• রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:১৫ পূর্বাহ্ন
  • ই-পেপার
সর্বশেষ
পূর্ণমাত্রায় বিদ্যুৎ সরবরাহে সম্মত হলেও মূল্যছাড় দেবে না আদানি বিডিআর হত্যাকা-ের ষড়যন্ত্র করে প্রতিবেশি দেশ: অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুলসংখ্যক কারখানা বন্ধে পরিবার নিয়ে দিশেহারা হাজার হাজার শ্রমিক চলতি মাসেই পদত্যাগ করতে পারেন উপদেষ্টা নাহিদ অযোগ্য শাসক চাই না: হাসনাত আবদুল্লাহ অভ্যুত্থানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবাই মিলে চেষ্টা করবো: প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রামে চলমান-প্রস্তাবিত কার্যক্রম প্রসঙ্গে নানা প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিলেন বাপাউবো বিজিবি-বিএসএফের মহানুভবতায় জিরো পয়েন্টে মা-মেয়ের শেষবিদায় বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন, বিশ্বমিডিয়ায় তোলপাড় ‘মব’ সংস্কৃতির কারণে জাতীয় সম্ভাবনা ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে: মাহফুজ আলম

চাকরি-মডেলিংয়ের নামে দেহব্যবাসায় বাধ্য করে আয় শত কোটি টাকা, গ্রেপ্তার ৮

Reporter Name / ৫৭ Time View
Update : বুধবার, ২৬ জুন, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক :
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তরুণীদের টার্গেট করে আকর্ষণীয় বেতন চাকরি, ট্যালেন্ট হান্টিং ও মডেলিংয়ের নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে ফাঁদে ফেলতো একটি চক্র। পরে ব্যক্তিগত ছবি হাতিয়ে নিয়ে ব্ল?্যাকমেইল করে অনলাইনে যৌনক্রিয়ায় বাধ্য করা হতো। দীর্ঘদিন ধরে অতি কৌশলে শত শত তরুণীদের ফাঁদে ফেলে যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগে চক্রের মূলহোতাসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টার। গ্রেপ্তাররা হলেন চক্রের মূলহোতা ও মেডিকেল শিক্ষার্থী মো. মেহেদী হাসান (২৫) ও তার প্রধান সহযোগী খালাতো ভাই শেখ জাহিদ বিন সুজন (২৬), মো. জাহিদ হাসান কাঁকন (২৮), তানভীর আহমেদ ওরফে দীপ্ত (২৬), সৈয়দ হাসিবুর রহমান (২৭), শাদাত আল মুইজ (২৯), সুস্মিতা আক্তার ওরফে পপি (২৭) ও নায়না ইসলাম (২৪)। গত মঙ্গলবার ঢাকা, সাতক্ষীরা, চাঁদপুর ও যশোরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে পর্নোগ্রাফি তৈরি ও তরুণীদের ব্ল্যাকমেইলিংয়ে ব্যবহৃত ১২টি মোবাইল ফোন, ২০টি সিম কার্ড, একটি ল্যাপটপ এবং আয়ের টাকা লেনদেনে ব্যবহৃত বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ড ও চেক বই জব্দ করা হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহম্মদ আলী মিয়া। সিআইডি প্রধান বলেন, একটি চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া নামে ফেসবুক আইডি ও পেইজ খুলে ফ্রিল্যান্সিং, লোভনীয় চাকুরি, মডেল বানানো, মেধা অন্বেষণের নামে অল্প বয়সী তরুণীদের কাছ থেকে কৌশলে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও হাতিয়ে নিয়ে তা দিয়ে ব্ল?্যাকমেইল করতো এবং জোরপূর্বক তাদের যৌনকর্মে নামাতো। অনুসন্ধানে এমন ভয়ংকর চক্রের সন্ধান পায় সিআইডি। এই চক্রটি মূলত উঠতি বয়সী তরুণীসহ যেসব তরুণী পারিবারিক ভাঙনের শিকার ও আর্থিক সমস্যা রয়েছে তাদের টার্গেট করতো। চক্রটি কাজের সুযোগ দেওয়ার নামে ইন্টারভিউতে ডাকতো। এরপর তাদের বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে সুযোগ দেওয়ার কথা বলে আপত্তিকর ছবি নিতো। প্রাথমিকভাবে কাজে আগ্রহী তরুণীদের চাহিদা মতো টাকা ও প্রয়োজন মিটাতো তারা। এরপর ধীরে ধীরে অসামাজিক কাজ করতে বাধ্য করতো তারা। এই চক্রের মূলহোতা মেহেদী হাসান এবং তার খালাতো ভাই শেখ জাহিদ বিন সুজন মিলে এই চক্রটি গড়ে তুলেছিলেন। তারা দুজনেই মেডিকেল শিক্ষার্থী। তারা চিকিৎসাবিদ্যার আড়ালে অল্প বয়সী তরুণীদের ফাঁদে ফেলে যৌন নির্যাতনের পাশাপাশি অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট তৈরি এবং টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জারে নানা অসামাজিক কাজ করতে বাধ্য করতো। গত সাত বছরে তারা প্রায় ১০০ কোটি টাকা আয় করেছে। এই টাকা দিয়ে তারা যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনা এবং ঢাকায় বিপুল পরিমাণ জমি কিনেছে। নির্মাণ করেছে আলিশান বাড়িও। তাদের আত্মীয়-স্বজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টেও বিপুল অর্থ জমিয়ে রাখার তথ্য মিলেছে।
