নিজস্ব প্রতিবেদক :
রংপুরের হারাগাছ থানা পুলিশের ‘অভিযানে’ তাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর বিষয়ে একজন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন ১১ নভেম্বরের মধ্যে দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তদন্ত প্রতিবেদনের উপর আগামী ১৫ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। রংপুরের ওই ঘটনা নজরে আনার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ওই ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছিলেন। সে আদেশের পর আজ বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের বেঞ্চে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে কমিটি গঠনের কথা জানায় পুলিশ। এরপর শুনানি শেষে আদালত এসব আদেশ দেন। আদেশের বিষয়টি জানিয়েছেন ঘটনাটি আদালতের নজরে আনা আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। আজ বুধবার জমা দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৃত্যুর ঘটনায় মরদেহের সুরতহাল রিপোর্টে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। ওই ব্যক্তির কাছে ৫ গ্রাম হেরোইন পাওয়া গিয়েছিল। ঘটনা তদন্তে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত এই প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার বিষয়টি হাইকোর্টের বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চের নজরে আনেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। এরপর ঘটনার বিষয়ে খবরাখবর জেনে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চান আদালত। ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এদিন জানান, ঘটনার পুরো বিষয়ে রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলে খবর নিতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত বলেন, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ঘটনার বিষয় আদালতে উপস্থাপন করে নজরে আনেন। তিনি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত পুলিশের নির্যাতনে তাজুল ইসলামের মৃত্যু নিয়ে একটি প্রতিবেদন পড়ে শোনান। পুলিশি নির্যাতনে তাজুল ইসলামের মৃত্যু নিয়ে তিনি বলেন, এটা এতই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আপনারা দায়ীদের বিরুদ্ধে স্বপ্রণোদিত আদেশ দিতে পারেন। কারণ সংবিধানে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের বেঁচে থাকার অধিকার আছে। তারপরও কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটছে? অমিত দাশগুপ্ত আরও বলেন, আদালতের আদেশ মতে এরইমধ্যে রংপুর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের আদালতের আদেশের কথা জানিয়েছি। এ ঘটনার সার্বিক বিষয় তারা আমাকেও জানিয়েছেন। বিষয়টি আমি আদালতে উপস্থাপন করবো। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে পুলিশের কি বক্তব্য জানতে চাইলে অমিত দাস বলেছেন, এ বিষয়ে আদালতে উপস্থিত হওয়ার আগে কিছু বলছি না। আদালতে বিষয়টি উঠলে সবাই জানতে পারবেন। এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় রংপুরের হারাগাছ এলাকায় পুলিশের অভিযানের পর তাজুল ইসলামের মৃত্যু হয়। তিনি হারাগাছ পৌর এলাকার দালালহাট নয়াটারী গ্রামের বাসিন্দা। ‘পুলিশি নির্যাতনে’ তার মৃত্যু হয়েছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী থানা ঘেরাও করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। স্থানীয়রা জানান, সোমবার সন্ধ্যার পর হারাগাছের নতুন বাজার বছিবানিয়ার তেপথি মোড়ে অভিযানে যায় পুলিশ। এ সময় তাজুল ইসলামকে মাদকসহ আটকের পর মারধর করা হয়। তখন ধাক্কায় দেয়ালে লেগে ঘটনাস্থলেই মারা যান তাজুল। এর প্রতিবাদে থানা ঘেরাও করে এলাকাবাসী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে হারাগাছ থানার ওসি শওকত আলী বলেন, তাজুল হেরোইন সেবন করছিলেন- এমন খবর পেয়ে সেখানে অভিযানে যায় পুলিশ। তাকে আটকের পর হ্যান্ডকাপ পরানো হলে তিনি মলত্যাগ করে ফেলেন। এ ঘটনার পর পুলিশ তাজুলকে স্থানীয়দের জিম্মায় দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এর কিছুক্ষণ পর খবর আসে তাজুল মারা গেছেন।
ঢাকা
১১:৩৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫
সর্বশেষঃ
পুলিশের অভিযানে মৃত্যু: ১১ নভেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ
-
দৈনিক আইন বার্তা
- আপডেট সময়ঃ ০৯:০৬:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ নভেম্বর ২০২১
- ১৯৩ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