নিজস্ব প্রতিবেদক :
ডেঙ্গুরোগীদের সময়মতো ও যথাযথ চিকিৎসাসেবা দিতে সারাদেশের সব হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। ডেঙ্গুর প্রজনন ও বিস্তার কীভাবে হয় সে বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা প্রিভেনশন নেব প্রতি ওয়ার্ডে, মানুষকে সচেতন করা, মানুষকে বোঝানো যে ডেঙ্গু কীভাবে হয়। আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নির্মূলে করণীয় বিষয় নিয়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রের সঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে যেন হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রাখা হয়। রোগীরা যখন ডেঙ্গু আক্রান্ত হন বা জ্বর হয় তারা যেন দ্রুত হাসপাতালে আসেন। অনেক সময় দেখা যায় অনেক দেরিতে আসেন। তখন কিছু করা যায় না। এই মেসেজগুলো আমরা দিচ্ছি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রথমে ঠিকাদারের মাধ্যমে বিটিআই (মশার লার্ভা নিধনের জৈব কীটনাশক) এনেছিলাম। যার মূল্য ছিল ৮৫ লাখ টাকা। টেস্ট কেস হিসেবে বিটিআই আনা হয়েছিল। কিন্তু বিটিআই দেখেছি ৫ টন। যে ঠিকাদার নিয়ে এসেছেন সে এটাকে মিস ডিক্লিয়ারেশন করেছেন এবং যা ইচ্ছে তা-ই করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছেন আমরা হাজার হাজার কোটি টাকা বানিয়ে ফেলেছি। সেই ৫ টন বিটিআই আদালতের নির্দেশনার কারণে ব্যবহার করিনি। যে ঠিকাদার সে একবার জেলে যান, একবার জামিন নেন, এটা আদালতের ব্যাপার। তিনি বলেন, আমরা এজন্য এখন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সরাসরি প্রথমবারের মতো বিটিআই আমদানি করতে যাচ্ছি। আজ এখানে যারা বিশেষজ্ঞ আছেন ওনারাও বলেছেন কীভাবে অর্গানিক, বায়োলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট করা যায়। বিটিআই হচ্ছে বায়োলজিক্যাল ট্রিটমেন্টের মধ্যে উত্তম প্রস্তাব। এটি নিয়ে অমরা অলরেডি কাজ করেছি। আতিকুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রথমবারের মতো এন্টামোলজি দিচ্ছে। রমজানের পরই আমরা এটা নিয়ে কাজ শুরু করবো। তিনি বলেন, গতবার জাপান গার্ডেনকে তিন কোটি ৮৭ লাখ টাকা জরিমানা করেছি। আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। গুলশান লেক যেদিন প্রথম পরিষ্কার করি সেখান থেকে কোটি কোটি মশা বের হয়ে যায়। আগামীকাল (আজ বুধবার) উত্তরায় যাবো, রাজউকের প্রতিটি খাল পরিষ্কার করার জন্য। মেয়র বলেন, আমাদের প্রত্যেককে যার যার সংস্থার দায়িত্ব নিতে হবে। আপনারা দেখেছেন পেট্রোবাংলার নিচে লার্ভা পাওয়ায় ৫ লাখ টাকা করে জরিমানা করেছি। তিনি বলেন, আমি কাউকে দোষ দিচ্ছি না। লেটস ওয়ার্ক টুগেদার। আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে এবং আমরা অবশ্যই ফল পাবো। আমরা আগের থেকে ভালো করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার এবং সব সংস্থাকে নিয়ে সিটি করপোরেশনে কাজ করবো। রাজধানীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে মশার লার্ভার তথ্য সংগ্রহ করতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে লার্ভার তথ্য জানতে হবে। নিয়ম না মানলে জরিমানার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় যারা বাধা হবে, তাদেরকে জরিমানা করাসহ আরও কঠোর নিয়ম হাতে নিতে হবে। বিশেষ সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম, বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রফেসর আবদুল্লাহ, স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক জামাল উদ্দিন চৌধুরী, বিএসএমএমইউ উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদসহ মন্ত্রণালয়ের ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া বিষয়ক ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভার শুরুতে বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব ও নানাবিধ সমস্যা তুলে ধরে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা) অধ্যাপক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত সব রোগীর সময় মতো চিকিৎসা সেবা দিতে হবে। কোনো রোগীকে চিকিৎসা না দিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে পাঠানো যাবে না। ২০২৩ সালের ডেঙ্গুতে নারী ও শিশু বেশি কেন মারা গেল সেটি নিয়ে গবেষণা করে ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া মানুষকে সঠিক তথ্য জানাতে হবে। সভায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, করোনার মতো ডেঙ্গু প্রতিরোধে এবছর আমরা আগেভাগেই এই সমন্বয় সভার আয়োজন করেছি। আশা করছি, এ বছর সবার সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা ডেঙ্গু প্রতিরোধে একযোগে কাজ করে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুহার অনেক কমিয়ে আনতে সক্ষম হবো। সভায় সবার কথা শুনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, সমন্বয় সভার পরিসংখ্যানগত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বিগত ২৩ বছরে যত ডেঙ্গুরোগী চিকিৎসা নিয়েছে- গত ২০২৩ সালে এক বছরেই তার থেকে বেশি আক্রান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, গত ২৩ বছরে দেশে মোট ডেঙ্গুরোগী ছিল প্রায় আড়াই লাখ। কিন্তু গত ২০২৩ সালে মাত্র এক বছরেই রোগী আক্রান্ত হয় প্রায় ৩ লাখ। এই সংখ্যা শুধু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এমন। এর বাইরে তো আরও রোগী ছিলই। এতেই বোঝা যায়, ডেঙ্গুরোগী নিয়ে আমাদের এবার আগে থেকেই সতর্ক না হয়ে কোনো উপায় নেই। মন্ত্রী আরও বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে হলে আমাদেরকে একদিকে যেমন মশা মারতে হবে, অন্যদিকে প্রাদুর্ভাব কমাতে আমাদেরকে আগে থেকেই সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। সবার আগে আমাদের নিজ নিজ এলাকার কমিউনিটি সম্পৃক্ততা ও সচেতনতা বাড়াতে হবে। মশা মারার জন্য ওষুধ যেমন মানসম্পন্ন কিনতে হবে, তেমনই আমাদেরকে ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থাও রাখতে হবে। তবে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আজ থেকে যেভাবে উদ্যোগ নেওয়া শুরু হলো, এটিকে চলমান রেখে সব সেক্টরকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।