১০:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫ | ই-পেপার

তেলেগুদের পুনর্বাসনে কী ব্যবস্থা, জানতে চায় মানবাধিকার কমিশন

  • দৈনিক আইন বার্তা
  • আপডেট সময়ঃ ০৭:৩৩:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ১১৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ধলপুর এলাকার তেলেগু কলোনির বাসিন্দাদের উচ্ছেদের আগে তাদের জন্য বিকল্প আবাসনের কী ব্যবস্থা করা হয়েছে, তা আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জানাতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে (ডিএসসিসি) নির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। একই সঙ্গে কমিশন তেলেগু কলোনির বাসিন্দাদের উচ্ছেদ আতঙ্ক থেকে অব্যাহতি দেওয়ার নির্দেশনাও দিয়েছে। আজ বুধবার কমিশন চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক আদেশে ডিএসসিসিকে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কমিশন চেয়ারম্যান ও সার্বক্ষণিক সদস্যসহ অন্য কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধিদল সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তেলেগু জনগোষ্ঠীর মানুষ ১৯৯১ সাল থেকে বর্ণিত স্থানে বসবাস করে আসছে। সেখানে অত্যন্ত স্বল্প পরিসরে অনেক মানুষের বসবাস লক্ষ্য করা যায়, যা অত্যন্ত অমানবিক। সেখানে দুটি চার্চ, একটি মন্দির ও একটি বিদ্যালয় (অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত) রয়েছে। কমিশন মনে করে, যথাযথ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে তেলেগু কলোনির স্থাপনাসমূহ ভেঙে সেখানকার বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করলে তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আসতে পারে। যা স্পর্শকাতর ও স্বাধীনতার চেতনা ধারণকারী অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের জন্য শুভকর নয়। বিদ্যালয় থাকলে সেখানকার শিক্ষার্থীরা শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। গত বৃহস্পতিবার ধলপুরের তেলেগু সম্প্রদায়ের মাতব্বরদের ডিএসসিসি মেয়র কার্যালয়ে ডেকে কলোনি ছাড়ার মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মাতব্বরদের থানায় ডেকে হুমকি দিয়ে বিনা প্রতিবাদে কলোনি ছাড়তে বলেন। এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ধলপুরে তেলেগু সম্প্রদায়ের লোকদের আবাসস্থল পরিদর্শন করেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ। এসময় কমিশন চেয়ারম্যান উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে সামাজিক নানা কুসংস্কারের কারণে তেলেগু সম্প্রদায়ের মানুষদের অন্য কোথাও গিয়ে বসবাসের উপায় নেই। তাহলে তারা যাবে কোথায়? চলবে কীভাবে? তারাও তো এদেশের নাগরিক! তাই, উচ্ছেদের আগে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা উচিত। ধলপুর কলোনিতে তেলেগুদের ধর্মীয় প্রার্থনাস্থল, মন্দির ও গির্জা ছাড়াও রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরপরও হঠাৎ কেন তাদের উচ্ছেদের নির্দেশ দেওয়া হলো কিংবা এ ধরনের উদ্যোগে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কী ব্যবস্থা হবে, এসব বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন ড. কামাল উদ্দিন। এদিকে ডিএসসিসিকে দেওয়া আদেশে বলা হয়েছে, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজব্যবস্থা এদের গ্রহণ না করে এখনো দূরে সরিয়ে রেখেছে। যে কারণে যে কোনো স্থানে এই পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পক্ষে বাসা ভাড়া নেওয়ার সুযোগ বা যে কোনো স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ সীমিত। যথাযথভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে তাদের উচ্ছেদ করা হলে তারা চরম অসহায়ত্বের সম্মুখীন হবে। এতে রাষ্ট্র ও সমাজের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে। ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ভারতের তেলেঙ্গনা রাজ্য থেকে তেলেগুদের ‘মেথর’ হিসেবে কাজ করানোর জন্য এ দেশে নিয়ে আসা হয়েছিল। এরপর সারাদেশে ‘মেথর পট্টি’ গড়ে তুলে তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। যদিও কালের পরিক্রমায় জাত মেথরদের সুপরিকল্পিতভাবে তাদের পুরুষানুক্রমিক পেশা থেকে বঞ্চিত করে সেখানে বাঙালিদের নিয়োগের মধ্য দিয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে অ্যাখ্যা দেওয়া হয়। এরপর তেলেগুদের অন্য কোনো পেশায় নিয়োগে কোনো সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা কর্তৃক কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ স্বাধীনতালাভের পর থেকে দীর্ঘকাল ধরে তেলেগু সম্প্রদায়ের একটি অংশ যাত্রাবাড়ী থানার ধলপুরে প্রায় ১৫ একর জায়গায় ঘরবাড়ি স্থাপন করে বসবাস করে আসছেন। যেখানে বর্তমানে ২৬০টি তেলেগু পরিবারের বসবাস। উচ্ছেদের নির্দেশনার প্রতিবাদে গত শুক্রবার সকালে ধলপুরের তেলেগু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষেরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নেতারা মানববন্ধনে অংশ নিয়ে সংহতি জানান। এর দুদিন পর গত ১২ ফেব্রুয়ারি সকালে ৮-৯ গাড়ি পুলিশ নিয়ে কলোনিতে ভাঙচুর চালানো হয়। বিকল্প হিসেবে যে জায়গায় তাদের যেতে বলা হয় সেটিও বেদখলি জমি। বুলডোজার দিয়ে ভাঙচুরের সময় দেওয়াল চাপায় দুজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। ডিএসসিসি বলছে, বিকল্প পুনর্বাসন ব্যবস্থা ছাড়া তেলেগু সম্প্রদায়ের মানুষদের উচ্ছেদ করা হবে না। ১৯৯১ সাল থেকে বসবাসরত বাংলাদেশের নাগরিক ধলপুরের তেলেগু সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের কলোনি থেকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা ছাড়া উৎখাতের বিষয়টি নিতান্তই অমানবিক ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে মনে করেন মানবাধিকার কমিশন।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

