নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশে কোন খাদ্য সংকট নেই উল্লেখ করে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, দেশে বর্তমানে খাদ্য পরিস্থিতি সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে খাদ্যবান্ধব সরকারের যথপোযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে বিশেষ করে চালের মুল্য সহনীয় পরিস্থিতিতে রয়েছে।
খাদ্যের এই অবস্থা স্থিতিশীল রাখতে সরকারের বিভিন্ন জনবান্ধব কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি জানান।
খাদ্যমন্ত্রী রোববার সকাল ১০টায় সান্তাহার কেন্ত্রীয় খাদ্য সংরক্ষনাগারে গৃহিত বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম পরিদর্শন উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেছেন। এ সময় খাদ্য মন্ত্রনালয়ের সারা বাংলাদেশে উন্নয়ন ও মেরামত প্রকল্পের পরিচালক মোঃ হুমায়ুন কবির, রাজশাহী বিভাগীয় খাদ্য নিয়ন্ত্রক জি এম ফারুখ পাটোয়ারী, বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মোতাহার হোসেন, নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আলমগীর কবির, আদমদিঘী উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম খান রাজু, নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রাবনী রায়, রাজশাহীর বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল আলীম এবং সান্তাহার কেন্দ্রীয় খাদ্য সংরক্ষনাগারের ম্যানেজার দুলাল উদ্দিন বক্তব্য রাখেন।
খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, দেশের সাধারন মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকারী ভাবে ১০ টাকা কেজি মূল্যে খোলা বাজারে চাল বিক্রি ব্যবস্থা চালু রয়েছে। টি আর এবং কাবিখা কর্মসূচি যথযথ ভাবে চলমান রয়েছে। সারাদেশে খাদ্য সংরক্ষনের জন্য গুদামগুলোতে ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি মকরে সেগুলোতে মানসম্মত খাদ্য মজুদ বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, খাদ্য গুদামগুলোতে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের জীবনমান উন্নত করতে আধুনিক মানের আবাসন ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মান করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় কেন্দ্রীয় খাদ্য সংরক্ষনাগারগুলোতে গেস্ট হাউজ এবং কনফারেন্সরুম নির্মানের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য সান্তাহার কেন্দ্রীয় খাদ্য সংরক্ষনাগারে ১ কোটি ৩৩ লক্ষ ৫ হাজার ৪শ ৭৬ টাকা ব্যয়ে দ্বিতল ভবন বিশিষ্ট আনসার ব্যারাক, ৭ কোটি ৫৫ লক্ষ ৫৮ হাজার ১শ ১০ টাকা ব্যয়ে আভ্যন্তরীন্ আর সি সি রাস্তা নির্মান এবং ৯৬ লাখ ৭৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ম্যানেজারের দ্বিতল অফিস ভবন নির্মান কাজ চলমান রয়েছে। মন্ত্রী এসব প্রকল্প সরেজমিন পরিদর্শন করেন।
এদিকে খাদ্যমন্ত্রীর সান্তাহার কেন্দ্রীয় খাদ্য সংরক্ষনাগারে পরিদর্শনের একদিন আগে শুক্রবার বিকেল ৫টায় নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ে ৪৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী সফল করার লক্ষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ লেবার পার্টি আয়োজিত কর্মী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা মন্তব্য করে বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা: মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেছেন, চাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবন দুবির্ষহ হয়ে উঠছে। ১০ টাকা চাল খাওয়ানোর মিথ্যা শ্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় এসে ১২ বছরেও জনদুর্ভোগ নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
তিনি আরো বলেন, সরকারদলীয় কালোবাজারী সিন্ডিকেট চক্র সিন্ডিকেট করে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়ে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলেছে। আর এই সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত সরকারদলীয় লোকজন। ফলে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না। দেশজুড়ে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছে। অবিলম্বে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে হবে। অন্যথায় সাধারণ মানুষ জীবনের তাগিদে রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে। তিনি আগামী ২২ অক্টোবর শুক্রবার লেবার পার্টির ৪৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী সফল করার আহ্বান জানান।
ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন লেবার পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম আমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রহমান খোকন, মহিলা সম্পাদিকা নাসিমা নাজনিন সরকার, কেন্দ্রীয় সদস্য খোরশেদ আলম, মনির হোসেন, ছাত্রমিশন সভাপতি সৈয়দ মো: মিলন, সাধারণ সম্পাদক মো: শরিফুল ইসলাম, যুবমিশন সদস্য সচিব মো: শওকত চৌধুরী, ছাত্রমিশন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির হোসেন, প্রচার সম্পাদক হাফিজুর রহমান রিফাত প্রমুখ।
খাদ্যমন্ত্রী এদিকে যখন সান্তাহারে সান্ত¡নার বানী শোনাচ্ছেন তখন ওদিকে রংপুরে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের বাজারে লেগেছে আগুন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে রংপুরে পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। রোববার সকালে দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হয় ৬৫ টাকায়। সাত দিন আগেও এই পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০ টাকা। একই সঙ্গে কাঁচা মরিচ কেজিপ্রতি ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। এক সপ্তাহ আগে এর দাম ছিল ১০০ টাকা।
নিত্যপ্রয়োজনীয় এই দুই পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতারা। একই সঙ্গে ব্রয়লার ও পাকিস্তানি মুরগির দাম প্রতিদিনই একটু একটু করে বেড়ে চলেছে। ব্রয়লার মুরগির দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ টাকা বেড়ে হয়েছে প্রতি কেজি ১৭০ টাকা। পাকিস্তানি মুরগি ৩০ টাকা বেড়ে ২৮০, সোনালিকা ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকা কেজিতে।
রংপুর নগরে সবচেয়ে বড় সিটি বাজারে শীতের আগাম সবজি উঠতে শুরু করেছে। এসব পণ্যের দাম অপরিবর্তিত আছে। তবে যে দামে বিক্রি হচ্ছে, তা অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। প্রতি কেজি শিমের দাম ১৪০, বাঁধাকপি ৬০ ও মুলার দাম ৫০ টাকা। বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে সবজির সরবরাহ এখনো কম। কিন্তু ক্রেতাদের চাহিদা বেশি।
রোববার সকালে সিটি বাজারে কেনাকাটা করতে আসা শহরের স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, এক সপ্তাহ আগে দেশি পেঁয়াজ ৩৫ টাকায় কিনেছিলেন। আজ বাজারে গিয়ে পেঁয়াজে হাতই দেওয়া যায় না এমন অবস্থা। কাঁচা মরিচেরও ঝাঁজ বেড়েছে।
সিটি বাজারের পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘দেশি পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ গ্রামে চাষাবাদ কম হয়েছে। আর যেটুকু হয়েছে, সেখান থেকে একশ্রেণির ব্যবসায়ীরা কিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠাচ্ছেন। সেই সঙ্গে ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানিও কমে গেছে।’
উল্লেখ্য, খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ আয়োজিত এক সেমিনারে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, এখন একটি অস্বাভাবিক সময় আমরা অতিক্রম করছি। মানুষের আয় কমে গেছে, পাশাপাশি খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি দরিদ্র মানুষকে বিপদগ্রস্ত করেছে। আমরা টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে খাদ্য সামগ্রী বিক্রির একটি উদ্যোগ নিয়েছি। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারেও তেল, চিনি, পেঁয়াজসহ দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে চলেছে, তার একটা প্রভাব দেশের বাজারেও পড়ছে। দাম কমানোর জন্য খাদ্য, কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যার যার জায়গা থেকে কাজ করছে। আমরা মনিটরিং করছি। কিন্তু, পর্যাপ্ত লোকবল আমাদের নেই। মাত্র ২৮টি টিম কাজটি করছে।