০১:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫ | ই-পেপার

পদ্মা সেতুর মাধ্যমে অর্থনীতির নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে: প্রাণিসম্পদমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক :
পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে অর্থনীতির নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। আজ শনিবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘পদ্মা সেতু: দক্ষিণাঞ্চলের স্বপ্ন বুনন’ শীর্ষক সেমিনারে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। বরিশাল ডিভিশনাল জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন এ সেমিনারের আয়োজন করেছে। রেজাউল করিম বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সুখের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এ সেতুর মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল হবে। দক্ষিণাঞ্চলে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে, শিল্পের সঙ্গে সঙ্গে টাউনশিপ গড়ে উঠবে। পদ্মা সেতু শুধু সেতু নয়, এটি আমাদের বঞ্চনার পরিসমাপ্তির উপাখ্যান। পদ্মা সেতুর সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপন হচ্ছে এ অঞ্চলে রেল যোগাযোগ না থাকার বিদ্রƒপের পরিসমাপ্তি। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর সফল বাস্তবায়নের কারণে আমাদের জিডিপিতে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ উত্তরণ ঘটবে। আঞ্চলিক জিডিপির ২ দশমিক ৩ শতাংশ উন্নয়ন ঘটবে। যাতায়াত ব্যবস্থার সংকটের কারণে দক্ষিণাঞ্চলে কেউ শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে চাইতো না। এখন দেশের দক্ষিণাঞ্চল ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ে ও ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। এর ফলে ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে আমাদের সরাসরি যোগাযোগ হবে। এসব দেশে রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে। ফরিদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও বৃহত্তর বরিশালে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাপান সফরকালে পদ্মায় একটি সেতুর প্রয়োজনীয়তা তাদের বলেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকা-ের কারণে এটি আর আলোর মুখ দেখেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ বাস্তবায়নের জন্য বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়ার সময় অনেক ঝড় এসেছে। বিশ্বব্যাংক টাকা বরাদ্দ না হওয়া সত্ত্বেও বলেছে এখানে দুর্নীতি হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া ওয়াশিংটন টাইমসে আর্টিকেলে দুর্নীতির অভিযোগ সাপোর্ট করে বলেছেন এটা না করাই উত্তম। কানাডার কোর্ট মামলার জাজমেন্ট দিয়ে বললো মুখরোচক কথা শোনা ছাড়া অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। অথচ সে ভিত্তিতেই পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিজের টাকায় আমরা পদ্মা সেতু করব। পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তা, আত্মবিশ্বাস ও সততার বিজয় গাঁথা। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে নোংরা রাজনীতি, খারাপ চর্চা এখনও চলছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পদ্মা সেতুকে অপ্রয়োজনীয় বলেছেন। তিনি বলেছেন এত টাকা ব্যয়ে এখানে সেতু করার দরকার ছিল না। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি ভিত্তিপ্রস্তর নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এটা অসুস্থ রাজনীতির পরিচয়। সরকারের কাজের গঠনমূলক সমালোচনা হতে পারে। কিন্তু ভালোকে ভালো বলবো না, এভাবে সবকিছুর বিরোধিতার প্রবণতা রাজনীতির জন্য সুখকর নয়। পদ্মা সেতুর সমালোচনার জবাবে মন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর মতো ভূপেন হাজারিকা সেতু দোতলা সেতু নয়। পদ্মা সেতু যতটা প্রশস্ত ভূপেন হাজারিকা সেতু ততটা প্রশস্ত নয়। বিশ্বের অন্যতম খর¯্রােতা ও অস্থিতিশীল নদী পদ্মার বুকে সেতু নির্মাণের প্রকৌশলগত চ্যালেঞ্জ ভূপেন হাজারিকা সেতুর চেয়ে অনেক বেশি ছিল। পদ্মা সেতুর জমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয়িত তিনগুণ অর্থ ভূপেন হাজারিকা সেতুতে ব্যয় করতে হয়নি। বিশ্বের সর্বোচ্চ মানের যন্ত্রপাতি পদ্মা সেতুতে ব্যবহার করা হয়েছে। রেজাউল করিম বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে বিএনপির অবস্থা হয়েছে, ‘যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা’। যারা উন্নয়ন পরিপন্থী, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় তাদের পক্ষে না থেকে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের স্বপ্ন বুননের কারিগর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকতে হবে। বরিশাল ডিভিশনাল জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তারিকুল ইসলাম মাসুমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুব সৈকতের সঞ্চালনায় সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সৈয়দা রুবিনা আক্তার, এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল, বরগুনা পৌরসভার মেয়র কামরুল আহসান মহারাজ ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক নিজাম উদ্দিন। এছাড়া ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু, সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মানিক লাল ঘোষসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সেমিনারে বক্তব্য দেন। সেমিনারে ‘পদ্মা সেতু: যা সেতুর চেয়েও বড়’ শিরোনামে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে ব্যয় কমানোর উদ্যোগ

