• বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৬ অপরাহ্ন
  • ই-পেপার

ডেসটিনির সম্পত্তি বণ্টনে গঠিত কমিটির কাজে বাধা নেই

Reporter Name / ৭৯ Time View
Update : বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফিরিয়ে দিতে হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি বাতিলের আবেদন করে ডেসটিনি। পরে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ বিচারিক (নিম্ন) আদালতের রায় স্থগিত করে দেন। হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে দুদক। দুদকের আবেদনের শুনানি নিয়ে এ বিষয়ে বিচারিক আদালতের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। ফলে বিচারিক আদালতের গঠিত ছয় সদস্যের কমিটির কাজ করতে আর কোনো বাধা নেই। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। তিনি জানান, এই রায়ের ফলে ডেসটিনির সম্পত্তি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বণ্টনে গঠিত ছয় সদস্যের কমিটি কাজ করতে পারবে। হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে দুদকের করা আবেদন শুনানি নিয়ে আজ বুধবার আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার জজ আদালত এই আদেশ দেন। একই সঙ্গে এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নিয়মিত ও পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্যে আগামী ১৪ নভেম্বর দিন ঠিক করেছেন আদালত। আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। অন্যদিকে ডেসটিনির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান। এর আগে গত ১২ মার্চ গ্রাহকের ৪ হাজার ১১৯ কোটি টাকা পাচার করার অভিযোগে ডেসটিনির চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনসহ ৪৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দিয়েছিলে বিচারিক (নিম্ন) আদালত। মানিলন্ডারিং আইনে করা ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের নামে দুটি মামলার মধ্যে একটির রায়ে এমন সাজা দেওয়া হয়। আসামিদের কারাদ-ের পাশাপাশি মোট ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া এ প্রতিষ্ঠানের যত সম্পত্তি ক্রোক ও ফ্রিজ করা হয়েছিল তা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়। একই সঙ্গে বাজেয়াপ্ত করা সম্পত্তি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বণ্টনে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করার আদেশ দেন আদালত। কমিটিতে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতিকে প্রধান ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের রেজিস্ট্রারকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। এ ছাড়া কমিটিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব, সমবায় মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব, পুলিশের ডিআইজি ও চার্টার অ্যাকাউন্টটিংকে সদস্য করা হয়েছে। এ কমিটি ডেসটিনির সব সম্পত্তি সমন্বয় করবে এবং তা এ প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বণ্টন করবে। ওই রায়ে বাজেয়াপ্ত করা সম্পত্তি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বণ্টনে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করার রায়ের এই অংশের বিরুদ্ধে ডেসটিনি গ্রুপের পক্ষ থেকে আপিল আবেদন করা হয়। ওই আবেদন শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ বিচারিক (নিম্ন) আদালতের রায় স্থগিত করে দেন। হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে দুদক। গতকাল বুধবার দুদকের আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। ধারণা করা হচ্ছে, ডেসটিনির মোট গ্রাহক ছিল ৩৫ লাখ। দুদকের তদন্তে জানা গেছে, ডেসটিনির এখন মোট স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৫৯০ কোটি ৩৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। রফিকুল আমীনসহ ৩৫ আসামির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আছে ৮৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা। গ্রাহকরা পাবেন কমপক্ষে ১৪ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে তাদের যে সম্পদ এবং নগদ অর্থ আছে তা গ্রাহকদের পাওনা টাকার চেয়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা কম। আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ডেসটিনি মাল্টি-পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সম্পদ তার শেয়ারহোল্ডার এবং বিনিয়োগকারীদের অন্তর্গত। এ টাকা উদ্ধারই আসল চ্যালেঞ্জ। রাষ্ট্রের অনুকূলে তাদের বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি ও অর্থ এবং জরিমানার টাকা ডেসটিনির শেয়ারহোল্ডার এবং বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ বলে গণ্য হবে। এজন্য সুপ্রিমকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে চেয়ারম্যান, অর্থ মন্ত্রণালয়, সমবায় মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিবকে সদস্য, একজন ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ও কো-অপারেটিভ বিভাগের নিবন্ধককে সদস্য হিসেবে একটি কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছেন আদালত। এ কমিটি ক্ষতিগ্রস্ত শেয়ারহোল্ডার এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি ন্যায্য, স্বচ্ছ এবং ন্যায়সঙ্গত উপায়ে অর্থ বিতরণের দায়িত্ব পালন করবে। পর্যবেক্ষণে বিচারক আরও বলেছেন, বাজেয়াপ্তকৃত সম্পদ, সম্পত্তি বিক্রি করার জন্য কমিটিকে ক্ষমতা দেওয়া হবে। তারা অর্থ একটি অ্যাকাউন্টে জমা রাখবেন। তারপর ক্ষতিগ্রস্তদের সঠিক তালিকা করে ন্যায্যতা অনুযায়ী বিতরণ করতে হবে। সরকার কমিটির সদস্যদের জন্য একটি সম্মানী নির্ধারণ করবে। ওই সম্মানী ডেসটিনি মাল্টি-পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সম্পদ বিতরণ কমিটির অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া হবে। এদিকে, বিচারিক আদালতের রায়ে ডেসটিনির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনের