নিজস্ব প্রতিবেদক :
সাভার চামড়া শিল্পনগরীর সিইটিপি পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। এমন পরিস্থিতিতে সিইটিপির ওপর চাপ কমাতে উৎপাদন ক্ষমতা কমালে নষ্ট হয়ে যাবে অনেক চামড়া। কারণ এখন গরম পড়ছে। ফলে লোকসানের মুখে পড়বে ব্যবসায়ীরা। সব মিলিয়ে সাভারের ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলো গত বছরের মতো এবারও সিইটিপি নিয়ে নানা শঙ্কায় রয়েছে। ট্যানারি খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কোরবানির পশুর চামড়ার জন্য সাভার চামড়া শিল্পনগরীর কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) এবারও পুরোপুরি প্রস্তুত না হলেও সার্বিক ব্যবস্থাপনা আগের চেয়ে কিছুটা ভালো। তবে শিল্পনগরীর সব কারখানা একযোগে উৎপাদন শুরু করলে বর্জ্য পরিশোধনের পুরো চাপ নিতে সিইটিপির সমস্যা হবে। কারণ সিইটিপির ধারণ ক্ষমতা কম। তাছাড়া ক্রোমিয়াম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি এখনো সম্পন্ন হয়নি। কঠিন বর্জ্য ডাম্পিংয়ের জন্য স্থায়ী কোনো সমাধান করা হয়নি। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, কিছুত্র ত্রুটি থাকলেও এবার প্রস্তুতি অনেক বেশি। ইতোমধ্যে সিইটিপি পরিস্কার করা হয়েছে। কঠিন বর্জ্য ডাম্পিংয়ের জন্য পুকুরও খনন করা হয়েছে। ফলে ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিকদের আগের মতো দুশ্চিন্তায় পড়তে হবে না। পাশাপাশি পরিবেশ দূষণের মাত্রাও কমে যাবে।
সূত্র জানায়, বিগত ২০০৩ সালে নদী ও পরিবেশ দূষণ কমাতে রাজধানীর হাজারীবাগের ট্যানারিগুলোকে সাভারের হেমায়েতপুরে আন্তর্জাতিক মানের পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনায় নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু নানা জটিলতা ও সমস্যায় বিসিকের ওই সংক্রান্ত প্রকল্পের কাজ ১৭ বছরে শেষ হয়। তাতে ব্যয় হয় ১ হাজার ১৫ কোটি টাকা। বর্তমানে সেখানে ১৩৯টি ট্যানারি রয়েছে। কর্তৃপক্ষের মতে সাভার চামড়া শিল্পনগরীর সিইটিপির বর্জ্য পরিশোধনের ধারণ ক্ষমতা ২৫ হাজার ঘনমিটার। তবে ট্যানারি মালিকদের মতে তা ১৫ হাজার ঘনমিটারের বেশি নয়। কিন্তু কোরবানির সময় ট্যানারিগুলোর বর্জ্য তৈরি হয় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার ঘনমিটার।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি এমএ আউয়াল জানান, সিইটিপির ধারণক্ষমতা কম। কোরবানির সময় চাপ অনেক বেড়ে যায়। তাছাড়া ক্রোমিয়াম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি এখনো পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত উল্লাহ জানান, আগের কয়েক বছরের তুলনায় সিইটিপির ব্যবস্থাপনা এখন ভালো। তবে পানি ধারণ ক্ষমতায় কিছু সমস্যা আছে। তা এখনো আন্তর্জাতিক মানের হয়ে ওঠেনি।
সার্বিক বিষয়ে সিইটিপি পরিচালনায় গঠন করা ঢাকা ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাক আহমেদ জানান, কোরবানির চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা, বর্জ্য পরিশোধন ও কঠিন বর্জ্য ডাম্পিংয়ের জন্য আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে চামড়া শিল্পনগরী এ মুহূর্তে বেশি প্রস্তুত রয়েছে। তবে সিইটিপির ওপর চাপ কমাতে এবার রেশনিং ব্যবস্থা করা হয়েছে। ট্যানারিগুলো ধাপে ধাপে বর্জ্য পরিশোধন করবে। সিইটিপির লাইনগুলোতে অনেক বর্জ্য জমা হয়ে আটকে ছিল। কিন্তু কয়েক দিন আগে তা পরিস্কার করা হয়েছে। আবার কোনো কোনো ট্যানারি তরল ও কঠিন বর্জ্য দুটোই একই লাইনে ছেড়ে দেয়। তাতে বর্জ্য আটকে যায়। তাই এবার যেন তা না করা হয় সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া কঠিন বর্জ্যগুলো ডাম্পিংয়ের জন্য বড় একটি পুকুর খনন করা হয়েছে। পরে স্থায়ী সমাধান করা হবে।