• বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:০৪ পূর্বাহ্ন
  • ই-পেপার
সর্বশেষ
গুইমারায় ট্রাক ও মিনিট্রাক চালক সমবায় সমিতি’র শুভ উদ্বোধন ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হামাস বিতর্কিত ভূমিকায় জড়িত পুলিশসহ সব সরকারি কর্মকর্তাকে ধরা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা বিদ্বেষপূর্ণ খালেদা জিয়া-তারেকসহ সব আসামি খালাস পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার কাজ চলছে: আইজিপি পদত্যাগ করলেন টিউলিপ প্রধান উপদেষ্টার কাছে চার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর নির্বাচনের আগেই গণহত্যার বিচারের আশা আইন উপদেষ্টার বিপুলসংখ্যক গাড়ির ইঞ্জিন ভেজাল জ্বালানি তেলে নষ্ট হলেও পর্যাপ্ত নজরদারি নেই বছরের পর বছর নিলামের অপেক্ষায় কয়েক হাজার পণ্যভর্তি কনটেইনার

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবকাঠামোগতভাবে পিছিয়ে

Reporter Name / ৮২ Time View
Update : শনিবার, ৭ জানুয়ারী, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক :
অর্থনৈতিকভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলেও অবকাঠামোগতভাবে পিছিয়ে রয়েছে। ওই মহাসড়কের ওপর দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ নির্ভরশীল। তাছাড়া বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার আর ৩ পার্বত্য জেলার কারণে মহাসড়কটি দেশের প্রধান পর্যটন করিডোরও। ফলে প্রতি বছরই মহাসড়কে চলাচলরত যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে। আর ওই বৃদ্ধির হার বিভিন্ন সংস্থার প্রাক্কলনের চেয়েও বেশি। ভবিষ্যতে মহাসড়কটি এশিয়ান হাইওয়ে ও সাসেক করিডোরে সংযুক্ত হলে চলাচলরত যানবাহনের সংখ্যা আরো বেশি হবে। কিন্তু গত এক দশকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে। ওই টাকা খরচ করে ২০১৭ সালে মহাসড়কটি দুই থেকে চার লেনে উন্নীত করা হয়। অথচ সরকার গত এক দশকে ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-সিলেটের মতো তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ করিডোরগুলোয় তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি বিনিয়োগ করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বর্তমানে যে পরিমাণ যানবাহন চলছে তা সক্ষমতার চেয়ে বেশি। ভবিষ্যতে যানবাহন চলাচলের সংখ্যা আরো বাড়বে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় বিনিয়োগ না হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্য পরিবহনে সময় ও অর্থ লাগছে বেশি। যানজটের কারণে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন চলাচলের সংখ্যা প্রাক্কলনের চেয়ে বেশি হারে বাড়ছে। ২০১৬ সালে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) করা এক সমীক্ষায় বলা হয় ২০২৬ সাল নাগাদ মহাসড়কটিতে প্রতিদিন গড়ে ২২ হাজার ৭৫টি যানবাহন চলতে পারে। আর ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) করা আরেক জরিপে বলা হয়, ২০২২ সালেই মহাসড়কটিতে প্রতিদিন ২৬ হাজার যানবাহন চলতে পারে। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) জরিপ বলছে, ২০২০ সালের মধ্যেই মহাসড়কটিতে প্রতিদিন চলাচলরত যানবাহনের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
সূত্র জানায়, সক্ষমতার চেয়ে বেশি যানবাহন চলাচল করায় ইতোমধ্যে ২০১৭ সালে চালু হওয়া ঢাকা-চট্টগ্রামম চার লেন মহাসড়ক অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ করে ফেলেছে। ক্রমবর্ধমান যানবাহনের চাপ সামাল দিতে দ্রুত মহাসড়কটি সম্প্রসারণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রয়োজন হলেও এখনো দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। দেশের সড়ক-মহাসড়ক উন্নয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থা সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের মহাসড়কটির সম্প্রসারণের জন্য এখন কেবল একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। তবে তার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল এখনো নিযুক্ত করা হয়নি। যদিও সরকার গত এক দশকে ঢাকা-চট্টগ্রামের চেয়ে তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ করিডোরগুলোয় কয়েক গুণ বেশি বিনিয়োগ করেছে। তার মধ্যে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী-মাওয়া-ভাঙ্গা