দশ বছরের কারাদ- এবং ৫০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক বছরের কারাদ-; ডেসটিনির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোফরানুল হক, সাঈদ-উর-রহমান, পরিচালক মেজবাহ উদ্দিনের দশ বছরের কারাদ-, এক কোটি ৮০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে দুই বছর ছয় মাসের কারাদ-; সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেনের নয় বছরের কারাদ-, ৩০ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে দুই বছরের কারাদ-; ইরফান আহমেদ, ফারাহ দীবা, জমশেদ আরা চৌধুরী, শেখ তৈয়বুর রহমান ও নেপাল চন্দ্র বিশ্বাসের আট বছরের কারাদ-, ৪০ কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই বছর কারাদ-; জাকির হোসেন, আজাদ রহমান, আকবর হোসেন সুমন ও সুমন আলী খানের নয় বছরের কারাদ-, ১২৫ কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই বছর ছয় মাস কারাদ- দেওয়া হয়েছে। আবুল কালাম আজাদ, সাইফুল ইসলাম রুবেল, শিরীন আকতার, রফিকুল ইসলাম সরকার, মো. মজিবুর রহমান, লে. কর্নেল (অব.) মো. দিদারুল আলমের আট বছরের কারাদ-, ১২৫ কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই বছর ছয় মাস কারাদ-; ড. এম হায়দারুজ্জামানের ছয় বছরের কারাদ-, দশ কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছর ছয় মাসের কারাদ-; মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীনের ছয় বছরের কারাদ-, পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের কারাদ-, কাজী মো. ফজলুল করিমের পাঁচ বছরের কারাদ-, ৫০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের কারাদ-; মোল্লা আল আমীনের আট বছরের কারাদ-, ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদ-; শফিউল ইসলামের সাত বছরের কারাদ-, দশ কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছর ছয় মাসের কারাদ-; জিয়াউল হক মোল্লা, খন্দকার কবিরুল ইসলাম, মো. ফিরোজ আলমের পাঁচ বছরের কারাদ-, দশ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের কারাদ-; ওমর ফারুকের পাঁচ বছরের কারাদ-, ২৫ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের কারাদ-; সুনীল বরণ কর্মকার ওরফে এসবি কর্মকারের আট বছরের কারাদ-, পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই বছরের কারাদ- দিয়েছেন আদালত। ফরিদ আকতারের আট বছরের কারাদ- দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই বছরের কারাদ-; এস সহিদুজ্জামান চয়নের আট বছরের কারাদ-, ১৫ কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই বছরের কারাদ-; আবদুর রহমান তপন ও মো. শফিকুল হকের সাত বছরের কারাদ-, এক কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের কারাদ-; মেজর (অব.) সাকিবুজ্জামান খান ও জেসমিন আক্তার মিলনের পাঁচ বছরের কারাদ-, এক কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের কারাদ-; এসএম আহসানুল কবির, এএইচএম আতাউর রহমান রেজা আট বছরের কারাদ-, দশ কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই বছরের কারাদ-; গোলাম কিবরিয়া মিল্টনের আট বছরের কারাদ-, পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই বছরের কারাদ-; মো. আতিকুর রহমানের সাত বছরের কারাদ-, পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই বছরের কারাদ-; খন্দকার বেনজীর আহমেদ, একেএম সফিউল্লাহ, শাহ আলম, মো. দেলোয়ার হোসেনের সাত বছরের কারাদ-, এককোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের কারাদ- দেওয়া হয়েছে। মামলায় ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমীনসহ মোট আসামি ৪৬ জন। তাদের মধ্যে জামিনে রয়েছেন লে. কর্নেল (অব.) মো. দিদারুল আলম, লে. জেনারেল (অব.) হারুন-অর-রশিদ, মিসেস জেসমিন আক্তার (মিলন), জিয়াউল হক মোল্লা ও সাইফুল ইসলাম রুবেল। কারাগারে আছেন এমডি রফিকুল আমীন ও ডেসটিনির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন। অন্য ৩৯ আসামি পলাতক। অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থপাচারের অভিযোগে দুদকের তৎকালীন উপ-পরিচালক মো. মোজাহার আলী সরদার ও সহকারী পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম ২০১২ সালের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় মানি লন্ডারিং আইনে পৃথক দুটি মামলা করেছিলেন। ২০১৪ সালের ৪ মে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন মোজাহার আলী সরদার। এতে ডেসটিনির গ্রাহকদের চার হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে পাচারের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় ৪৬ জন এবং ডেসটিনি ট্রি প্ল্যানটেশন লিমিটেডে দুর্নীতির মামলায় ১৯ জনকে আসামি করা হয়। দুই মামলায়ই আসামি হারুন-অর-রশিদ ও রফিকুল আমিন। মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ প্রজেক্টের নামে ডেসটিনি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিল ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। সেখান থেকে ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে দুদকের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে। ওই অর্থ আত্মসাতের ফলে সাড়ে ৮ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন। ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন প্রজেক্টের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাড়ে ১৭ লাখ বিনিয়োগকারী। অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, ডেসটিনি গ্রুপের নামে ২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশ কয়েকটি ছিল নামসর্বস্ব। আসামিরা প্রথমে প্রজেক্টের টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা করতেন। এরপর বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে তা স্থানান্তর করা হতো। দুদক ৩৪টি ব্যাংকে এমন ৭২২টি হিসাবের সন্ধান পায়, যেগুলো পরে জব্দ করা হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category