চট্টগ্রামে মাঠ রক্ষার আন্দোলনে মেয়র শাহাদাতের একাত্মতা ঘোষণা

তেলেগুদের পুনর্বাসনে কী ব্যবস্থা, জানতে চায় মানবাধিকার কমিশন

আপডেট সময়ঃ ০৭:৩৩:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ধলপুর এলাকার তেলেগু কলোনির বাসিন্দাদের উচ্ছেদের আগে তাদের জন্য বিকল্প আবাসনের কী ব্যবস্থা করা হয়েছে, তা আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জানাতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে (ডিএসসিসি) নির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। একই সঙ্গে কমিশন তেলেগু কলোনির বাসিন্দাদের উচ্ছেদ আতঙ্ক থেকে অব্যাহতি দেওয়ার নির্দেশনাও দিয়েছে। আজ বুধবার কমিশন চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক আদেশে ডিএসসিসিকে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কমিশন চেয়ারম্যান ও সার্বক্ষণিক সদস্যসহ অন্য কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধিদল সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তেলেগু জনগোষ্ঠীর মানুষ ১৯৯১ সাল থেকে বর্ণিত স্থানে বসবাস করে আসছে। সেখানে অত্যন্ত স্বল্প পরিসরে অনেক মানুষের বসবাস লক্ষ্য করা যায়, যা অত্যন্ত অমানবিক। সেখানে দুটি চার্চ, একটি মন্দির ও একটি বিদ্যালয় (অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত) রয়েছে। কমিশন মনে করে, যথাযথ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে তেলেগু কলোনির স্থাপনাসমূহ ভেঙে সেখানকার বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করলে তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আসতে পারে। যা স্পর্শকাতর ও স্বাধীনতার চেতনা ধারণকারী অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের জন্য শুভকর নয়। বিদ্যালয় থাকলে সেখানকার শিক্ষার্থীরা শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। গত বৃহস্পতিবার ধলপুরের তেলেগু সম্প্রদায়ের মাতব্বরদের ডিএসসিসি মেয়র কার্যালয়ে ডেকে কলোনি ছাড়ার মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মাতব্বরদের থানায় ডেকে হুমকি দিয়ে বিনা প্রতিবাদে কলোনি ছাড়তে বলেন। এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ধলপুরে তেলেগু সম্প্রদায়ের লোকদের আবাসস্থল পরিদর্শন করেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ। এসময় কমিশন চেয়ারম্যান উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে সামাজিক নানা কুসংস্কারের কারণে তেলেগু সম্প্রদায়ের মানুষদের অন্য কোথাও গিয়ে বসবাসের উপায় নেই। তাহলে তারা যাবে কোথায়? চলবে কীভাবে? তারাও তো এদেশের নাগরিক! তাই, উচ্ছেদের আগে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা উচিত। ধলপুর কলোনিতে তেলেগুদের ধর্মীয় প্রার্থনাস্থল, মন্দির ও গির্জা ছাড়াও রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরপরও হঠাৎ কেন তাদের উচ্ছেদের নির্দেশ দেওয়া হলো কিংবা এ ধরনের উদ্যোগে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কী ব্যবস্থা হবে, এসব বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন ড. কামাল উদ্দিন। এদিকে ডিএসসিসিকে দেওয়া আদেশে বলা হয়েছে, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজব্যবস্থা এদের গ্রহণ না করে এখনো দূরে সরিয়ে রেখেছে। যে কারণে যে কোনো স্থানে এই পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পক্ষে বাসা ভাড়া নেওয়ার সুযোগ বা যে কোনো স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ সীমিত। যথাযথভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে তাদের উচ্ছেদ করা হলে তারা চরম অসহায়ত্বের সম্মুখীন হবে। এতে রাষ্ট্র ও সমাজের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে। ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ভারতের তেলেঙ্গনা রাজ্য থেকে তেলেগুদের ‘মেথর’ হিসেবে কাজ করানোর জন্য এ দেশে নিয়ে আসা হয়েছিল। এরপর সারাদেশে ‘মেথর পট্টি’ গড়ে তুলে তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। যদিও কালের পরিক্রমায় জাত মেথরদের সুপরিকল্পিতভাবে তাদের পুরুষানুক্রমিক পেশা থেকে বঞ্চিত করে সেখানে বাঙালিদের নিয়োগের মধ্য দিয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে অ্যাখ্যা দেওয়া হয়। এরপর তেলেগুদের অন্য কোনো পেশায় নিয়োগে কোনো সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা কর্তৃক কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ স্বাধীনতালাভের পর থেকে দীর্ঘকাল ধরে তেলেগু সম্প্রদায়ের একটি অংশ যাত্রাবাড়ী থানার ধলপুরে প্রায় ১৫ একর জায়গায় ঘরবাড়ি স্থাপন করে বসবাস করে আসছেন। যেখানে বর্তমানে ২৬০টি তেলেগু পরিবারের বসবাস। উচ্ছেদের নির্দেশনার প্রতিবাদে গত শুক্রবার সকালে ধলপুরের তেলেগু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষেরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নেতারা মানববন্ধনে অংশ নিয়ে সংহতি জানান। এর দুদিন পর গত ১২ ফেব্রুয়ারি সকালে ৮-৯ গাড়ি পুলিশ নিয়ে কলোনিতে ভাঙচুর চালানো হয়। বিকল্প হিসেবে যে জায়গায় তাদের যেতে বলা হয় সেটিও বেদখলি জমি। বুলডোজার দিয়ে ভাঙচুরের সময় দেওয়াল চাপায় দুজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। ডিএসসিসি বলছে, বিকল্প পুনর্বাসন ব্যবস্থা ছাড়া তেলেগু সম্প্রদায়ের মানুষদের উচ্ছেদ করা হবে না। ১৯৯১ সাল থেকে বসবাসরত বাংলাদেশের নাগরিক ধলপুরের তেলেগু সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের কলোনি থেকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা ছাড়া উৎখাতের বিষয়টি নিতান্তই অমানবিক ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে মনে করেন মানবাধিকার কমিশন।