নিজস্ব প্রতিবেদক :
টেলিফোনে আড়িপাতা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বুধবার রিট আবেদনটির ওপর শুনানি গ্রহণ শেষে এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। আ্যডভোকেট শিশির মনির এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এর আগে গত ১০ আগস্ট ফোনে আড়িপাতা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। রিটে ফোনালাপ ফাঁসের ২০টি ঘটনা তদন্তের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির এ রিট দায়ের করেন। রিটকারী আইনজীবীরা হলেনÑঅ্যাডভোকেট রেজওয়ানা ফেরদৌস, উত্তম কুমার বণিক, শাহ নাভিলা কাশফী, ফরহাদ আহমেদ সিদ্দীকী, মোহাম্মদ নওয়াব আলী, মোহাম্মদ ইবরাহিম খলিল, মুস্তাফিজুর রহমান, জি এম মুজাহিদুর রহমান (মুন্না), ইমরুল কায়েস ও একরামুল কবির। ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং বিটিআরসিকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে। এর আগে গত ২২ জানুয়ারি টেলিফোনে আড়িপাতা বন্ধে সাত দিনের মধ্যে পদক্ষেপ জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্টদের লিগ্যাল নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের এই ১০ আইনজীবী। এতে ২০১৩ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৬টি আড়িপাতার ঘটনা নোটিশে উল্লেখ করা হয়। তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সংলাপ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ফোনালাপ, প্রয়াত সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ও রাজশাহী মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার নাজমুল হাসানের ফোনালাপ উল্লেখযোগ্য। এসব আড়িপাতার ঘটনা বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বহুল প্রচারিত ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। নোটিশে বলা হয়, সার্বজনীন মানবাধিকার সনদপত্র, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী পৃথিবীর সব আধুনিক ব্যবস্থায় ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার স্বীকৃত ও সংরক্ষিত। এরই ধারাবাহিকতায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদে চিঠিপত্র ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনীয়তা সংরক্ষণ নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এই অধিকার সংবিধান কর্তৃক নিশ্চিত করা হয়েছে। অর্থাৎ সংবিধানের তৃতীয়ভাগে উল্লিখিত মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সংরক্ষণ অন্যতম। এ ছাড়া ২০০১ সালের ১৬ এপ্রিল বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি অ্যাক্ট, ২০০১ প্রণয়ন করা হয়। এই আইনের ধারা ৬ অনুযায়ী টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়। ধারা ৩০ (চ) অনুযায়ী টেলিযোগাযোগের একান্ততা রক্ষা নিশ্চিত করা এই কমিশনের দায়িত্ব। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, এই ধরনের ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনা অহরহ ঘটছে। অথচ বাংলাদেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী কমিশনের দায়িত্ব হল ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সংরক্ষণ নিশ্চিত করা। নোটিশের জবাব না পাওয়ায় এ রিট করা হয় বলে জানান আইনজীবী শিশির মনির।