চক্রটি যেভাবে কাজ করতো: শুরুতে ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাকরির বিজ্ঞাপন, কখনো মডেল তৈরি, কখনোবা ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ শীর্ষক প্রতিযোগিতার আয়োজন করতো চক্রটি। এতে যারা সাড়া দিতেন তাদের নিয়ে টেলিগ্রামে গ্রুপ খুলতো তারা। তারপর তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে বিদেশি বায়ারদের কাছে পাঠানোর কথা বলে মেয়েদের আপত্তিকর ছবি হাতিয়ে নিতো চক্রটি। হাতিয়ে নেওয়া সেসব অর্ধনগ্ন ছবি ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে নগ্ন হয়ে ভিডিও কল বা সরসারি অসামাজিক কাজে বাধ্য করতো তাদের। চক্রটির টেলিগ্রাম গ্রুপে হাজার হাজার সাবস্ক্রাইবার রয়েছে। যারা একটি নির্দিষ্ট অর্থ দিয়ে ওই গ্রুপগুলোতে যুক্ত থাকতো। চক্রটি ভিডিও কলের সব কিছু গোপনে ধারণ করে রাখতো। এরপর মেয়েদের যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করতো। এভাবেই চক্রটির হাতে আধুনিক যৌনদাসীতে পরিণত হয়েছিল শত শত তরুণী। দীর্ঘদিন ধরে অনুসন্ধান করে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার এই চক্রের মূল হোতা ও তার প্রধান সহযোগীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। সিআইডির প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশ-বিদেশে চক্রটির রয়েছে শক্তিশালী একটি নেটওয়ার্ক। নানা নামে তাদের শতাধিক চ্যানেলে গ্রাহক সংখ্যা কয়েক লাখ। বিভিন্ন বয়সী নারীদের ভিডিও কল ও যৌনকর্মে বাধ্য করে এবং গোপনে ধারণকৃত সেসব ভিডিও বিক্রি করে চক্রটি প্রায় ১০০ কোটি টাকা আয় করেছে। অর্থ লেনদেনের জন্য তারা ব্যবহার করতো এমএফএস বা মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস। এ ছাড়া ক্রিপ্টো কারেন্সিতেও তাদের হাজার হাজার ডলার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে নিজেদের আড়াল করার সব কলা-কৌশলও এই চক্রের জানা। ফলে শত শত মোবাইল সিম ব্যবহার করলেও তাদের কোনোটিই প্রকৃত ন্যাশনাল আইডি দিয়ে নিবন্ধন করা নয়। এ ক্ষেত্রে তারা নিম্ন আয়ের মানুষের অজ্ঞতার সুযোগ নিতো। সামান্য অর্থ দিয়ে তোলা হতো সিম কার্ড। কন্টেন্ট আদান-প্রদান ও সাবস্ক্রিপশনের জন্য ছিল টেলিগ্রাম প্রিমিয়াম অ্যাকাউন্ট এবং বিভিন্ন পেইড ক্লাউড সার্ভিস। অল্প বয়সী ভয়ানক চতুর এই দুই মেডিকেল শিক্ষার্থীর জিম্মায় কয়েক হাজার নারী রয়েছে। আছে টিকটক, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম সেলিব্রেটিও। অভিযুক্তদের মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপে গোপনে ধারণ করা প্রায় ১০ লাখ ন্যুড ছবি ও ২০ হাজার অ্যাডাল্ট ভিডিও পাওয়া গেছে। এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডি প্রধান বলেন, ওদের যে গ্রুপ রয়েছে সেটির সাবস্ক্রাইবার এক লাখ ৮ হাজার। আমাদের কাছে অভিযোগ আসার পরে আমরা অনেক ভুক্তভোগীকে পেয়েছি। এ সংখ্যাটা এখনই আমরা বলতে চাচ্ছি না। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০১৭ ও ২০১৮ সাল থেকে এই চক্রটি কাজ করে যাচ্ছে। এরা দুইজনই মেডিকেল কলেজের ছাত্র। তাদের একজন ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ গাজীপুরে পড়াশোনা করেন, আরেকজন ইবনে সিনার। সিআইডি প্রধান বলেন, এখানে যারা সার্ভিস নিচ্ছেন, অবশ্যই এটাও অন্যায় ও বেআইনি। বাংলাদেশের পর্নোগ্রাফি আইন অনুযায়ী এটি অবৈধ। তাদেরও আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসব। এখানে তিন ধরণের অপরাধ হচ্ছে, একটি হলো সাইবার ক্রাইম অপরাধ, ফেইক আইডি খুলে যে ফেইক বিজ্ঞাপন দিয়েছে এটিও এক ধরনের অপরাধ। বিজ্ঞাপন যে উদ্দেশ্য দেওয়া হচ্ছে সেটিতেও মিথ্যা আশ্রয় নিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে, সেটিও অপরাধ। তারপর পর্নোগ্রাফি করছে, যেটা আরেক অপরাধ। গ্রেপ্তার হওয়া চক্রের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় পর্নোগ্রাফি ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category