• শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৮:৩৪ পূর্বাহ্ন
  • ই-পেপার
সর্বশেষ
সর্বোচ্চ আদালতকে পাশ কাটিয়ে সরকার কিছুই করবে না: আইনমন্ত্রী নাইজেরিয়ান চক্রের মাধ্যমে চট্টগ্রামে কোকেন পাচার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের অপেক্ষা করতে বললেন ব্যারিস্টার সুমন পদ্মা সেতুর সুরক্ষায় নদী শাসনে ব্যয় বাড়ছে পিএসসির উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীরসহ ৬ জনের রিমান্ড শুনানি পিছিয়েছে শৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা: ডিএমপি কমিশনার রপ্তানিতে বাংলাদেশ ব্যবহার করছে না রেল ট্রানজিট রাজাকারের পক্ষে স্লোগান সরকারবিরোধী নয়, রাষ্ট্রবিরোধী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি বঙ্গোপসাগরের জীববৈচিত্র্য নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র-আলোকচিত্র প্রদর্শনী

পোশাক রপ্তানিতে অগ্রগতি, অথচ বন্ধ হচ্ছে অসংখ্য কারখানা

Reporter Name / ৪৪৮ Time View
Update : বুধবার, ১০ নভেম্বর, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক :
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ক্রমাগত বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসের হিসাব বলছে, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে যে হারে পোশাক রপ্তানি হচ্ছে তাতে ছাড়িয়ে যাচ্ছে অতীতের সব রেকর্ড।
জানা যায়, একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক আমদানি বেড়েছে ২৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের অধীনস্থ অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (ওটিইএক্সএ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৫০০ কোটি ৩২ লাখ ৭৭ হাজার ডলারের পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি গত বছরের একই সময়ে আমদানি করে ৩৯৫ কোটি ৯৩ লাখ ৩০ হাজার ডলারের পোশাক। এ হিসেবেই আমদানি বেড়েছে ২৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। পুর্বের বছরগুলো যদি লক্ষ্য করা যায় তাহলে দেখা যাবে, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে ৫৯২ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছিল। ২০২০ সালে কভিডের প্রভাবে আমদানি কমে যায়। গত বছর মার্কিন বাজারে পোশাক আমদানি হয় ৫২২ কোটি ডলারের। এ হিসেবে ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক আমদানি কমেছিল ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ।
আরও একটি বিষয় লক্ষ্যনীয় যে, গত জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পোশাক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের ক্রয় পূর্বাভাস-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। ‘২০২১ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি বেঞ্চমার্কিং স্টাডি’ শীর্ষক ওই জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি বাণিজ্যের গতি এখনো দুর্বল। পাশাপাশি শিল্পের সামাজিক ও শ্রম কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপনায় এখনো ঝুঁকি দেখছেন তারা। তবে সোর্সিং কষ্ট বা পণ্য ক্রয়বাবদ ব্যয় বিবেচনায় বাংলাদেশ এখনো আকর্ষণীয়। মূলত মূল্য সুবিধায় পণ্য কিনতেই ঝুঁকি সত্ত্বেও বাংলাদেশমুখী রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক পণ্যের ক্রেতারা।
মার্কিন ফ্যাশন কোম্পানিগুলো আগামী দুই বছর বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি পোশাক ক্রয়ে আগ্রহী উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়ার অন্য দেশগুলোর চেয়ে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ উল্লেখযোগ্য মূল্য সুবিধা দিতে পারে। তবে কভিড-পরবর্তী বিশ্বে পোশাক পণ্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য ঘাটতি ভোগাতে পারে বাংলাদেশী সরবরাহকারীদের। জরিপে দেখা গেছে, চলমান কভিডে ক্রেতাদের পণ্য চাহিদায় পরিবর্তন এসেছে। তারা এখন মৌলিক পণ্যের চেয়ে সোয়েটার, স্মক ড্রেস, সোয়েটপ্যান্টের মতো পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। নতুন এসব চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি সফল ভিয়েতনাম। ফলে কভিড-পরবর্তী বিশ্বে মার্কিন ফ্যাশন কোম্পানিগুলোর কাছে বাংলাদেশের ভূমিকা এবং অবস্থান আরো গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশ থেকে পোশাক ক্রয় বৃদ্ধির বিষয়ে যে পূর্বাভাস মার্কিন ক্রেতা প্রতিনিধিরা দিয়েছেন তা অস্বাভাবিক নয়। যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পোশাক আমদানির পরিসংখ্যানে। চলতি অর্থবছর শেষেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবৃদ্ধির হার ২৫ শতাংশও হতে পারে বলে প্রত্যাশা ছিল। মার্কিন পরিসংখ্যানে ছয় মাসেই ২৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি তাই বেশ আশাব্যঞ্জক। কিন্তু দুঃখজনক হলো মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের চাহিদা যখন ক্রমাগত বাড়ছে তখন বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলো একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদনে না থাকা অনেক কারখানার সদস্যপদ বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এতে ১ হাজার ১০০-র বেশি সদস্যপদ বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা। জানা যায়, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বিজিএমইএর বোর্ড সভায় কয়েক বছর ধরে উৎপাদন বন্ধ ও সদস্যপদ নবায়ন করছে না, এমন কারখানাকে সংগঠন থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন নেতারা। এরপরই ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সদস্যপদ নবায়ন করতে নোটিশ দেওয়া হয়। যারা সদস্যপদ নবায়ন করবে না, তারা বাদ যাবে।
জানা যায়, বিজিএমইএর বর্তমান সদস্যসংখ্যা প্রায় ৪ হাজার ৭০০। তবে সচল কারখানা প্রায় অর্ধেক। কারণ, নিয়মিতভাবে সরাসরি রপ্তানির জন্য কাঁচামালের আমদানি প্রাপ্যতা বা ইউপি নেয় ১৮০০-২০০০ পোশাক কারখানা। আবার গত এপ্রিলে বিজিএমইএর নেতৃত্ব নির্বাচনে ঢাকার ১ হাজার ৮৫৩ কারখানার মালিক ভোট দেন। আর চট্টগ্রামের ভোটার ছিলেন ৪৬১ জন। তার মানে সংগঠনটির সদস্যদের বড় অংশই ব্যবসায় নেই।
সূত্র জানায়, একসময় পোশাক রপ্তানিতে কোটা-সুবিধা ছিল। সেই সুবিধা নিতে অনেক কাগুজে কোম্পানিও হয়। সেগুলো বিজিএমইএর সদস্যপদও নিয়েছিল। কোটা-সুবিধা উঠে যাওয়ার পর সেসব কাগুজে কারখানা বিজিএমইএর নির্বাচনে প্রভাব খাটাতে ব্যবহার হয়ে আসছিল। একই উদ্দেশ্যে বন্ধ কারখানার সদস্যপদও বছরের পর বছর টিকিয়ে রাখা হয়। গত নির্বাচনে শতাধিক অস্তিত্বহীন কারখানার মালিক ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ভোটার হয়েছেন।
সূত্র আরও জানায়, ২০০২ থেকে এখন পর্যন্ত বিজিএমইএর সদস্যপদ হারায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের ১ হাজার ৬৫৪ প্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে সর্বশেষ ২০১৪ সালে বিভিন্ন অভিযোগে ৪৪৫ কারখানার সদস্যপদ বাতিল করা হয়। সংগঠনের বার্ষিক চাঁদা পরিশোধ না করা, বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ধার্য করা চাঁদা না দেওয়া ও বিভিন্ন সময়ে কমপ্লায়েন্সের শর্ত পালনে ব্যর্থ হওয়াসহ নানা কারণে কারখানাগুলো সদস্যপদ হারায়।
উল্লেখ্য, পোশাক শিল্প তৈরি পোশাক বা আরএমজি (জবধফুসধফব এধৎসবহঃং) নামে সমধিক পরিচিত। সুবিন্যস্ত কারখানায় বৃহদায়তনে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পোশাক উৎপাদনের ঘটনা বাংলাদেশে অপেক্ষাকৃত নতুন। ষাটের দশকের শুরু পর্যন্ত ব্যক্তি উদ্যোগে ক্রেতাদের সরবরাহকৃত এবং তাদেরই নির্দেশিত নকশা অনুযায়ী স্থানীয় দর্জিরা পোশাক তৈরি করতো। শুধুমাত্র শিশুদের জামাকাপড় এবং পুরুষদের পরিধানযোগ্য গেঞ্জি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে ষাটের দশক পর্যন্ত তৈরি পোশাক শিল্পের অভ্যন্তরীণ বাজার ছিল না বললেই চলে। সত্তরের দশকের শেষার্ধ থেকে মূলত একটি রপ্তানিমুখী খাত হিসেবে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের উন্নয়ন ঘটতে থাকে। তৈরি পোশাক শিল্পের অভ্যন্তরীণ বাজারও দ্রুত সম্প্রসারিত হয় এবং এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের আয় বৃদ্ধি পায় ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসে। খাতটি কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং তা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।
বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকের (কেবলমাত্র ওভেন শার্ট) প্রথম চালানটি রপ্তানি হয় ১৯৭৮ সালে। এরপরেই বিদেশি ক্রেতাদের আগ্রহ বেড়ে যায় এবং এই শিল্প দ্রুত বেড়ে ওঠে। ১৯৮১-৮২ সালে মোট রপ্তানি আয়ে এই খাতের অবদান ছিল মাত্র ১.১%। ২০১০ সালের মার্চ মাসে তৈরি পোশাক শিল্পের অবদান দাঁড়িয়েছে মোট রপ্তানি আয়ের ৭৬%। সময়ের পরিক্রমায় তৈরি পোশাক আরও সম্প্রসারিত হয়ে ওভেন এবং নিটিং উপখাতে বিভক্ত হয়। ২০০২ সালে পোশাক রপ্তানিতে ওভেন ও নিটিং-এর অবদান ছিল যথাক্রমে ৫২.০৬% এবং ৮.৫৮%। পরবর্তীকালে নিট পোশাক উপখাত ওভেন উপখাতের তুলনায় দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে নিট উপখাত ওভেন উপখাতকে অতিক্রম করে সমগ্র রপ্তানিতে ৪১.৩৮% (৬৪২৯ মিলিয়ন ডলার) অবদান রাখে, বিপরীতে ওভেন পোশাক ৩৮.০২% (৫৯১৮.৫১ মিলিয়ন ডলার) নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে নেমে আসে। ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে নিট ও ওভেন একত্রে আমদানিকৃত কাঁচামালের মূল্যসহ সাড়ে ১২ বিলিয়ন ডলারে উপনীত হয় এবং সাড়ে ২২ লাখ মহিলা শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category