নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশি পাইলটের সঙ্কটে ভুগছে নতুন চালু হতে যাওয়া এয়ারলাইন্সগুলো। বর্তমানে দেশি ৩টি এয়ারলাইন্স যাত্রী পরিবহন করছে এবং আরো ২টি এয়ারলাইন্স যাত্রা শুরুর অপেক্ষায় আছে। কিন্তু দেশি পাইলটের সঙ্কটে ওসব এয়ারলাইন্সে বিদেশি পাইলটরা কাজ করছে। দেশে নতুন করে চালু হতে যাওয়া এয়ারলাইন্সগুলো দেশীয় অভিজ্ঞ পাইলটের অভাবে সঙ্কটে ভুগছে। ফলে দেশের এয়ারলাইনগুলোকে উচ্চ ব্যয়ে বিদেশি পাইলটের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। দেশে পাইলট ট্রেনিং অ্যাকাডেমিগুলোতে প্রশিক্ষণ জটিলতাসহ নানা সমস্যা দূর না করা গেলে আরো বাড়বে ওই সঙ্কট। এভিয়েশন খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের এভিয়েশন খাতে অবকাঠামো উন্নয়নে নানা উদ্যোগ থাকলেও পাইলট তৈরির জন্য নেই সরকারি কোনো উদ্যোগ। বর্তমানে দেশে ৩টি পাইলট প্রশিক্ষণ একাডেমি রয়েছে। তার মধ্যে আরিরাং ফ্লাইং স্কুলের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আর সীমিত পরিসরে বাংলাদেশ ফ্লাইং অ্যাকাডেমি, গ্যালাক্সি ফ্লাইং অ্যাকাডেমির কার্যক্রম চালাচ্ছে। দেশের পাইলট ট্রেনিং অ্যাকাডেমিগুলো উড়োজাহাজ ও প্রশিক্ষক সঙ্কট, জ¦ালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিসহ নানা সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। ফলে ব্যয় বেশি হওয়ায় ফ্লাইং অ্যাকাডেমিগুলোতে পড়তে প্রতিষ্ঠানভেদে ৩০-৩৫ লাখ টাকা খরচ হয়। আর সেজন্যই দেশে চাহিদার বিপরিতে সীমিত সংখ্যক পাইলট প্রস্তুত হচ্ছে। সূত্র জানায়, পাইলট হতে একজন শিক্ষার্থীকে ফ্লাইং অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ শেষে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) লাইসেন্স পেতে পরীক্ষা দিতে হয়। পাইলট হতে বয়স ন্যূনতম ১৬ বছর এবং শারীরিকভাবে সক্ষম হতে হয়। গ্রাউন্ড ও ফ্লাইং প্রশিক্ষণ ও কমপক্ষে ৪০ ঘণ্টা ফ্লাইং করলে একজন শিক্ষার্থী বেবিচকের প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্সের (পিপিএল) জন্য আবেদন করতে পারে। পিপিএল লাইসেন্স পাওয়ার পর বেবিচকের কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্সের (সিপিএল) জন্য আবেদন করা যায়। সেজন্য থাকতে হবে ১৫০ ঘণ্টা উড়ার অভিজ্ঞতা আর সময় লাগে দেড় থেকে তিন বছর। তবে লাইসেন্স পাওয়ার পরই একজন পাইলট যে কোনো উড়োজাহাজ চালাতে পারবে না। যে ধরনের উড়োজাহাজ চালাবে ওই উড়োজাহাজের জন্য সিমুলেটর ট্রেনিং নিতে হয়। সাধারণত যে এয়ারলাইনে চাকরি করে পাইলটদের ওই এয়ারলাইনের মাধ্যমে নির্ধারিত উড়োজাহাজের জন্য সিমুলেটর ট্রেনিং দেয়া হয়। সূত্র আরো জানায়, এয়ার অ্যাস্ট্রা আগামী জুলাই নাগাদ যাত্রী পরিবহনে যুক্ত হতে চেষ্টা চালাচ্ছে। এয়ারলাইন্সটি প্রাথমিকভাবে ৪টি উড়োজাহাজ দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে ফ্লাইট পরিচালনা করবে। আর ৪টি উড়োজাহাজের জন্য কমপক্ষে ৪৮ জন পাইলট প্রয়োজন। কিন্তু দেশি পাইলটের নিয়ে এয়ারলাইন্সটি দুশ্চিন্তায় রয়েছে। বর্তমানে চালু থাকা নভোএয়ারসহ দুটি বেসরকারি বিমানে কমপক্ষে ৪০ জন বিদেশি পাইলট কাজ করছে। দেশি পাইলটের সঙ্কটের কারণেই এয়ারলাইন্সগুলোকে উচ্চ ব্যয়ে বিদেশি পাইলটদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। সামনে আরো পাইলট সংকট আরো তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে বেসরকারি এয়ারলাইন্স সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমানে দেশে পাইলট সংকট খুবই তীব্র। দেশে যেভাবে পাইলটের চাহিদা বেড়েছে, ওই অনুপাতে নতুন পাইলট তৈরি হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে যদি দেশি পাইলট না পাওয়ায় তাহলে দেশি এয়ারলাইন্সগুলোকে বিদেশি পাইলট খুঁজতে হবে। কিন্তু বিদেশি পাইলট নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়াও সহজ নয়। বর্তমানে দেশে এয়ারলাইন্সের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে ফ্লাইটের সংখ্যাও। ফলে পাইলট চাহিদা আরো বাড়বে। সঙ্কট নিরসণে উদ্যোগ না নিলে সঙ্কট আরো তীব্র হবে। কিন্তু দেশে পাইলট প্রশিক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। আর বিদেশি পাইলট নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়াটি যেমন জটিল, তেমনি ব্যয়ও বেশি। যদিও এভিয়েশন খাতে দক্ষ জনবল সৃষ্টির জন্য সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করছে। সংশ্লিষ্টরা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পাইলট প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন।
এদিকে এ বিষয়ে বেবিচকের ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশনস বিভাগের সদস্য চৌধুরী এম জিয়াউল কবির জানান, দেশে পাইলট সঙ্কট থাকা সত্ত্বেও বিনা প্রয়োজনে বিদেশি পাইলট নিয়োগ নিয়ন্ত্রণে নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন একজন বিদেশি পাইলট এলেও একটানা দেড় বছরের বেশি কাজ করতে পারবে না। আবার বাংলাদেশের চেয়ে কম রেটিং এমন দেশ থেকে পাইলট আনা যাবে না।