নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশের নৌপথে অবৈধ নৌযানের দৌরাত্ম্য চলছে। সারাদেশে বৈধ নৌযানের চেয়ে অবৈধ নৌযানের সংখ্যা বেশি। আর অবৈধ নৌযানগুলো হচ্ছে মৃত্যু ফাঁদ। কারণ ওসব নৌযানে জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম লাইফ জ্যাকেট ও বয়া কিছুই থাকে না। বরং মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন নৌপথে চলছে ইঞ্জিনচালিত অবৈধ নৌযানগুলো। আর নৌযান ডুবি, দুর্ঘটনায় নৌপথের যাত্রীরা মারা যাচ্ছে। আইনগতভাবে নিবন্ধনহীন ১৬ হর্স শক্তির বেশি ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও সেজন্য কেউ কোন ধরনের শাস্তির সম্মুখীন হয়েছে বলে নজির নেই। নৌ-মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ৩০ বছরে সারাদেশে প্রায় ১ হাজার ছোট-বড় নৌ দুর্ঘটনা ও নৌডুবির ঘটনা ঘটেছে। তাতে ৪ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। আর সম্পদের ক্ষতির পরিমাণ কোটি কোটি টাকা। বর্তমানে সারাদেশে নিবন্ধিত নৌযানের সংখ্যা ১৩ হাজার ৪৮৬টি। কিন্তু অনিবন্ধিত ট্রলার, বালুবাহী জাহাজ, স্পিডবোট মিলিয়ে অন্তত ২০ হাজার অবৈধ নৌযান নদীপথে চলাচল করছে। নৌযান দুর্ঘটনা বা ডুবিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেই উদ্ধারাভিযান, তদন্ত কমিটি গঠন, তদন্ত প্রতিবেদন দাখিললের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। বাস্তবে কার্যকর কোনো প্রতিকার নেই।
সূত্র জানায়, নৌ দুর্ঘটনার পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে লঞ্চ চালকের অদক্ষতা, লঞ্চের কারিগরি ত্রুটি, ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ-তিনগুণ যাত্রী বহন, চলার পথে দুই লঞ্চের মধ্যে তুমুল প্রতিযোগিতা, ফিটনেসের অভাব, বেপরোয়াভাবে লঞ্চ চালানো, পর্যাপ্ত লাইফবয়া না থাকা উল্লেখযোগ্য। তবে চালকের অদক্ষতা ও ত্রুটিপূর্ণ নৌযানের কারণেই বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে। সারাদেশে কতো সংখ্যক অনিবন্ধিত নৌযান চলাচল তার কোনো পরিসংখ্যান সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছে নেই। তাছাড়া কোন অঞ্চলের নদ-নদীতে কি ধরনের যাত্রী বা পণ্যবাহী নৌযান চলাচল করছে তারও কোন তথ্যভা-ার নেই। অবৈধ ওসব নৌযান চলাচলে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে নৌ খাতে বিশৃঙ্খলা বাড়ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুর্ঘটনাও। নিয়মানুযায়ী নৌযানের নক্সা নৌ-পরিবহন অধিদফতর থেকে অনুমোদনের পর ওই নৌযান চলাচল করতে পারবে। কিন্তু বাস্তবে অনুমোদনহীন বা লাইসেন্সবিহীন নৌযানের ছড়াছড়ি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। সরকারের দুই সংস্থা নৌ-মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও নৌ-পরিবহন অধিদফতরের নৌযানের সার্বিক কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্ব।
সূত্র আরো জানায়, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ১৩ হাজার ৪৮৬টি নিবন্ধিত নৌযান ছিল। কিন্তু তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি রয়েছে অনিবন্ধিত নৌযান। সারাদেশে অনিবন্ধিত বালুবাহী (বাল্কহেড) জাহাজ, ট্রলার ও স্পিডবোট মিলিয়ে অন্তত ২০ হাজার নৌযান চলছে। আইনগতভাবে নিবন্ধনহীন ১৬ হর্স শক্তির বেশি ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। মূলত ম্যানেজ করেই প্রভাবশালীদের মাধ্যমে ওসব নৌযান অবৈধ চলছে। আর তারা এতোই প্রভাবশালী যে তাদের কাছে যারা নিয়ম মেনে নৌযান পরিচালনা করছে তারা অনেক সময়ই অসহায় হয়ে পড়ছে।