পদ্মা সেতুর মাধ্যমে অর্থনীতির নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে: প্রাণিসম্পদমন্ত্রী

আপডেট সময়ঃ ০৭:৫৭:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জুন ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে অর্থনীতির নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। আজ শনিবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘পদ্মা সেতু: দক্ষিণাঞ্চলের স্বপ্ন বুনন’ শীর্ষক সেমিনারে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। বরিশাল ডিভিশনাল জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন এ সেমিনারের আয়োজন করেছে। রেজাউল করিম বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সুখের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এ সেতুর মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল হবে। দক্ষিণাঞ্চলে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে, শিল্পের সঙ্গে সঙ্গে টাউনশিপ গড়ে উঠবে। পদ্মা সেতু শুধু সেতু নয়, এটি আমাদের বঞ্চনার পরিসমাপ্তির উপাখ্যান। পদ্মা সেতুর সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপন হচ্ছে এ অঞ্চলে রেল যোগাযোগ না থাকার বিদ্রƒপের পরিসমাপ্তি। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর সফল বাস্তবায়নের কারণে আমাদের জিডিপিতে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ উত্তরণ ঘটবে। আঞ্চলিক জিডিপির ২ দশমিক ৩ শতাংশ উন্নয়ন ঘটবে। যাতায়াত ব্যবস্থার সংকটের কারণে দক্ষিণাঞ্চলে কেউ শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে চাইতো না। এখন দেশের দক্ষিণাঞ্চল ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ে ও ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। এর ফলে ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে আমাদের সরাসরি যোগাযোগ হবে। এসব দেশে রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে। ফরিদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও বৃহত্তর বরিশালে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাপান সফরকালে পদ্মায় একটি সেতুর প্রয়োজনীয়তা তাদের বলেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকা-ের কারণে এটি আর আলোর মুখ দেখেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ বাস্তবায়নের জন্য বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়ার সময় অনেক ঝড় এসেছে। বিশ্বব্যাংক টাকা বরাদ্দ না হওয়া সত্ত্বেও বলেছে এখানে দুর্নীতি হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া ওয়াশিংটন টাইমসে আর্টিকেলে দুর্নীতির অভিযোগ সাপোর্ট করে বলেছেন এটা না করাই উত্তম। কানাডার কোর্ট মামলার জাজমেন্ট দিয়ে বললো মুখরোচক কথা শোনা ছাড়া অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। অথচ সে ভিত্তিতেই পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিজের টাকায় আমরা পদ্মা সেতু করব। পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তা, আত্মবিশ্বাস ও সততার বিজয় গাঁথা। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে নোংরা রাজনীতি, খারাপ চর্চা এখনও চলছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পদ্মা সেতুকে অপ্রয়োজনীয় বলেছেন। তিনি বলেছেন এত টাকা ব্যয়ে এখানে সেতু করার দরকার ছিল না। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি ভিত্তিপ্রস্তর নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এটা অসুস্থ রাজনীতির পরিচয়। সরকারের কাজের গঠনমূলক সমালোচনা হতে পারে। কিন্তু ভালোকে ভালো বলবো না, এভাবে সবকিছুর বিরোধিতার প্রবণতা রাজনীতির জন্য সুখকর নয়। পদ্মা সেতুর সমালোচনার জবাবে মন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর মতো ভূপেন হাজারিকা সেতু দোতলা সেতু নয়। পদ্মা সেতু যতটা প্রশস্ত ভূপেন হাজারিকা সেতু ততটা প্রশস্ত নয়। বিশ্বের অন্যতম খর¯্রােতা ও অস্থিতিশীল নদী পদ্মার বুকে সেতু নির্মাণের প্রকৌশলগত চ্যালেঞ্জ ভূপেন হাজারিকা সেতুর চেয়ে অনেক বেশি ছিল। পদ্মা সেতুর জমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয়িত তিনগুণ অর্থ ভূপেন হাজারিকা সেতুতে ব্যয় করতে হয়নি। বিশ্বের সর্বোচ্চ মানের যন্ত্রপাতি পদ্মা সেতুতে ব্যবহার করা হয়েছে। রেজাউল করিম বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে বিএনপির অবস্থা হয়েছে, ‘যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা’। যারা উন্নয়ন পরিপন্থী, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় তাদের পক্ষে না থেকে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের স্বপ্ন বুননের কারিগর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকতে হবে। বরিশাল ডিভিশনাল জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তারিকুল ইসলাম মাসুমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুব সৈকতের সঞ্চালনায় সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সৈয়দা রুবিনা আক্তার, এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল, বরগুনা পৌরসভার মেয়র কামরুল আহসান মহারাজ ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক নিজাম উদ্দিন। এছাড়া ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু, সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মানিক লাল ঘোষসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সেমিনারে বক্তব্য দেন। সেমিনারে ‘পদ্মা সেতু: যা সেতুর চেয়েও বড়’ শিরোনামে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক।