নিজস্ব প্রতিবেদক :
বঙ্গোপসাগর পাড়ের সুন্দরবনসংলগ্ন দুবলার চরের আলোরকোলে গতকাল রোববার থেকে শুরু হচ্ছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব। তবে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে এবারও পুণ্যার্থী ছাড়া অন্যান্যের ওই সময় সুন্দরবনে ভ্রমণ বন্ধ থাকবে, উৎসবকে ঘিরে হচ্ছে না রাসমেলাও। রোববার থেকে মঙ্গলবার তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী এ ‘রাস পূর্ণিমা পূজা ও পুণ্যস্নান’ অনুষ্ঠিত হবে শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় দুবলার চরের মন্দিরে সন্ধ্যাপূজার মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যবাহী এ রাস উৎসব শুরু করবেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। জানা গেছে, রাস উৎসব শ্রীকৃষ্ণের ব্রজলীলার অনুকরণে বৈষ্ণবীয়ভাব ধারায় অনুষ্ঠিত ধর্মীয় উৎসব। শ্রীকৃষ্ণের রসপূর্ণ অর্থাৎ তাত্ত্বিক রসসমৃদ্ধ কথা বস্তুকে রাসযাত্রার মাধ্যমে জীবাত্মার থেকে পরমাত্মায় রূপান্তরিত করতে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এ উৎসব পালন করে থাকে। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বঙ্গোপসাগরের চর আলোরকোল এলাকায় বসে পূর্ণিমার জোয়ারে স্নান করে, যাতে তাদের সব পাপ মোচন হয়ে যায়। যদিও ‘রাসলীলা’ নিয়ে বেশকিছু মত প্রচলিত আছে। এর মধ্যে বহুল জনপ্রিয় দুটি মতেই কেনো এ রাসলীলা এ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে। কথিত আছে কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের পর শ্রীকৃষ্ণ পাপমোচন ও পূর্ণলাভে গঙ্গাস্নানের স্বপ্নাদেশ পান। এ থেকেই শুরু হয় ‘রাস উৎসব’। আবার অন্য মতাবলম্বীদের মতে, দুর্গাপূজার পর পূর্ণিমাতে বৃন্দাবনবাসী গোপীদের সঙ্গে লীলায় মেতেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। সেই থেকেই কার্তিক মাসের পূর্ণিমাতে রাসলীলা পালিত হয়ে আসছে। হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়াও বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের হাজার হাজার মানুষ এ উৎসবে হাজির হয়। কিন্তু ২০১৯ সালে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে সুন্দরবনে রাস উৎসব হয়নি। করোনার কারণে ২০২০ সাল থেকে রাস উৎসবে বন্ধ রাখেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এরপর থেকে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত ছিল। রাস উৎসব বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন জানান, করোনা সংক্রমণ এড়াতে এবারও খুবই স্বল্পপরিসরে রাস উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। আশা করছি এ বছর সবার সহযোগিতায় আমরা সুষ্ঠুভাবে এ উৎসব সম্পন্ন করতে পারব। এদিকে পুণ্যস্নানে নিরাপদে যাতায়াতে তীর্থযাত্রীদের জন্য সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বন বিভাগ পাঁচটি পথ নির্ধারণ করেছে। এসব পথে বন বিভাগ, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের টহলদল তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীদের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে। সুন্দরবন বিভাগের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো গত শনিবার এ তথ্য জানান। মিহির কুমার দো জানান, গতকাল রোববার দিনের বেলায় যাত্রা শুরু করতে হবে এবং নৌযানগুলো কেবল দিনের বেলায় চলাচল করতে পারবে। বন বিভাগের চেকিং পয়েন্ট ছাড়া অন্য কোথাও নৌকা, লঞ্চ বা ট্রলার থামানো যাবে না। প্রতিটি ট্রলারের গায়ে রং দিয়ে বিএলসি অথবা সিরিয়াল নম্বর লিখতে হবে। সুন্দরবনের অভ্যন্তরে অবস্থানকালে সবসময় টোকেন ও টিকিট নিজের সঙ্গে রাখতে হবে। রাসপূর্ণিমা পুণ্যস্নানের সময় কোনো বিস্ফোরকদ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার ও বহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারও কাছে আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরকদ্রব্য, হরিণ মারার ফাঁদ, দড়ি, গাছ কাটার কুড়াল, করাত ইত্যাদি অবৈধ কিছু পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে বন আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ট্রলারে কোনো প্লাস্টিকের খাবারের প্লেট বহন করা যাবে না। লঞ্চ, ট্রলার, নৌকায় এবং পুণ্যস্নান এলাকায় মাইক বাজানো, পটকা-বাজি ফোটানোসহ কোনো প্রকার শব্দদূষণ করা যাবে না। রাস পূর্ণিমায় আসা পুণ্যার্থীদের সুন্দরবনে প্রবেশের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছ থেকে প্রাপ্ত নাগরিক সনদপত্রের মূলকপি সঙ্গে রাখতে হবে বলেও জানান এ বন কর্মকর্তা।