০৬:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫ | ই-পেপার

জঙ্গি ছিনতাইয়ের আসামি নাসিরের জামিন সম্পর্কে জানে না রাষ্ট্রপক্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণ থেকে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় করা মামলার আসামি নাসির মিয়া ফারুকের জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আসামির জামিন বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ জামিন আদেশ দেন। বিষয়টি গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমের নজরে আসে। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম ফজলুল হক জানিয়েছেন, নাসির মিয়ার জামিন বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই। জামিন মঞ্জুর হলে তা বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হবে। গত বছরের ২০ নভেম্বর ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালত ভবনের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল-৮ থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের হাজতখানায় নেওয়ার পথে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। তারা হলেন নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (সাবেক আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) সদস্য মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির ও মো. আবু ছিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব। তারা জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন এবং লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি। এই জঙ্গি সংগঠনটির নেতা মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ জিয়াউল হক। তার পরিকল্পনায় ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দেশে একাধিক লেখক, প্রকাশক, ব্লগার ও সমকামী অধিকারকর্মীকে হত্যা করা হয়। জঙ্গি ছিনতাইয়ের মামলায় গত বছরের ৩ ডিসেম্বর তিন আসামিকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। তারা হলেন- খোতেজা আক্তার লিপি, নাসির মিয়া ও তানভীর হোসেন। তিনজনই এ মামলার এজাহারনামীয় আসামি ঈদী আমিনের আশ্রয়দাতা। এরপর গত ২৭ নভেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন মামলার ১৩ নম্বর এজহারনামীয় আসামি ঈদী আমিন। এ সময় জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত। গত ২০ নভেম্বর দুপুর ১২টার দিকে দুই জঙ্গিকে একটি মামলায় আদালতে হাজির করা হয়। হাজিরা শেষে তাদের হাজতখানার দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন পুলিশ সদস্যরা। এ সময় পুলিশের চোখে-মুখে স্প্রে করে জঙ্গি সদস্য মইনুল হাসান শামীম ও আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিবকে ছিনিয়ে নেয় তাদের সহযোগীরা। এ দুই জঙ্গি দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে সাগর ওরফে বড় ভাই ওরফে মেজর জিয়ার (চাকরিচ্যুত মেজর) পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় আয়মান ওরফে মশিউর রহমান (৩৭), সাব্বিরুল হক চৌধুরী ওরফে আকাশ ওরফে কনিক (২৪), তানভীর ওরফে সামশেদ মিয়া ওরফে সাইফুল ওরফে তুষার বিশ্বাস (২৬), রিয়াজুল ইসলাম ওরফে রিয়াজ ওরফে সুমন (২৬) ও মো. ওমর ফারুক ওরফে নোমান ওরফে আলী ওরফে সাদ (২৮) পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দুটি মোটরসাইকেলে করে আনসার আল ইসলামের অজ্ঞাতপরিচয় ৫/৬ জন সদস্য অবস্থান নেন। এছাড়াও আদালতের আশপাশে অবস্থান করা অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০/১২ জন আনসার আল ইসলামের সদস্য আদালতের মূল গেটের সামনে অবস্থান করেন। এরপর তারা পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে যান। মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, ঘটনার দিন সকাল ৮টা ৫ মিনিটে কাশিমপুর কারাগার থেকে ১২ জন আসামিকে ঢাকার আদালতে প্রিজনভ্যানে নিয়ে আসা হয়। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে ঢাকার প্রসিকিউশন বিভাগে আসামিদের হাজিরা দেওয়ার জন্য চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতে নেওয়া হয়। এ মামলার শুনানি শেষে জামিনে থাকা ১৩ নম্বর আসামি মো. ঈদী আমিন (২৭) ও ১৪ নম্বর আসামি মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফি (২৪) আদালত থেকে বের হয়ে যান। এরপর বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে আদালতের মূল ফটকের সামনে পৌঁছাতেই হামলা চালিয়ে দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকে স্বস্তিকর পরিস্থিতি এসেছে: উপদেষ্টা রিজওয়ানা

