনির সামনে নালার উপর ভ্যান উল্টে পড়লে সেখানেই লাশ ফেলে আসামিরা পালিয়ে যান বলে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে জানান। মামলায় ৩২ জন সাক্ষীর মধ্যে ২২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গতকাল রোববার আদালত এই রায় দিল।