• রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:০৬ অপরাহ্ন
সর্বশেষ
দুদক কর্মকর্তাদের নৈতিকতার সাথে দায়িত্ব পালনের আহ্বান রাষ্ট্রপতির বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছে বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামছে ভোক্তা-অধিকার রাজনীতি যার যার, অর্থনীতি সবার: এফবিসিসিআই সভাপতি বান্দরবানে হুমকির মুখে সরকারের হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ বান্দরবান জেলা সদর সহ ৬ টি উপজেেলায় শিশুদেরকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়া হবে বান্দরবানে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা মাদকদ্রব্য ধ্বংস বিচারপতির গাড়িতে তেল কম দেওয়ায় ফিলিং স্টেশনকে জরিমানা বিচারক সোহেল রানার সাজার বিরুদ্ধে আপিলের রায় ১২ ডিসেম্বর শেয়ারবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ ক্রমাগত কমছে

নির্মাণসামগ্রীর অস্বাভাবিক দামে সংকটে দেশের আবাসনখাত

Reporter Name / ৪২ Time View
Update : মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
গত দুই বছরে দেশের আবাসনখাতের ওপর দিয়ে গেছে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের বড় ধাক্কা। ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালত ও শিক্ষা কার্যক্রমের মতো এ খাতেও নেমেছিল স্থবিরতা। দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ ছিল বহু প্রকল্পের নির্মাণকাজ। একটা সময় করোনার প্রভাব সামলে ধীরে ধীরে চাঙা হতে শুরু করে আবাসন শিল্প। গত কয়েক মাসে রড, সিমেন্টসহ নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ফের গভীর সংকটে পড়েছে এ খাত। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের শুরু থেকে বাড়ছিল নির্মাণসামগ্রীর দাম। এ বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে সেই দাম বাড়ার পালে হাওয়া দেয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি। এমনকি সম্প্রতি অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে রড, সিমেন্ট ও টাইলসের মতো নির্মাণসামগ্রীর দাম। এর প্রভাবে কমছে নতুন ভবন বা অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ, হস্তান্তর ও বিক্রি। বাজারে রড প্রকারভেদে টনপ্রতি চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। ফলে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতা ও বিক্রেতারা। এদিকে দেশে কয়েক মাসের মধ্যে ডলারের দাম বেড়ে যায় ২০ শতাংশের বেশি। হঠাৎ করেই ডিজেলের দামও বেড়েছে ৪২ শতাংশ। এই দুই দাম বৃদ্ধির সরাসরি ভুক্তভোগী হয়েছে দেশের নির্মাণ খাত। জ¦ালানি এবং ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে সর্বকালের সর্বোচ্চ অবস্থায় পৌঁছেছে নির্মাণ শিল্পের অন্যতম উপকরণ রড। তার সঙ্গী হয়েছে সিমেন্ট। কারণ রড তৈরির কাঁচামাল স্ক্র্যাপ ও সিমেন্ট উৎপাদনের কাঁচামাল ক্লিংকারের পুরোটাই দেশে আসে আমদানি হয়ে। এর মূল্য পরিশোধ করতে হয় ডলারে। আর পরিবহন করতে হয় জাহাজ ও ট্রাকে। রড-সিমেন্টের ডিলার, মিলমালিক এবং সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন নির্বাহীদের সঙ্গে কথা বলে একমাসের বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতি টন এমএস রড বিক্রি হচ্ছে ৯০ হাজার থেকে ৯২ হাজার ৩শ টাকায়। এর আগে কখনো রডের দাম এত বেশি হয়নি। একমাস আগেও এসব রড ছিল ৮৫-৮৬ হাজার টাকা। আবার ৫০ কেজির প্রতি বস্তা সিমেন্ট বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৫৩০ টাকায়। এর আগে গত মার্চে সিমেন্টের দাম ৫২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। তবে একমাস আগে এসব সিমেন্ট ছিল ৪০০-৪২০ টাকা। দেশে ডিজেলের দাম বাড়ার সরাসরি প্রভাবও পড়েছে এ খাতে। ডিজেলের বাড়তি দামের কারণে ট্রাক ও লাইটার জাহাজের ভাড়া বেড়েছে। দেশের রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাহীরাও বলছেন, ডলারের দাম বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের দাম বাড়ার কারণে দেশে রডের দামে রেকর্ড হয়েছে। এখন কেউ বাধ্য হয়ে উৎপাদন বন্ধ রাখছেন আবার কেউ লস দিয়েও ব্যবসা চালিয়ে নিচ্ছেন। অস্থিতিশীল বাজারের কারণে লৌহ শিল্পের ছোট ছোট কারখানাগুলোও চাপ সামলাতে পারছে না। বড় কয়েকজন বাদে অন্যরা এলসি করতে পারছে না। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার আশায় তারা এলসি করেনি। এখন তারা ক্ষতির শিকার হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিকভাবে যে হারে রডের দাম বাড়ছে, গ্রাহকরা তার ভার নিতে পারছেন না। যে কারণে অনেকে তাদের নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছেন। এদিকে, সিমেন্ট কোম্পানিগুলো বলছে, এখন ডলারের দাম ২২-২৫ শতাংশ বেড়েছে। আগে ৮৪-৮৫ টাকা হিসেবে ডলার পেমেন্ট দিতাম। এখন সেই ডলার ১১০-১১২ টাকা পর্যন্ত গিয়েছিল। তাছাড়া সিমেন্টের কাঁচামালের যে দাম বেড়েছে তার দাম কমেনি। আগে যে ক্লিংকার ৪০-৪২ ডলারে পাওয়া যেত, এখন সেই ক্লিংকারের দাম ৬৫ ডলারের উপরে। এখন জ¦ালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে কারখানা থেকে সিমেন্ট সরবরাহে পরিবহন ব্যয়ও বেড়ে গেছে। প্রতি ব্যাগ সিমেন্টের শুধুমাত্র পরিবহন খরচ বেড়েছে ১০-১৫ টাকা। সব মিলিয়ে বাজারে প্রভাব পড়েছে। এ কারণে একদিকে দাম বেড়েছে, অন্যদিকে চাহিদা কমে গেছে। কারণ রড-সিমেন্টের দাম বাড়ায় মানুষ নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছে। জানা গেছে, সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামালের প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। বর্তমানে দেশে ৩৫টি সিমেন্ট কারখানায় উৎপাদন চালু রয়েছে। এর মধ্যে ৩৪টিতে ক্লিংকার আমদানি করে সিমেন্ট উৎপাদন করে থাকে। একব্যাগ সিমেন্ট তৈরিতে ৫০০ টাকা খরচ হলে ৪০০ টাকায় খরচ হয় কাঁচামালে। এখন ডলারের যে হারে দাম বেড়েছে তাতে শুধু সিমেন্ট নয়, আমদানিনির্ভর সব শিল্পই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি এর প্রভাব গিয়ে পড়ছে আবাসন খাতে। রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল বলেন, নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে আগামীতে ফ্ল্যাটের দাম বৃদ্ধি পাবে যা মধ্যবিত্তের আওতার বাহিরে চলে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। ডলারের দামে স্থিতিশীলতা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশি^ক অর্থনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে না ওঠা পর্যন্ত এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসা কঠিন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category