০৬:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫ | ই-পেপার

ড্যাপ প্রকল্প ও নির্মাণশিল্পের মধ্যে দ্বৈরথ স্পষ্ট

  • দৈনিক আইন বার্তা
  • আপডেট সময়ঃ ০৭:৫৪:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ১৪৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিশ্বের অন্যতম একটি জনবহুল মেগা শহর হলো ঢাকা। প্রতিনিয়ত এই শহরে মানুষ ঢুকছে। শহরের উদর যেন মানুষ গিলতে গিলতে ফেটে পড়ার দশায়। রাজধানী শহরের ওপর থেকে চাপ কমাতে পার্শ্ববর্তী তিন জেলা নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও কেরানীগঞ্জের কিছু এলাকা নিয়ে ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) গ্রহণ করা হয় যাতে এই তিন এলাকাকে রাজধানীর সাথে সংযুক্ত করা হবে। এর ফলে ঢাকার নতুন আয়তন হবে ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার।
২০১১-এর বিবিএস সার্ভে অনুযায়ী বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করছেন প্রায় ১৫.৫ মিলিয়ন মানুষ। ২০৩৫ নাগাদ যা পৌঁছাতে পারে প্রায় ২৬ মিলিয়নে। ড্যাপ পরিকল্পনায় যুক্ত রাজউকের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার সীমানা ও ব্যাপ্তি অনুযায়ী ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ এই তিনটি সিটি করপোরেশন ছাড়াও পাঁচটি পৌররসভা যুক্ত হচ্ছে। সেগুলো হলো, সাভার, তারাবো, কালীগঞ্জ(আংশিক), সোনারগাঁও (আংশিক) এবং কাঞ্চন (আংশিক)। এতে যুক্ত হবে তিন জেলার ৬৯টি ইউনিয়ন পরিষদও।
এই পরিকল্পনায় বিশাল অংশকে যে ঢাকার সাথে যুক্ত করা হচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই, এবং এতে ঢাকার ওপর অপ্রত্যাশিত চাপ কমে আসবে। ড্যাপের সীমানা পর্যালোচনায় দেখা যায়, ড্যাপে উত্তরে সমগ্র গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকা, দক্ষিণে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকা যা ধলেশ্বরী নদী দ্বারা বেষ্টিত, পশ্চিমে সাভারের বংশী নদী এবং পূর্বে কালীগঞ্জ-রূপগঞ্জ যা শীতলক্ষ্যা নদী এবং দক্ষিণপশ্চিমে কেরানীগঞ্জ দ্বারা বেষ্টিত রাখা হয়েছে।
তবে ড্যাপ পরিকল্পনাতেও নতুন জটিলতা দেখা দিয়েছে। জানা যায়, ড্যাপের গেজেট নিয়ে নির্মাণ শিল্পে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। প্রস্তাবিত ড্যাপের গেজেট হলে পূর্বে রাজউকের নির্মাণ বিধিমালা ও নতুন নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী জমির মালিকদের মধ্যে স্থাপনা নির্মাণে দেখা দিবে বৈষম্য। পাশাপাশি কমবে জমির দাম। ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে যাবে প্রায় ৫০ ভাগ। নির্মাণ শিল্প হুমকির মুখে পড়লে এর সাথে জড়িত লিংকেজ শিল্পও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
