নিজস্ব প্রতিবেদক :
নরসিংদী রেলস্টেশনে আধুনিক পোশাকের অজুহাতে এক তরুণীকে হেনস্তা করার ঘটনায় করা মামলায় মূল হোতা শিলা আক্তার মারজিয়ার জামিনের বিষয়ে আবেদন করা হয়েছে হাইকোর্টে। এ বিষয়ে শুনানিও অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর এ বিষয়ে আদেশ দেওয়ার জন্য মঙ্গলবার দিন ঠিক করেছেন হাইকোর্ট। আজ রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. কামাল হোসেন। তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে গত ৩০ মে নরসিংদী রেলস্টেশনে আধুনিক পোশাকের অজুহাতে এক তরুণীকে হেনস্তার ঘটনার মূল হোতা শিলা আক্তারের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ওইদিন নরসিংদী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক দেলোয়ার হোসেন এই আদেশ দেন। এর আগে গত ২৯ মে দিবাগত রাত ৩টার দিকে শিবপুরের ইটাখোলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১১ এর একটি দল। র্যাব-১১ সূত্রে জানা যায়, স্টেশনে তরুণীকে লাঞ্ছিতের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে মূলহোতা শিলা আক্তার মারজিয়া ওরফে শায়লা আত্মগোপনে চলে যান। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শিবপুর উপজেলার ইটাখোলা এলাকায় শিলার খালার বাসায় অভিযান চালানো হয়। সেখানে থেকে রাত ৩টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করে রেলওয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। র্যাব-১১ আরও জানায়, ঘটনার মূলহোতা শিলা আক্তার নামে পরিচিত হলেও তার আসল নাম মারজিয়া। তিনি পেশায় একজন ঘটক। রেলওয়ে পুলিশের এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হারুনুর জামান রুমেল জানিয়েছেন, সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার শিলা আক্তার ওরফে মাজিয়াকে নরসিংদী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক দেলোয়ার হোসেনের আদালতে সোপর্দ করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করেন। পরে আদালতের বিচারক তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর পরে তাকে কারাগারে পাঠান আদালত। এর আগে গত ১৮ মে সকালে নরসিংদী রেলস্টেশনের ১নং প্ল্যাটফর্মে ঢাকাগামী চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন দুই তরুণ ও এক তরুণী। মেয়েটির পরনে ছিল জিনস প্যান্ট ও টপস। তাই দেখে স্টেশনে অবস্থানরত এক নারী প্রথমে ওই তরুণীকে আঘাত করে ও পরে আরও কয়েকজন ব্যক্তি তার ওপর হামলার চেষ্টা চালায়। ভুক্তভোগী ওই তরুণী দৌড়ে স্টেশনমাস্টারের কক্ষে আশ্রয় নিয়ে তাকে বাঁচানোর অনুরোধ করে। পরে স্টেশনমাস্টারের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদের ঢাকাগামী চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনে উঠিয়ে দেওয়া হয়। তরুণীকে হেনস্থা ও মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার দুদিন পর শুক্রবার রাতে নরসিংদী শহরের ইউএমসি জুট মিলের সামনে থেকে ইসমাইল মিয়া নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশ। পরে তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে নরসিংদীর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ সিদ্দিকীর আদালতে সোপর্দ করা হয়। ওই রাতেই নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইমায়েদুল জাহেদী বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ও ৩০ ধারায় ভৈরব রেলওয়ে থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারে এক নারীসহ দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাত আরও এক নারী ও ১০ পুরুষকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিওতে অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের আসামি করা হয়।