জঙ্গি ছিনতাইয়ের আসামি নাসিরের জামিন সম্পর্কে জানে না রাষ্ট্রপক্ষ

আপডেট সময়ঃ ০৯:২০:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণ থেকে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় করা মামলার আসামি নাসির মিয়া ফারুকের জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আসামির জামিন বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ জামিন আদেশ দেন। বিষয়টি গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমের নজরে আসে। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম ফজলুল হক জানিয়েছেন, নাসির মিয়ার জামিন বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই। জামিন মঞ্জুর হলে তা বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হবে। গত বছরের ২০ নভেম্বর ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালত ভবনের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল-৮ থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের হাজতখানায় নেওয়ার পথে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। তারা হলেন নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (সাবেক আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) সদস্য মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির ও মো. আবু ছিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব। তারা জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন এবং লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি। এই জঙ্গি সংগঠনটির নেতা মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ জিয়াউল হক। তার পরিকল্পনায় ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দেশে একাধিক লেখক, প্রকাশক, ব্লগার ও সমকামী অধিকারকর্মীকে হত্যা করা হয়। জঙ্গি ছিনতাইয়ের মামলায় গত বছরের ৩ ডিসেম্বর তিন আসামিকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। তারা হলেন- খোতেজা আক্তার লিপি, নাসির মিয়া ও তানভীর হোসেন। তিনজনই এ মামলার এজাহারনামীয় আসামি ঈদী আমিনের আশ্রয়দাতা। এরপর গত ২৭ নভেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন মামলার ১৩ নম্বর এজহারনামীয় আসামি ঈদী আমিন। এ সময় জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত। গত ২০ নভেম্বর দুপুর ১২টার দিকে দুই জঙ্গিকে একটি মামলায় আদালতে হাজির করা হয়। হাজিরা শেষে তাদের হাজতখানার দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন পুলিশ সদস্যরা। এ সময় পুলিশের চোখে-মুখে স্প্রে করে জঙ্গি সদস্য মইনুল হাসান শামীম ও আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিবকে ছিনিয়ে নেয় তাদের সহযোগীরা। এ দুই জঙ্গি দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে সাগর ওরফে বড় ভাই ওরফে মেজর জিয়ার (চাকরিচ্যুত মেজর) পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় আয়মান ওরফে মশিউর রহমান (৩৭), সাব্বিরুল হক চৌধুরী ওরফে আকাশ ওরফে কনিক (২৪), তানভীর ওরফে সামশেদ মিয়া ওরফে সাইফুল ওরফে তুষার বিশ্বাস (২৬), রিয়াজুল ইসলাম ওরফে রিয়াজ ওরফে সুমন (২৬) ও মো. ওমর ফারুক ওরফে নোমান ওরফে আলী ওরফে সাদ (২৮) পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দুটি মোটরসাইকেলে করে আনসার আল ইসলামের অজ্ঞাতপরিচয় ৫/৬ জন সদস্য অবস্থান নেন। এছাড়াও আদালতের আশপাশে অবস্থান করা অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০/১২ জন আনসার আল ইসলামের সদস্য আদালতের মূল গেটের সামনে অবস্থান করেন। এরপর তারা পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে যান। মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, ঘটনার দিন সকাল ৮টা ৫ মিনিটে কাশিমপুর কারাগার থেকে ১২ জন আসামিকে ঢাকার আদালতে প্রিজনভ্যানে নিয়ে আসা হয়। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে ঢাকার প্রসিকিউশন বিভাগে আসামিদের হাজিরা দেওয়ার জন্য চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতে নেওয়া হয়। এ মামলার শুনানি শেষে জামিনে থাকা ১৩ নম্বর আসামি মো. ঈদী আমিন (২৭) ও ১৪ নম্বর আসামি মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফি (২৪) আদালত থেকে বের হয়ে যান। এরপর বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে আদালতের মূল ফটকের সামনে পৌঁছাতেই হামলা চালিয়ে দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা।