নিজস্ব প্রতিবেদক :
নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৫ সালে পুরোপুরি চালু হয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের আর আলাদা করে কোচিং করার ‘প্রয়োজন পড়বে না’ বলে আশা প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এইচএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন আজ রোববার ঢাকার বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, ২০২৩ সাল থেকে ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণিতে, পরের বছর অষ্টম-নবমে এবং ২০২৫ সালে দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হচ্ছে। “২০২৫ এরপর থেকে আমরা সকল ক্লাসে নতুন শিক্ষাক্রমে যেতে পারব। তখন যে ধরনের শিক্ষাক্রম হবে, সেখানে শেখানোর পদ্ধতি যেরকম হবে, তাতে আর কোচিংয়ের প্রয়োজন থাকবে না। “সেখানে এসএসসি, এইচএসসির কোচিংয়ের প্রয়োজন হবে না। প্রি-প্রাইমারি থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত ২০২৫ সালের পরে আর কোচিংয়ের প্রয়োজন হবে না।” কোভিড মহামারী ও বন্যার কারণে নির্ধারিত সময়ের সাত মাস পর গতকাল রোববার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বসেছে ১২ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। গতকাল রোববার বেলা ১১টায় দেশের ২ হাজার ৬৪৯টি কেন্দ্রে এ বছরের উচ্চমাধ্যমিকপরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর আগেই ঢাকায় বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। পরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। সরকারের নির্দেশনার পরও পরীক্ষা চলাকালে কোচিং সেন্টার কেন বন্ধ হচ্ছে না- এমন প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমরা নতুন যে শিক্ষাক্রমে গিয়েছি, সেখানে এই কোচিংয়ের প্রয়োজনীয়তা সেভাবে আর থাকবে না। পুরো শিক্ষাটাই করে করে শিখতে হবে। সে ক্ষেত্রে কোচিংয়ের প্রয়োজনীয়তা থাকবে বলে আমার মনে হয় না। “আমরা শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তনের মাধ্যমে এর (কোচিং বন্ধ) পরিবর্তন করতে পারব। এমনিতে বলে বাধ্য করে এটাকে পরিবর্তন করা যাবে না।” কোচিং বন্ধের নির্দেশনা আগে থেকেই দেওয়া রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “কোচিং সেন্টারে অনেক ধরনের কোচিং চলে, যারা কোচিং সেন্টার চালান, তারা একটা মাস এই ক্ষতি নিতে চান না। বন্ধের জন্য নানা ধরনের চেষ্টা আমরাও চালাই। তবে এটা বন্ধ করা একার পক্ষে সম্ভব না। আপনারা সাংবাদিকরাও চিহ্নিত করে দিলে আমরা মাঠ প্রশাসনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেব।” ‘কিছু ক্ষেত্রে’ কোচিংয়ের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে দীপু মনি বলেন, “কোচিং সেন্টারের চাহিদা অবশ্যই আছে, কারণ সব শিক্ষার্থী এক পর্যায়ের থাকে না। ক্লাস রুমে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনুযায়ী যার যতটুকু দরকার সেটা দেওয়ার মত জায়গায় আমরা এখনও যেতে পারিনি। কাজেই কিছু ক্ষেত্রে কোচিংয়ের প্রয়োজন আছে। “ক্লাসে বুঝতে পারছে না হয়ত, সে কারণে কোচিংয়ে যাচ্ছে। কেউ আছে, বাড়িতে সহযোগিতা করার মত লোক নেই, তাই কোচিংয়ের প্রয়োজন হচ্ছে। তাছাড়া জিপিএ-৫ এর জন্য অনেকে উন্মাদ হয়ে কোচিংয়ে দিচ্ছে, এর জন্যও প্রবণতা বাড়ছে।” চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হওয়ায় দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের ছয়টি বিষয়ের প্রশ্নপত্র বাতিল করতে হয়েছে। এর দেড় মাস পর শুরু হতে যাওয়া উচ্চমাধ্যমিকপরীক্ষার প্রশ্নের নিরাপত্তায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সে কথা তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আশা করি সারা দেশে সব কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে প্রশ্নফাঁসের গুজবমুক্ত, নকলমুক্ত পরীক্ষাগ্রহণ সম্পন্ন হবে। “প্রশ্নফাঁস ঠেকানোর সব চেষ্টা সরকার করছে। প্রশ্ন ফাঁসে কেউ যদি কোথাও চেষ্টা করে, আমরা সবাই মিলে প্রতিরোধ করব। এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে অভিবাবকদের ভিড় না করার আহ্বান জানিয়ে দীপু মনি বলেন, “আমি আজকে যা দেখলাম, যে অভিবাক সন্তান নিয়ে আগে এসেছেন, তিনি সন্তানকে কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়ে গেইটের সামনেই দাঁড়িয়ে আছেন; এতে করে অন্য অভিবাবকরা সন্তানকে নিয়ে আসতে পারছেন না। “সকল অভিবাবকদের প্রতি বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, আপনারা সন্তানকে পৌঁছে দিয়ে কেন্দ্র ত্যাগ করবেন।”