নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় অপহরণের তিন মাস পর আঁখি আক্তার নামের দেড় বছরের এক শিশুকে উদ্ধার করেছে র্যাব-৪। এ ঘটনায় অপহরণকারী রাশেদুল ইসলামকে (৩০) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপহরণের পর শিশুটিকে রাশেদুল তার ফুপু রোকসানার কাছে রেখেছিলেন। রোকসানাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। র্যাব জানায়, রাশেদুলের স্ত্রী পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে তাদের সাত বছরের শিশু সন্তানকে রেখে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যান। এ সময় সাত বছরের শিশুটিকে নিয়ে রাশেদুল বিপদে পড়ে যান। তার স্ত্রী কার সঙ্গে এবং কোথায় আছেন এ বিষয়টি অপহৃত শিশু আঁখি আক্তারের মা মীরা আক্তার জানের বলে রাশেদুলের সন্দেহ হয়। সন্দেহের বশবর্তী হয়ে স্ত্রীর খোঁজ জানতে চান রাশেদুল। তবে মীরা আক্তার কোনো তথ্য না দেওয়ায় তার দেড় বছর বয়সী শিশুকন্যা আঁখি আক্তারকে অপহরণ করেন রাশেদুল। আজ মঙ্গলবার দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, র্যাব-৪ এর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, অপহরণকারী রংপুর জেলায় আত্মগোপনে রয়েছেন। এরপর র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল র্যাব-১৩ এর সহযোগিতায় গত সোমবার রাতে রংপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযান চালায়। অভিযানে অপহরণকারী রাশেদুল ইসলামকে (৩০) গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে অপহরণকারীর দেওয়া তথ্যমতে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানার রতনপুর এলাকার একটি বাসা থেকে রোকসানার (৩৫) হেফাজত থেকে দেড় বছরের অপহৃত শিশু আঁখিকে উদ্ধার করা হয়। অপহরণের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে র্যাব-৪ এর অধিনায়ক বলেন, গত ৩১ মার্চ সকাল ১০টার দিকে সাভারের আশুলিয়া থানাধীন শিমুলিয়ার টেঙ্গুরী এলাকা থেকে দেড় বছরের শিশু আঁখিকে অপহরণ করা হয়। শিশুটি টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী থানার পাইক্কা গ্রামের সাদ্দাম হোসেনের মেয়ে। সাদ্দাম হোসেন পেশায় রাজমিস্ত্রি ও তার স্ত্রী মিরা আক্তার পোশাকশ্রমিক। তারা আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের টেঙ্গুরী এলাকায় আলী হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। অপহরণকারী যুবক রাশেদুল ঘটনার কয়েকদিন আগে আলী হোসেনের বাড়িতে বাসা ভাড়া নিতে আসেন। তখন বাড়ির ম্যানেজার না থাকায় তিনি কথাবার্তা বলে চলে যান। অপহরণকারী পুনরায় ঘটনার দিন বাসা ভাড়া নিতে আসেন। সেসময় গেটের বাইরে খোলা জায়গায় মীরা ও সাদ্দাম দম্পতির সন্তান আঁখি এবং তার ভাই মিরাজ খেলাধুলা করছিল। অপহরণকারী কথাবার্তার একপর্যায়ে ভুক্তভোগী আঁখির ভাই মিরাজকে ১০ টাকা দিয়ে কৌশলে দোকানে চকোলেট কেনার জন্য পাঠান। সেই সুযোগে রাশেদুল দোকানের আড়ালে থাকা আঁখিকে কোলে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান। ঘটনার পরদিন (১ এপ্রিল) শিশুটির দাদা বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় শিশু অপহরণ মামলা দায়ের করেন। পরে অপহৃত শিশুটিকে উদ্ধার ও অপহরণকারীকে গ্রেপ্তারে পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব-৪। ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রাশেদুল ইসলাম গত দুই বছর ধরে আশুলিয়া থানাধীন জিরানী বাজার কলেজ রোড এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রী এবং বিবাহিত। অপহরণকারী রাশেদুলের স্ত্রী নুরজাহান ও অপহৃত শিশুটির মা মীরা আক্তার আশুলিয়ায় একই পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। যার সুবাদে দুজনের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। একপর্যায়ে রাশেদুলের স্ত্রী পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে তাদের সাত বছরের শিশু সন্তানকে রেখে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যান। সাত বছরের শিশুটিকে নিয়ে রাশেদুল বিপদে পড়ে যান। রাশেদুলের স্ত্রী কার সঙ্গে এবং কোথায় আছেন এ বিষয়টি আঁখি আক্তারের মা মীরা আক্তার জানেন বলে তার সন্দেহ হয়। সন্দেহের বশবর্তী হয়ে বেশকবার ভিকটিমের মা মীরা আক্তারের কাছে স্ত্রীর বর্তমান ঠিকানা জানার জন্য যান রাশেদুল। প্রতিবারই মীরা আক্তার জানান, রাশেদুলের স্ত্রীর বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। এ অবস্থায় রাশেদুল তার স্ত্রীর সঠিক অবস্থান জানার উদ্দেশ্যে সাদ্দাম ও মীরা দম্পতির দেড় বছরের শিশুকন্যা আঁখিকে অপহরণ করার পরিকল্পনা করেন। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক সাদ্দাম ও মীরা কাজে চলে যাওয়ার পরে কৌশলে শিশু আঁখিকে অপহরণ করেন রাশেদুল। ঘটনার এক সপ্তাহ পরে অপহরণকারী রাশেদুল ভিকটিম শিশুটির পিতা-মাতাকে ফোন করে জানান, শিশুটি তার হেফাজতে আছে এবং তার স্ত্রীর সঠিক ঠিকানা জানালে শিশুটিকে ফেরত দেওয়া হবে। প্রকৃতপক্ষে অপহৃত শিশুটির পিতা-মাতা অপহরণকারীর স্ত্রীর ঠিকানা জানতেন না, কাজেই সঠিক ঠিকানা দিতে পারেননি। রাশেদুল একপর্যায়ে লোভের বশবর্তী হয়ে আঁখির বাবা-মার কাছে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপন দাবি করেন। সেই মোতাবেক রাশেদুলের বিকাশ নম্বরে ২০ হাজার টাকা পাঠানো হয়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার অবস্থান জেনে যাবে এই ভয়ে রাশেদুল মুক্তিপনের টাকা উত্তোলন না করে মোবাইল বন্ধ করে দেন। গ্রেপ্তারের আগে পর্যন্ত তিনি কোনো মোবাইলফোন ব্যবহার করেননি। র্যাব-৪ এর অধিনায়ক আরও বলেন, গ্রেপ্তার রাশেদুলের বক্তব্য অনুযায়ী ঘটনার দিনই অপহৃত শিশু আঁখিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার রতনপুর এলাকায় তার ফুপু রোকসানার কাছে রেখে আসেন। রাশেদুল আঁখিকে নিজের মেয়ে পরিচয় দিয়ে ফুপুর কাছে কিছুদিন রাখতে অনুরোধ করেন এবং নিজে গ্রামের বাড়ি রংপুরে গিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। রোকসানার নিজের কোনো কন্যাসন্তান না থাকায় তিনি মাতৃস্নেহে শিশু আঁখিকে লালন-পালন করতে থাকেন। পরে রোকসানার হেফাজত থেকেই শিশু আঁখিকে উদ্ধার করে র্যাব।
সর্বশেষঃ
পালিয়ে যাওয়া স্ত্রীর খোঁজ না দেওয়ায় দেড় বছরের শিশুকে অপহরণ
-
দৈনিক আইন বার্তা
- আপডেট সময়ঃ ০৭:৩৫:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ মে ২০২২
- ১৯৩ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