শুধু ফ্ল্যাটের দাম নয় এতে রাজধানীতে বাসা ভাড়াও অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মূল শহর থেকে অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে ব্যাপক অসামঞ্জস্য তৈরি হবে। ফলে ভবিষ্যতে মূল শহর অর্থাৎ সিটি করপোরেশন এলাকার বেশিরভাগ মানুষ, ব্যয়ভার বহন করতে পারবে না। এ বিষয়ে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট (প্রথম) কামাল মাহমুদ বলেন, যেভাবে ড্যাপের চিন্তা করা হচ্ছে তাতে আবাসন সেক্টরে ধস নামবে। যার কারণে ঢাকায় নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা বাসা ভাড়া দিয়ে থাকতে পারবেন না। যার সরাসরি প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। তাই ড্যাপ নিয়ে আমরা বেশ দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতার মধ্যে আছি।
জানা যায়, সমগ্র রাজউক এলাকায় মোট স্থাপনা প্রায় ২১ লাখ। এর মধ্যে ৮ তলা অধিক উচ্চতার ভবন মাত্র ১৬ শতাংশ। আর এই আয়তন বা উচ্চতার ভবন লাগাম টানা শহরের জনঘনত্ব কমানোর হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করা বাস্তব সম্মত নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, শহরের নাগরিক সুবিধা না বাড়িয়ে ভবনের আয়তন কমিয়ে ঢাকা শহরের জনঘনত্ব কমানোর প্রচেষ্টা কেবল জনদুর্ভোগ বাড়াবে। বাংলাদেশের মত জনবহুল দেশে যেখানে জমির পরিমাণ অপ্রতুল সেখানে ভবনের উচ্চতা না কমিয়ে বরং তা বাড়ালে জনগণের আবাসন সমস্যার সমাধান হবে দ্রুত।
উল্লেখ্য, ড্যাপের হিসেব মতে, রাজউকের ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকায় জনঘনত্বকে বিবেচনা করে ফার (ফ্লোর এরিয়া রেশিয়ো) নির্ধারণ করা হয়েছে। এই পরিকল্পনায় ঢাকা কেন্দ্রীয় এলাকার (উত্তর ও দক্ষিণ সিটি) জন্য প্রতি একরে ২০০ জন, পুরান ঢাকায় প্রতি একরে ২৫০ জন; গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, পূর্বাচল, ঝিলমিল নগর এলাকার জন্য প্রতি একরে ১৮০ জন, অন্যান্য নগর এলাকার জন্য প্রতি একরে ১৫০ জন (কৃষি এলাকা ছাড়া) ধরা হয়েছে। এর মাধ্যমে কোন এলাকায় কত আয়তনের ভবন নির্মাণ হবে তা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এ প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব। উপার্জনের জন্য, চিকিৎসার জন্য, উন্নত শিক্ষার জন্য বিচার সালিশের জন্য দেশের জনগণের ঢাকাই একমাত্র কেন্দ্রস্থল। এই সুব্যবস্থাগুলো যতক্ষণ পর্যন্ত অন্যত্র তৈরি করা না যাবে ততক্ষণ ঢাকা শহরে জনসংখ্যা কমানো বা ঢাকা শহরে অভিবাসনে বাধা প্রদান অলিক স্বপ্ন মাত্র বলে মনে করছেন এই সংগঠনের নেতারা।
রাজধানীতে ইমারত বা ভবন নির্মানের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা আছে। ‘ঢাকা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮’ মোতাবেক নির্মাণযোগ্য ভবনে যে পরিমাণ ফার বা বর্গফুট পাওয়া যায় প্রস্তাবিত ড্যাপে তা অনেক কমে গেছে। এখন ২০ ফুট রাস্তা সংলগ্ন পাঁচ কাঠা জমিতে গ্রাউন্ড ফ্লোরসহ আটতলার ভবনে মোট ১৩৫০০ বর্গফুট নির্মাণের অনুমতি পাওয়া যায়। প্রস্তাবিত ড্যাপের বিধিমালা অনুযায়ী ওই জায়গায় ৫ তলা ভবনে মোট ৯০০০ বর্গফুট ভবন নির্মাণের অনুমতি পাওয়া যাবে। ২০ ফুটের চেয়ে ছোট রাস্তার ক্ষেত্রে ভবনের উচ্চতা ৩ থেকে ৪ তলার বেশি হবে না। আয়তন অনেক কমে যাবে। এতে নির্মাণযোগ্য ফ্ল্যাট সংখ্যা কমে আসার কারণে ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। তখন ফ্ল্যাটের দাম নূন্যতম ৫০ শতাংশ বাড়বে। যা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। এর ফলে বিভিন্ন সেক্টরে ব্যাপকভাবে সমস্যা দেখা দিবে।
এ বিষয়ে ড্যাপ প্রকল্প সূত্রে জানা যায় যে, তারা রাস্তার প্রশস্ততার ব্যাপারটাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। মানুষের হেঁটে যাতায়াতের সুযোগ, নৌপথকে কাজে লাগানোর সুযোগকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। পরিবেশকে সংরক্ষণের দিকটা গুরুত্ব পাচ্ছে সবার উর্ধ্বে।
কিন্তু আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, ব্যাপকভাবে ভবনের আয়তন হ্রাসের কারণে ফ্লাটের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতা শূন্যতা দেখা দিবে। এতে নির্মাণ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি এ শিল্পের সাথে জড়িত সিরামিক, স্যানেটারি, টাইলস, ইলেকট্রিক কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ, রড, সিমেন্ট, পাথর, বালি, পেইন্ট ইন্ডাস্ট্রিজসহ অন্যান্য ২৬৯ টি লিংকেজ শিল্প গভীর সংকটের মধ্যে পড়বে। যা প্রভাব ফেলবে অর্থনীতিতে। এতে করোনা মহামারীর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি আরও ব্যাপাপ হুমকির মুখে পড়ে যাবে।
নগর পরিকল্পনাবিদরাও ড্যাপ প্রকল্পে দুরদর্শীতার অভাব আছে বলে মনে করেন। এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, ড্যাপে যেভাবে ফার নির্ধারণ করা হয়েছে, এতে ভবিষ্যতে মূল শহর অর্থাৎ সিটি করপোরেশন এলাকায় বেশিরভাগ মানুষ, ব্যয়ভার বহন না করতে পেরে থাকতে পারবে না। তাদের মূল শহরের বাইরে চলে যেতে হবে। ড্যাপে এলাকাভিত্তিক যে ফার নির্ধারণ করা হয়েছে তা ত্রুটিপূর্ণ। আমরা এ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছি। আশা করছি সরকার এটি বিবেচনা করবে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়করের সব দপ্তর দুই শনিবার খোলা

ড্যাপ প্রকল্প ও নির্মাণশিল্পের মধ্যে দ্বৈরথ স্পষ্ট

আপডেট সময়ঃ ০৭:৫৪:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিশ্বের অন্যতম একটি জনবহুল মেগা শহর হলো ঢাকা। প্রতিনিয়ত এই শহরে মানুষ ঢুকছে। শহরের উদর যেন মানুষ গিলতে গিলতে ফেটে পড়ার দশায়। রাজধানী শহরের ওপর থেকে চাপ কমাতে পার্শ্ববর্তী তিন জেলা নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও কেরানীগঞ্জের কিছু এলাকা নিয়ে ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) গ্রহণ করা হয় যাতে এই তিন এলাকাকে রাজধানীর সাথে সংযুক্ত করা হবে। এর ফলে ঢাকার নতুন আয়তন হবে ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার।
২০১১-এর বিবিএস সার্ভে অনুযায়ী বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করছেন প্রায় ১৫.৫ মিলিয়ন মানুষ। ২০৩৫ নাগাদ যা পৌঁছাতে পারে প্রায় ২৬ মিলিয়নে। ড্যাপ পরিকল্পনায় যুক্ত রাজউকের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার সীমানা ও ব্যাপ্তি অনুযায়ী ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ এই তিনটি সিটি করপোরেশন ছাড়াও পাঁচটি পৌররসভা যুক্ত হচ্ছে। সেগুলো হলো, সাভার, তারাবো, কালীগঞ্জ(আংশিক), সোনারগাঁও (আংশিক) এবং কাঞ্চন (আংশিক)। এতে যুক্ত হবে তিন জেলার ৬৯টি ইউনিয়ন পরিষদও।
এই পরিকল্পনায় বিশাল অংশকে যে ঢাকার সাথে যুক্ত করা হচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই, এবং এতে ঢাকার ওপর অপ্রত্যাশিত চাপ কমে আসবে। ড্যাপের সীমানা পর্যালোচনায় দেখা যায়, ড্যাপে উত্তরে সমগ্র গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকা, দক্ষিণে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকা যা ধলেশ্বরী নদী দ্বারা বেষ্টিত, পশ্চিমে সাভারের বংশী নদী এবং পূর্বে কালীগঞ্জ-রূপগঞ্জ যা শীতলক্ষ্যা নদী এবং দক্ষিণপশ্চিমে কেরানীগঞ্জ দ্বারা বেষ্টিত রাখা হয়েছে।
তবে ড্যাপ পরিকল্পনাতেও নতুন জটিলতা দেখা দিয়েছে। জানা যায়, ড্যাপের গেজেট নিয়ে নির্মাণ শিল্পে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। প্রস্তাবিত ড্যাপের গেজেট হলে পূর্বে রাজউকের নির্মাণ বিধিমালা ও নতুন নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী জমির মালিকদের মধ্যে স্থাপনা নির্মাণে দেখা দিবে বৈষম্য। পাশাপাশি কমবে জমির দাম। ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে যাবে প্রায় ৫০ ভাগ। নির্মাণ শিল্প হুমকির মুখে পড়লে এর সাথে জড়িত লিংকেজ শিল্পও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
শুধু ফ্ল্যাটের দাম নয় এতে রাজধানীতে বাসা ভাড়াও অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মূল শহর থেকে অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে ব্যাপক অসামঞ্জস্য তৈরি হবে। ফলে ভবিষ্যতে মূল শহর অর্থাৎ সিটি করপোরেশন এলাকার বেশিরভাগ মানুষ, ব্যয়ভার বহন করতে পারবে না। এ বিষয়ে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট (প্রথম) কামাল মাহমুদ বলেন, যেভাবে ড্যাপের চিন্তা করা হচ্ছে তাতে আবাসন সেক্টরে ধস নামবে। যার কারণে ঢাকায় নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা বাসা ভাড়া দিয়ে থাকতে পারবেন না। যার সরাসরি প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। তাই ড্যাপ নিয়ে আমরা বেশ দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতার মধ্যে আছি।
জানা যায়, সমগ্র রাজউক এলাকায় মোট স্থাপনা প্রায় ২১ লাখ। এর মধ্যে ৮ তলা অধিক উচ্চতার ভবন মাত্র ১৬ শতাংশ। আর এই আয়তন বা উচ্চতার ভবন লাগাম টানা শহরের জনঘনত্ব কমানোর হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করা বাস্তব সম্মত নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, শহরের নাগরিক সুবিধা না বাড়িয়ে ভবনের আয়তন কমিয়ে ঢাকা শহরের জনঘনত্ব কমানোর প্রচেষ্টা কেবল জনদুর্ভোগ বাড়াবে। বাংলাদেশের মত জনবহুল দেশে যেখানে জমির পরিমাণ অপ্রতুল সেখানে ভবনের উচ্চতা না কমিয়ে বরং তা বাড়ালে জনগণের আবাসন সমস্যার সমাধান হবে দ্রুত।
উল্লেখ্য, ড্যাপের হিসেব মতে, রাজউকের ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকায় জনঘনত্বকে বিবেচনা করে ফার (ফ্লোর এরিয়া রেশিয়ো) নির্ধারণ করা হয়েছে। এই পরিকল্পনায় ঢাকা কেন্দ্রীয় এলাকার (উত্তর ও দক্ষিণ সিটি) জন্য প্রতি একরে ২০০ জন, পুরান ঢাকায় প্রতি একরে ২৫০ জন; গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, পূর্বাচল, ঝিলমিল নগর এলাকার জন্য প্রতি একরে ১৮০ জন, অন্যান্য নগর এলাকার জন্য প্রতি একরে ১৫০ জন (কৃষি এলাকা ছাড়া) ধরা হয়েছে। এর মাধ্যমে কোন এলাকায় কত আয়তনের ভবন নির্মাণ হবে তা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এ প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব। উপার্জনের জন্য, চিকিৎসার জন্য, উন্নত শিক্ষার জন্য বিচার সালিশের জন্য দেশের জনগণের ঢাকাই একমাত্র কেন্দ্রস্থল। এই সুব্যবস্থাগুলো যতক্ষণ পর্যন্ত অন্যত্র তৈরি করা না যাবে ততক্ষণ ঢাকা শহরে জনসংখ্যা কমানো বা ঢাকা শহরে অভিবাসনে বাধা প্রদান অলিক স্বপ্ন মাত্র বলে মনে করছেন এই সংগঠনের নেতারা।
রাজধানীতে ইমারত বা ভবন নির্মানের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা আছে। ‘ঢাকা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮’ মোতাবেক নির্মাণযোগ্য ভবনে যে পরিমাণ ফার বা বর্গফুট পাওয়া যায় প্রস্তাবিত ড্যাপে তা অনেক কমে গেছে। এখন ২০ ফুট রাস্তা সংলগ্ন পাঁচ কাঠা জমিতে গ্রাউন্ড ফ্লোরসহ আটতলার ভবনে মোট ১৩৫০০ বর্গফুট নির্মাণের অনুমতি পাওয়া যায়। প্রস্তাবিত ড্যাপের বিধিমালা অনুযায়ী ওই জায়গায় ৫ তলা ভবনে মোট ৯০০০ বর্গফুট ভবন নির্মাণের অনুমতি পাওয়া যাবে। ২০ ফুটের চেয়ে ছোট রাস্তার ক্ষেত্রে ভবনের উচ্চতা ৩ থেকে ৪ তলার বেশি হবে না। আয়তন অনেক কমে যাবে। এতে নির্মাণযোগ্য ফ্ল্যাট সংখ্যা কমে আসার কারণে ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। তখন ফ্ল্যাটের দাম নূন্যতম ৫০ শতাংশ বাড়বে। যা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। এর ফলে বিভিন্ন সেক্টরে ব্যাপকভাবে সমস্যা দেখা দিবে।
এ বিষয়ে ড্যাপ প্রকল্প সূত্রে জানা যায় যে, তারা রাস্তার প্রশস্ততার ব্যাপারটাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। মানুষের হেঁটে যাতায়াতের সুযোগ, নৌপথকে কাজে লাগানোর সুযোগকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। পরিবেশকে সংরক্ষণের দিকটা গুরুত্ব পাচ্ছে সবার উর্ধ্বে।
কিন্তু আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, ব্যাপকভাবে ভবনের আয়তন হ্রাসের কারণে ফ্লাটের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতা শূন্যতা দেখা দিবে। এতে নির্মাণ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি এ শিল্পের সাথে জড়িত সিরামিক, স্যানেটারি, টাইলস, ইলেকট্রিক কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ, রড, সিমেন্ট, পাথর, বালি, পেইন্ট ইন্ডাস্ট্রিজসহ অন্যান্য ২৬৯ টি লিংকেজ শিল্প গভীর সংকটের মধ্যে পড়বে। যা প্রভাব ফেলবে অর্থনীতিতে। এতে করোনা মহামারীর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি আরও ব্যাপাপ হুমকির মুখে পড়ে যাবে।
নগর পরিকল্পনাবিদরাও ড্যাপ প্রকল্পে দুরদর্শীতার অভাব আছে বলে মনে করেন। এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, ড্যাপে যেভাবে ফার নির্ধারণ করা হয়েছে, এতে ভবিষ্যতে মূল শহর অর্থাৎ সিটি করপোরেশন এলাকায় বেশিরভাগ মানুষ, ব্যয়ভার বহন না করতে পেরে থাকতে পারবে না। তাদের মূল শহরের বাইরে চলে যেতে হবে। ড্যাপে এলাকাভিত্তিক যে ফার নির্ধারণ করা হয়েছে তা ত্রুটিপূর্ণ। আমরা এ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছি। আশা করছি সরকার এটি বিবেচনা করবে।