অংশে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা খরচ করে গড়ে তোলা হয়েছে ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে। ঢাকা-টাঙ্গাইলের ৭০ কিলোমিটার মহাসড়ক ৬ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা খরচ করে চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। ১৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে টাঙ্গাইল থেকে রংপুর পর্যন্ত আরো ১৯২ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে। তাছাড়া প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা খরচ করে ২০৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের চার লেনে উন্নীত করার কাজ সম্প্রতি শুরু হয়েছে। বিপরীতে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকায় চার লেনে উন্নীত করা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি অবকাঠামোগতভাবে এখনো পিছিয়ে রয়েছে। এক দশকের মধ্যে চার লেনে উন্নীত হওয়া অন্যান্য মহাসড়কে ধীরগতির ও স্থানীয় যানবাহন চলাচলের জন্য পৃথক লেন থাকলেও ঢাকা-চট্টগ্রামে তা নেই। হাটবাজার ও গুরুত্বপূর্ণ মোড় বা ইন্টারসেকশনগুলোয় ফ্লাইওভার-ওভারপাস-আন্ডারপাস রাখা হয়নি পর্যাপ্ত। তাছাড়া মহাসড়কটি নির্মাণে দুর্বল পরিকল্পনা আর নিম্নমানের নির্মাণকাজ অবকাঠামোগত ওসব দুর্বলতা আরো প্রকট করেছে।
সূত্র আরো জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটির দুর্বলতা ঢাকতে দুটি প্রকল্প বর্তমানে চলমান আছে। তার একটির মাধ্যমে মহাসড়কটি রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাতে খরচ হচ্ছে ৭৯৩ কোটি টাকা। আর আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ওভারপাস ও আন্ডারপাস তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু ওই বিনিয়োগ প্রয়োজনের তুলনায় মহাসড়কটির সক্ষমতা বাড়াতে পারবে না।
এদিকে পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিকল্পনা হলো সড়ক নির্মাণের প্রথম ধাপ। সাধারণত একটি সড়ক ২০ বছরের পরিকল্পনা করে নির্মাণ করা হয়। চালুর পর থেকে ২০ বছর পর্যন্ত কী পরিমাণ যানবাহন চলবে ওই হিসাব করেই সে অনুযায়ী নকশা করতে হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি শুরুতেই এক্সপ্রেসওয়ে মানে নির্মাণের সুযোগ ছিল। সেজন্য দুই পাশে সার্ভিস লেন ও যানজটপ্রবণ মোড় বা হাটবাজার এলাকাগুলোয় ফ্লাইওভার, ইন্টারচেঞ্জের মতো অবকাঠামো তৈরি করলেই হতো। খরচও খুব বেশি হতো না। কিন্তু অদূরদর্শী পরিকল্পনার কারণে সেটা করা হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতিতে মহাসড়কটি সম্প্রসারণের সুযোগ কমে। চার লেন হয়ে যাওয়ার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশে অনেক অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে। ওসব অবকাঠামো উচ্ছেদ করা এখন অনেক কঠিন ও ব্যয়বহুল হবে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. ইসহাক জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এখন যে অবস্থায় আছে তা যানবাহনের বিদ্যমান ট্রাফিকের জন্য উপযোগী না। মহাসড়কটি আরো প্রশস্ত করা দরকার। তাছাড়া সড়কের ধারে প্রচুর বাড়িঘর আছে, হাটবাজার আছে। ধীরগতির যানবাহনের জন্য বা অযান্ত্রিক যানবাহনের জন্য কোনো লেন নেই। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি চাহিদার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করে এখনো নির্মাণ করা যায়নি। তবে মহাসড়কটি সম্প্রসারণের একটি উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে। ওই লক্ষ্যে একটি ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) করা হয়েছে। ওই মহাসড়কে যত লেন প্রয়োজন বা যে ধরনের সার্ভিস লেন ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা প্রয়োজন, সেগুলো এ স্টাডির মাধ্যমে নিরূপণ করা হবে। সেজন্য পরামর্শক নিয়োগের কাজ চলমান আছে। পরামর্শকরা প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও নকশা করে দেবে। এডিবির (এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক) ঋণসহায়তায় কাজটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সমীক্ষা ও নকশার কাজ শেষ করা এবং বৈদেশিক ঋণ সংগ্রহ করে মহাসড়কটি সম্প্রসারণ ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধির কাজটি সম্পন্ন করতে কয়েক বছর লেগে যাবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category